কোরান সূরা ইউসুফ আয়াত 62 তাফসীর
﴿وَقَالَ لِفِتْيَانِهِ اجْعَلُوا بِضَاعَتَهُمْ فِي رِحَالِهِمْ لَعَلَّهُمْ يَعْرِفُونَهَا إِذَا انقَلَبُوا إِلَىٰ أَهْلِهِمْ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ﴾
[ يوسف: 62]
এবং সে ভৃত্যদেরকে বললঃ তাদের পণ্যমূল্য তাদের রসদ-পত্রের মধ্যে রেখে দাও-সম্ভবতঃ তারা গৃহে পৌঁছে তা বুঝতে পারবে, সম্ভবতঃ তারা পুনর্বার আসবে। [সূরা ইউসুফ: 62]
Surah Yusuf in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Yusuf ayat 62
আর তিনি তাঁর জোয়ানদের বললেন -- ''তাদের দ্রব্যমূল্য তাদের মালপত্রের ভিতরে রেখে দাও যেন তাদের পরিবারবর্গের কাছে যখন তারা ফিরে যাবে তখন তারা এটা চিনতে পারে, তাহলে তারা ফিরে আসবে।’’
Tafsir Mokhtasar Bangla
৬২. তখন ইউসুফ ( আলাইহিস-সালাম ) তাঁর কর্মচারীদেরকে বললেন: তোমরা এদের পণ্যমূল্য ফিরিয়ে দাও যাতে তারা ফিরে গিয়ে এ কথা বুঝে যে, আমরা তাদের সাথে কোন বেচা-কেনা করিনি। ফলে এটি দ্বিতীয়বার তাদের ভাইকে নিয়ে আসতে তাদেরকে বাধ্য করবে। যাতে তারা ইউসুফ ( আলাইহিস-সালাম ) এর নিকট তাদের সত্যতা প্রমাণ করতে পারে এবং তিনিও তাদের পণ্যমূল্য গ্রহণ করতে পারেন।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
ইউসুফ তার ( কর্মচারী ) যুবকদেরকে[১] বলল, ‘তাদের দেওয়া পণ্যমূল্য তাদের মালপত্রের মধ্যে রেখে দাও;[২] যাতে ওরা স্বজনগণের নিকট ফিরে যাওয়ার পর তারা তা চিনতে পারে, তাহলে সম্ভবতঃ তারা পুনরায় ফিরে আসবে।’ [১] فِتْيَانٌ ( যুবকগণ ) শব্দ থেকে এখানে তাদেরকে বোঝানো হয়েছে, যারা রাজদরবারে ভৃত্য-চাকর এবং খাদেম-সেবক ও গোলাম-দাস হিসেবে নিযুক্ত ছিল। [২] এর অর্থ সেই পণ্যমূল্য বা পুঁজি যা ইউসুফ ( আঃ )-এর ভায়েরা শস্য ক্রয় করার জন্য সঙ্গে নিয়ে এসেছিল। رِحَالٌ ( সফর সামান বা মালপত্র )-এর অর্থ তাদের ঐসব সরঞ্জাম যা তাদের সফরের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল। 'পুঁজি' গুপ্তভাবে তাদের সরঞ্জামে রেখে দেয়ার আদেশ এ জন্য দিয়েছিলেন যে, হয়তো দ্বিতীয়বার আসার জন্য তাদের কাছে পুঁজি না থাকলে এই পুঁজি নিয়েই চলে আসবে।
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
ইউসুফ তাঁর কর্মচারীদেরকে বললেন, ‘তারা যে পণ্যমূল্য দিয়েছে তা তাদের মালপত্রের মধ্যে রেখে দাও, যাতে স্বজনদের কাছে ফিরে যাওয়ার পর তারা তা চিনতে পারে, যাতে তারা আবার ফিরে আসে [ ১ ]।’ [ ১ ] এর কারণ কারও কারও মতে, ইউসুফ ‘আলাইহিস্ সালাম ভয় পাচ্ছিলেন যে, তাদের সম্ভবত: পুনরায় ক্রয় করার মত অর্থ-কড়ি থাকবে না। ফলে তারা আর আসবে না। কারও কারও মতে, তিনি ভাইদের কাছ থেকে টাকা নিতে অস্বস্তি বোধ করছিলেন। কারও কারও মতে, তিনি জানতেন যে, তারা যখন দেখবে যে এ টাকা তাদেরই, যা তারা পণ্যের বিনিময়ে দিয়েছিল, তখন সেটা ফেরৎ দেয়ার জন্য হলেও মিসর আসবে। [ ইবন কাসীর ]
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
৫৮-৬২ নং আয়াতের তাফসীর সুদ্দী ( রঃ ), মুহাম্মদ ইবনু ইসহাক ( রঃ ) প্রভৃতি মুফাসসিরগণ হযরত ইউসুফের ( আঃ ) ভাইদের মিসরে গমনের কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন যে হযরত ইউসুফ ( আঃ ) মিসরের উযীর নিযুক্ত হওয়ার পর সাত বছর পর্যন্ত খাদ্য শস্য প্রচুর পরিমাণে জমা করেন। এরপরে যখন সাধারণভাবে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়ে যায় এবং জনগণ এক একটি দানার জন্যে ব্যাকুল হয়ে ফিরতে থাকে তখন তিনি অভাবীদেরকে দান করতে শুরু করেন। এই দুর্ভিক্ষ মিসরের এলাকায় ছাড়াও কিনআ’ন ইত্যাদি শহরেও ছড়িয়ে পড়েছিল। হযরত ইউসুফ ( আঃ ) বিদেশী লোকদেরকে উট বোঝাই করে খাদ্য দান করতেন। স্বয়ং তিনি ও বাদশাহ দিনে শুধুমাত্র একবার দুপুরের সময় দু’ এক গ্রাস খাবার খেতেন এবং মিসরবাসীকে পেট পুরে খাওয়াতেন। সুতরাং ঐ যুগে মিসরবাসীদের উপর এটা একটা আল্লাহর রহমত ছিল। কোন কোন মুফাসসির হতে এটাও বর্ণিত আছে যে, হযরত ইউসুফ ( আঃ ) প্রথম বছর মালের বিনিময়ে খাদ্য বিক্রি করেন, দ্বিতীয় বছর বিক্রি করেন আসবাবপত্রের বিমিনমিয়ে। এভাবে তিনি তৃতীয় ও চতুর্থ বছরেও খাদ্য বিক্রি করেন। তারপরে বিক্রি করেন স্বয়ং মানুষের জীবন এবং তাদের সন্তানদের বিনিময়ে। সুতরাং তিনি মানুষের জীবন, তাদের সন্তান এবং তাদের অধিকারভুক্ত সমস্ত ধন মালের মালিক হয়ে যান। কিন্তু এরপর তিনি সকলকেই আযাদ করে দেন এবং তাদের মালধনও তাদেরকে ফিরিয়ে দেন। এটা হচ্ছে বণী ইসরাঈলের রিওয়াইত বা বর্ণনা। সুতরাং এটাকে আমরা সত্য মিথ্যা কিছুই বলতে পারি না।এখানে এই বর্ণনা দেয়া হচ্ছে যে, মিসরে আগমনকারীদের মধ্যে হযরত ইউসুফের ( আঃ ) ভাইয়েরাও ছিলেন। তাঁরা তাঁদের পিতার নির্দেশক্রমে মিসরে আগমন করেছিলেন। তাঁদের পিতা অবগত হয়েছিলেন যে, মিসরের আযীয মালের বিনিময়ে খাদ্য প্রদান করে থাকেন। তাই তিনি তাঁর দশজন ছেলেকে সেখানে পাঠিয়েছিলেন এবং হযরত ইউসুফের ( আঃ ) সহোদর ভাই বিনইয়ামীনকে নিজের কাছে রেখেছিলেন। যাকে তিনি হযরত ইউসুফের ( আঃ ) পরে খুবই ভালবাসতেন। যখন এই যাত্রীদল হযরত ইউসুফের ( আঃ ) নিকট পৌঁছেন তখন তিনি এক নজর দেখেই তাঁদেরকে চিনে নেন। কিন্তু তাঁদের কেউই তাকে চিনতে পারেন নাই। কেননা, বাল্যাবস্থাতেই তিনি তাঁদের থেকে পৃথক হয়ে গিয়েছিলেন। ভ্রাতাগণ তাঁকে সওদাগরদের নিকট বিক্রি করে দিয়েছিলেন। তারপরে কি হলো তা তারা কি করে জানবেন? এটা তো ছিল কল্পনাতীত কথা যে, যাঁকে তাঁরা গোলাম হিসেবে বিক্রি করে দিয়েছেন তিনি আজ মিসরের আযীয হয়ে বসেছেন। এদিকে হযরত ইউসুফ ( আঃ ) এমনভাবে তাদের সাথে কথাবার্তা বলেন যে, তিনিই যে ইউসুফ ( আঃ ) এ ধারণাও তাঁদের অন্তরে স্থান পায় নাই। তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেনঃ “ আপনারা কিভাবে আমাদের দেশে আসলেন?” তাঁরা উত্তরে বললো: “আপনি খাদ্য দান করে থাকেন এ খবর শুনেই আমরা আপনার রাজ্যে এসেছি ।” তিনি বলেনঃ “ আমার মনে সন্দেহ হচ্ছে যে, আপনারা হয়তো গুপ্তচর ।” তাঁরা বলেনঃ “ আমরা আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি, আমরা গুপ্তচর নই ।” তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ “ আপনাদের বাসস্থান কোথায়?” তারা জবাবে বলেনঃ “আমরা কিনআ’নের অধিবাসী । আমাদের পিতার নাম ইয়াকুব ( আঃ ), তিনি আল্লাহ তাআ’লার একজন নবী।” তিনি তাঁদেরকে প্রশ্ন করেনঃ “ তোমরা ছাড়া তার আর কোন ছেলে আছে কি? তারা জবাবে বলল “হ্যাঁ, আমরা বারো ভাই ছিলাম । আমাদের মধ্যে যে ছিল সবচেয়ে ছোট এবং পিতার চোখের মণি সে তো ধ্বংস হয়ে গেছে। তারই এক সহোদর ভাই আছে। তাকে পিতা আমাদের সাথে পাঠান নাই। তাকে তিনি নিজের কাছেই রেখে দিয়েছেন। তারই মাধ্যমে তিনি কিছুটা সান্ত্বনা লাভ করে থাকেন।” এরপর হযরত ইউসুফ ( আঃ ) তার ভৃত্যদের নির্দেশ দেন যে, তাদেরকে যেন সরকারী মেহমান মনে করা হয় এবং সম্মানজনক স্থানে তাদেরকে থাকার ব্যবস্থা করা হয় ও উত্তম খাবার খেতে দেয়া হয়। অতঃপর যখন তাঁদেরকে খাদ্য শস্য দেয়া শুরু হলো এবং বস্তা ভর্তি করে দেয়া হলো, আর তাঁদের সাথে যতগুলি বাহন জন্তু ছিল সেগুলি যতগুলি বোঝা বইতে পারে ততগুলিই ওগুলির উপর চাপিয়ে দেয়া হলো তখন হযরত ইউসুফ ( আঃ ) তাঁদেরকে বললেনঃ “ দেখুন! আপনাদের কথার সত্যতার প্রমাণ হিসেবে আপনাদের যে ভাইটিকে এবার সঙ্গে আনেন নাই, পরবর্তী সময়ে তাকে অবশ্যই সাথে নিয়ে আসবেন । দেখুন! আমি আপনাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করেছি এবং আপনাদের সম্মান প্রদর্শনে একটুও ক্রটি করি নাই।” এভাবে তাঁদের উৎসাহ প্রদানের পর আবার ধমকও দেন। তিনি বলেনঃ “ পরের দফে যদি আপনারা আপনাদের ঐ ভাইটিকে সঙ্গে না আনেন তবে খাদ্যের একটি দানাও আপনাদেরকে দেয়া হবে না এমনকি আপনাদেরকে আমার কাছেও আসতে দেবো না ।” তাঁরা প্রতিশ্রুতি দিল এবং বললো, “ আমরা আমাদের পিতাকে বুঝিয়ে সুঝিয়েবলবো এবং যে কোন প্রকারেই হোক না কেন আমরা আমাদের ঐ ভাইটিকে সঙ্গে আনার চেষ্টা করবো । যাতে আমরা বাদশাহর কাছে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত না হই।” সুদ্দী ( রঃ ) বলেন যে, হযরত ইউসুফ ( আঃ ) তাঁর ভাইদের নিকট থেকে কিছু জিনিষ তার কাছে বন্ধক রেখেছিলেন এবং তাদেরকে বলেছিলেনঃ “ আপনারা আপনাদের ঐ ভাইটিকে সঙ্গে করে আমার কাছে আসলেই এটা পেয়ে যাবেন । কিন্তু এটা সত্য বলে মনে হচ্ছে না। কেননা, তিনি তো তাদেরকে পুনরায় তাঁর কাছে ফিরে আসার ব্যাপারে বেশ উৎসাহ প্রদান করেছিলেন এবং অনেক কিছু লোভ দেখিয়ে ছিলেন।যখন ভ্রাতাগণ বিদায়ের প্রস্তুতি গ্রহণ করলেন তখন হযরত ইউসুফ ( আঃ ) তাঁর চতুর ভৃত্যদেরকে নির্দেশ দিলেন যে, খাদ্য দ্রব্য গ্রহণের বিনিময় হিসেবে যে সব আসবাবপত্র তাঁরা আনয়ন করেছে তা যেন তাদেরকে ফিরিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু এমন কৌশলে এটা করতে হবে যে, তাঁরা যেন মোটেই টের না পায়। তাঁদের বস্তার মধ্যে ঐ আসবাবপত্র গুলি অতি সন্তর্পণে ভরে দিতে হবে। সম্ভবতঃ এর একটি কারণ হচ্ছে: তাঁর মনে হলো যে, যে সব আসবাব তাঁরা খাদ্য দ্রব্য গ্রহণের বিনিময় হিসেবে আনয়ন করেছে সেগুলি যদি তিনি নিয়ে নেন তবে তাদের বাড়ীর অবস্থা কি হবে! আবার এটাও হতে পারে যে, তিনি পিতা ও ভাইদের নিকট থেকে খাদ্যের বিনিময় গ্রহণ করা সমীচীন মনে করেননি। তাছাড়া এও হতে পারে যে, তাঁর ধারণায় যখন তারা বাড়ীতে গিয়ে বস্তা খুলবে এবং তাদের আসবাবপত্রগুলি বস্তার মধ্যে পাবে তখন অবশ্যই তার প্রাপ্য জিনিষ তাঁকে ফিরিয়ে দেয়ার জন্যে তার কাছে তারা ফিরে আসবে। এই সুযোগে তিনি তাঁদের সাথে পুনরায় মিলিত হতে পারবেন।
সূরা ইউসুফ আয়াত 62 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- তাদেরকে ফুটন্ত নহর থেকে পান করানো হবে।
- অথচ তারা বিশ্বাসীদের তত্ত্বাবধায়করূপে প্রেরিত হয়নি।
- আর তাদের পছন্দমত ফল-মুল নিয়ে,
- হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা নিশ্চিতরূপে শুনেছি একজন আহবানকারীকে ঈমানের প্রতি আহবান করতে যে, তোমাদের পালনকর্তার
- অতএব, আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর।
- এবং শপথ রাত্রির যখন তা গত হতে থাকে
- আপনি এ কোরআন দ্বারা তাদেরকে ভয়-প্রদর্শন করুন, যারা আশঙ্কা করে স্বীয় পালনকর্তার কাছে এমতাবস্থায় একত্রিত
- আমি কোরআনে এমন বিষয় নাযিল করি যা রোগের সুচিকিৎসা এবং মুমিনের জন্য রহমত। গোনাহগারদের তো
- আর কিছু কিছু তোমার আশ-পাশের মুনাফেক এবং কিছু লোক মদীনাবাসী কঠোর মুনাফেকীতে অনঢ়। তুমি তাদের
- তোমরা যা কর না, তা বলা আল্লাহর কাছে খুবই অসন্তোষজনক।
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা ইউসুফ ডাউনলোড করুন:
সূরা Yusuf mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Yusuf শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers