কোরান সূরা যুখরুফ আয়াত 65 তাফসীর
﴿فَاخْتَلَفَ الْأَحْزَابُ مِن بَيْنِهِمْ ۖ فَوَيْلٌ لِّلَّذِينَ ظَلَمُوا مِنْ عَذَابِ يَوْمٍ أَلِيمٍ﴾
[ الزخرف: 65]
অতঃপর তাদের মধ্যে থেকে বিভিন্ন দল মতভেদ সৃষ্টি করল। সুতরাং যালেমদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক দিবসের আযাবের দুর্ভোগ। [সূরা যুখরুফ: 65]
Surah Az-Zukhruf in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Zukhruf ayat 65
কিন্ত বিভিন্ন দল নিজেদের মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি করল, কাজেই ধিক্ তাদের প্রতি যারা অন্যায়াচরণ করেছিল -- এক মর্মন্তুদ দিনের শাস্তির কারণে!
Tafsir Mokhtasar Bangla
৬৫. ফলে খ্রিস্টানদের দলগুলো ঈসা এর ব্যাপারে মতানৈক্য করলো। তাদের কেউ বললো: তিনি হলেন আল্লাহ। আবার কেউ বললো: তিনি হলেন অল্লাহর পুত্র। আবার কেউ বললো, তিনি এবং তাঁর মাতা দু’জনই দুই আল্লাহ। যারা ঈসাকে আল্লাহ, তাঁর পুত্র কিংবা তৃতীয় ইলাহ বলে দাবি করেছে তারা ধ্বংস হোক সেই কষ্টদায়ক অপেক্ষমাণ শাস্তির মাধ্যমে যদ্বারা তাদেরকে কিয়ামত দিবসে শাস্তি দেয়া হবে।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
অতঃপর ওদের বিভিন্ন দল নিজেদের মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি করল;[১] সুতরাং সীমালংঘনকারীদের জন্য দুর্ভোগ মর্মন্তুদ দিনের শাস্তির। [১] এ থেকে ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানদের বুঝানো হয়েছে। ইয়াহুদীরা তো ঈসা ( আঃ )-এর মর্যাদা ক্ষুন্ন করে তাঁকে --নাউযুবিল্লাহ -- জারজ সন্তান গণ্য করে। আর খ্রিষ্টানরা তাঁর ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করে তাঁকে উপাস্য বানিয়ে নেয়। অথবা এ থেকে খ্রিষ্টানদেরই বিভিন্ন দলকে বুঝানো হয়েছে। এরা আপোসে ঈসা ( আঃ )-এর ব্যাপারে কঠোর পরস্পর-বিরোধী মত পোষণ করে। একদল তাঁকে আল্লাহর পুত্র, অন্যদল তাঁকে আল্লাহ ও তিনের মধ্যে একজন মনে করে এবং আর একদল তাঁকে মুসলিমদের মত আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রসূল গণ্য করে।
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
অতঃপর তাদের মধ্য থেকে কতগুলো দল মতানৈক্য করল, কাজেই যালিমদের জন্য দুর্ভোগ যন্ত্রণাদায়ক দিনের শাস্তির !
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
৫৭-৬৫ নং আয়াতের তাফসীর:
হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ), হযরত মুজাহিদ ( রঃ ), হযরত ইকরামা ( রঃ ) এবং হযরত যহ্হাক ( রঃ ) বলেন যে, ( আরবী )-এর অর্থ হলোঃ “ তারা হাসতে লাগলো ।' অর্থাৎ এতে তারা বিস্ময়বোধ করলো। কাতাদা ( রঃ ) বলেন যে, এর অর্থ হলোঃ “ তারা হতবুদ্ধি হলো এবং হাসতে লাগলো । ইবরাহীম নাখঈ ( রঃ ) বলেন যে, এর অর্থ হলোঃ “ তারা মুখ ফিরিয়ে নিলো ।' ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক ( রঃ ) তাঁর ‘সীরাত গ্রন্থে এর যে কারণ বর্ণনা করেছেন তা এই যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) একদা ওয়ালীদ ইবনে মুগীরা প্রমুখ কুরায়েশদের নিকট আগমন করেন। সেখানে নযর ইবনে হারিসও এসে পড়ে এবং রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর সাথে কথাবার্তা বলতে শুরু করে। সে যুক্তি-তর্কে টিকতে না পেরে লা-জবাব বা নিরুত্তর হয়ে যায়। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) কুরআন কারীমের নিম্নের আয়াতটি পাঠ করে শুনিয়ে দেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ নিশ্চয়ই তোমরা ও তোমাদের মা’বৃদরা জাহান্নামের ইন্ধন হবে ।”( ২১:৯৮ ) তারপর তিনি সেখান হতে চলে আসেন। কিছুক্ষণ পর সেখানে আবদুল্লাহ ইবনে যাবআলী তামীমী আগমন করে। তখন ওয়ালীদ ইবনে মুগীরা তাকে বলেঃ “ নযর ইবনে হারিস তো আবদুল মুত্তালিবের সন্তানের ( পৌত্রের ) নিকট হেরে গেছে । শেষ পর্যন্ত সে তো আমাদেরকে ও আমাদের মা'বূদদেরকে জাহান্নামের ইন্ধন বলে দিয়ে চলে গেল।” সে তখন বললোঃ “ আমি থাকলে সে নিজেই নিরুত্তর হয়ে যেতো । যাও, তোমরা গিয়ে তাকে প্রশ্ন করঃ আমরা এবং আমাদের সমস্ত মা’রূদ যখন জাহান্নামী তখন এটা অপরিহার্য যে, ফেরেশতারা, হযরত উযায়ের ( আঃ ) এবং ঈসা ( আঃ )ও জাহান্নামী হবেন? কেননা, আমরা ফেরেশতাদের উপাসনা করে থাকি, ইয়াহূদীরা হযরত উযায়ের ( আঃ )-এর উপাসনা করে এবং খৃষ্টানরা হযরত ঈসা ( আঃ )-এর ইবাদত করে?” তার একথা শুনে মজলিসের লোকেরা সবাই খুব খুশী হলো এবং বললো যে, এটাই সঠিক কথা। নবী ( সঃ )-এর কানে যখন এ সংবাদ পৌঁছলো তখন তিনি বললেনঃ “ প্রত্যেক ঐ ব্যক্তি, যে গায়রুল্লাহর ইবাদত করে এবং প্রত্যেক ঐ ব্যক্তি যে খুশী মনে নিজেদের ইবাদত করিয়ে নেয়, এরূপ উপাসক ও উপাস্য উভয়েই জাহান্নামী । ফেরেশতারা এবং নবীরা ( আঃ ) না নিজেদের ইবাদত করার জন্যে কাউকেও নির্দেশ দিয়েছেন, না তারা তাতে সন্তুষ্ট। তাদের নামে আসলে এরা শয়তানের উপাসনা করে। সেই তাদেরকে শিরকের হুকুম দিয়ে থাকে। আর তারা তার সেই হুকুম পালন করে।” তখন ....
( আরবী )-এই আয়াত অবতীর্ণ হয়। অর্থাৎ হযরত ঈসা ( আঃ ), হযরত উযায়ের ( আঃ ) এবং এঁদের ছাড়া অন্যান্য যেসব আলেম ও ধর্ম যাজকদের এরা উপাসনা করে, যারা নিজেরা আল্লাহর আনুগত্যের উপর কায়েম ছিলেন এবং শিরকের প্রতি অসন্তুষ্ট ও তা হতে বাধাদানকারী ছিলেন, তাঁদের মৃত্যুর পরে এই পথভ্রষ্ট অজ্ঞ লোকেরা তাদেরকে মা'বুদ বানিয়ে নেয়, তারা সম্পূর্ণরূপে নিরপরাধ ।আর ফেরেশতাদেরকে যে মুশরিকরা আল্লাহর কন্যা বিশ্বাস করে নিয়ে তাদের উপাসনা করতো তা খণ্ডন করতে গিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ তারা বলে যে, দয়াময় ( আল্লাহ ) সন্তান গ্রহণ করেছেন, অথচ তিনি । তা হতে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র, বরং তারা ( ফেরেশতারা ) তো তার সম্মানিত বান্দা।”( ২১:২৬ ) এর দ্বারা তাদের এই বাতিল আকীদাকে খণ্ডন করা হয়। আর হযরত ঈসা ( আঃ )-এর ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “ যখন মরিয়ম ( আঃ )-এর পুত্রের দৃষ্টান্ত উপস্থিত করা হয়, তখন তোমার সম্প্রদায় শশারগোল শুরু করে দেয় । এরপর মহান আল্লাহ হযরত ঈসা ( আঃ )-এর বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেনঃ “ সে তো ছিল আমারই এক বান্দা যাকে আমি অনুগ্রহ করেছিলাম এবং করেছিলাম বানী ইসরাঈলের জন্যে দৃষ্টান্ত । আমি ইচ্ছা করলে তোমাদের মধ্য হতে ফেরেশতা সৃষ্টি করতে পারতাম, যারা পৃথিবীতে উত্তরাধিকারী হতো। ঈসা ( আঃ ) তো কিয়ামতের নিদর্শন।” অর্থাৎ হযরত ঈসা ( আঃ )-এর মাধ্যমে আমি যেসব মু’জিয়া দুনিয়াবাসীকে দেখিয়েছি, যেমন মৃতকে জীবিত করা, কুষ্ঠ রোগীকে আরোগ্য দান করা ইত্যাদি, এগুলো কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার দলীল হিসেবে যথেষ্ট। সুতরাং তোমরা কিয়ামতে সন্দেহ পোষণ করো না এবং আমাকেই অনুসরণ কর। এটাই সরল পথ।হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, মুশরিকরা রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর মুখে তাদের মা’ৰূদদের জাহান্নামী হওয়ার কথা শুনে তাকে জিজ্ঞেস করলোঃ “ ইবনে মরিয়ম ( আঃ ) সম্পর্কে আপনি কি বলেন?” তিনি উত্তরে বলেনঃ “তিনি আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল ।” তারা কোন উত্তর খুঁজে না পেয়ে বললো, “ আল্লাহর শপথ! এ ব্যক্তি তো শুধু এটাই চায় যে, আমরা যেন তাকে প্রভু বানিয়ে নিই যেমন খৃষ্টানরা হযরত ঈসা ইবনে মরিয়ম ( আঃ )-কে প্রভু বানিয়ে নিয়েছিল । তখন আল্লাহ তা'আলা রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে বলেনঃ “ এরা তো শুধু বাক-বিতণ্ডার উদ্দেশ্যেই তোমাকে একথা বলে ।”হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) একদা বলেনঃ “ কুরআন কারীমের মধ্যে এমন একটি আয়াত রয়েছে যার তাফসীর কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করেনি । আমি জানি না যে, সবাই কি এর তাফসীর জানে, না না জেনেও জানার চেষ্টা করে না?” তারপর তিনি মজলিসে অন্য কিছুর বর্ণনা দিতে থাকলেন, অবশেষে মজলিস শেষ হয়ে গেল এবং তিনি উঠে চলে গেলেন। তার সঙ্গীগণ তাঁকে আয়াতটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ না করার জন্যে খুব আফসোস করতে লাগলেন। তখন ইবনে আকীল আনসারী ( রাঃ )-এর মাওলা আবু ইয়াহইয়া ( রঃ ) বললেনঃ “ আচ্ছা, আগামী কাল সকালে তিনি আগমন করলে আমি তাকে আয়াতটির তাফসীর জিজ্ঞেস করবো ।” পরদিন তিনি আগমন করলে হযরত আবু ইয়াহইয়া ( রাঃ ) পূর্ব দিনের কথার পুনরাবৃত্তি করলেন এবং তাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “ ঐ আয়াতটি কি?” উত্তরে তিনি বললেন, শুনো, কুরায়েশদেরকে একদা রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) জিজ্ঞেস করেন:“কেউ এমন নেই, আল্লাহ ছাড়া যার ইবাদত করা যেতে পারে এবং তাতে কল্যাণ থাকতে পারে ।” তখন কুরায়েশরা বললোঃ “ খৃষ্টানরা কি হযরত ঈসা ( আঃ )-এর ইবাদত করে না? আপনি কি হযরত ঈসা ( আঃ )-কে আল্লাহর নবী এবং তার মনোনীত বান্দা মনে করেন না? তাহলে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করার মধ্যে কোন কল্যাণ নেই একথা বলার অর্থ কি হতে পারে?” তখন ...
( আরবী )-এ আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয় । অর্থাৎ “ যখন হযরত ঈসা ইবনে মরিয়ম ( আঃ )-এর বর্ণনা আসলো তখন এ লোকগুলো হাসতে শুরু করলো ।” আর ঈসা ( আঃ ) কিয়ামতের নিদর্শন’ এর ভাবার্থ এই যে, হযরত ঈসা ( আঃ ) কিয়ামতের পূর্বে বের হয়ে আসবেন।” ( এটা ইমাম আহমাদ (রঃ ) বর্ণনা করেছেন এবং এ রিওয়াইয়াতটি পরবর্তী বাক্যটি ছাড়া ইমাম ইবনে আবি হাতিমও ( রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হযরত কাতাদা ( রঃ ) বলেন যে, আমাদের দেবতাগুলো ভাল, না এই ব্যক্তি? তাদের এই উক্তির ভাবার্থ হচ্ছেঃ আমাদের মা'বুদ হযরত মুহাম্মাদ ( সঃ ) হতে উত্তম।হযরত ইবনে মাসউদ ( রাঃ )-এর কিরআতে ( আরবী ) রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেনঃ এরা শুধু বাক-বিতণ্ডার উদ্দেশ্যেই তোমাকে একথা বলে। অর্থাৎ তাদের এটা বিনা দলীল-প্রমাণে ঝগড়া। মিথ্যার উপরই তারা তর্ক-বিতর্ক করছে। তারা নিজেরাও জানে যে, তারা যেটা বলছে ভাবার্থ সেটা নয় এবং তাদের প্রতিবাদ ও আপত্তি নিরর্থক। কেননা, প্রথমতঃ আয়াতে ( আরবী ) শব্দ রয়েছে, যা জ্ঞান-বিবেকহীনের জন্যে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আর দ্বিতীয়তঃ আয়াতে কুরায়েশদেরকে সম্বোধন করা হয়েছে যারা মূর্তি, প্রতিমা, পাথর ইত্যাদির পূজা করতো। তারা হযরত ঈসা ( আঃ )-এর পূজারী ছিল না। সুতরাং নবী ( সঃ )-কে তারা শুধু বাক-বিতণ্ডার উদ্দেশ্যেই এ কথা বলে। অর্থাৎ তারা যে কথা বলে সেটা যে বাকপটুত্ব শূন্য তা তারা নিজেরাও জানে। হযরত আবু উমামা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ কোন কওম হিদায়াতের উপর থাকার পর কখনো পথভ্রষ্ট হয় না যে পর্যন্ত না তাদের মধ্যে দলীল-প্রমাণ ছাড়াই বাক-বিতণ্ডায় লিপ্ত হওয়ার রীতি চলে আসে ।” অতঃপর তিনি ( আরবী )-এ আয়াতটিই তিলাওয়াত করেন।” ( এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ ), ইমাম ইবনে জারীর ( রঃ ), ইমাম তিরমিযী ( রঃ ) এবং ইমাম ইবনে মাজাহ ( রঃ ) বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম তিরমিযী ( রঃ ) এটাকে হাসান সহীহ বলেছেন)মুসনাদে ইবনে আবি হাতিমে এ হাদীসেরই শুরুতে রয়েছেঃ “ নবীর আগমনের পর কোন উম্মত পথভ্রষ্ট হয়নি, কিন্তু তাদের পথভ্রষ্ট হওয়ার প্রথম কারণ হলো তকদীরকে অবিশ্বাস করা । আর নবীর আগমনের পর কোন কওম পথভ্রষ্ট হয়নি, কিন্তু তখনই পথভ্রষ্ট হয়েছে যখন তাদের মধ্যে কোন দলীল-প্রমাণ ছাড়াই বাক-বিতণ্ডায় লিপ্ত হয়ে পড়ার রীতি চালু হয়েছে।”হযরত আবু উমামা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, একদা রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তার সাহাবীদের মধ্যে এমন সময় আগমন করেন যখন তারা কুরআন কারীমের আয়াতগুলো নিয়ে পরস্পর তর্ক-বিতর্ক করছিলেন। এতে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তাঁদের উপর ভীষণ রাগান্বিত হন। অতঃপর তিনি তাদেরকে সম্বোধন করে বলেনঃ “ তোমরা এভাবে আল্লাহর কিতাবের আয়াতগুলোর একটির সাথে অপরটির টক্কর লাগিয়ে দিয়ো না । জেনে রেখো যে, এই পারস্পরিক বাক-বিতণ্ডার অভ্যাসই তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল।” অতঃপর তিনি ( আরবী )-এই আয়াতটিই তিলাওয়াত করেন। ( এ হাদীসটি ইমাম ইবনে জারীর (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ ঈসা ( আঃ ) তো ছিল আমারই এক বান্দা যাকে আমি অনুগ্রহ করেছিলাম এবং তাকে আল্লাহর ক্ষমতার নিদর্শন বানিয়ে বানী ইসরাঈলের নিকট প্রেরণ করেছিলাম। যেন তারা জানতে পারে যে, আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তাই করার তিনি ক্ষমতা রাখেন।এরপর ইরশাদ হচ্ছেঃ আমি ইচ্ছা করলে তোমাদের মধ্য হতে ফেরেশতা সৃষ্টি করতে পারতাম, যারা পৃথিবীতে উত্তরাধিকারী হতো।কিংবা এর অর্থ হচ্ছেঃ যেমনভাবে তোমরা একে অপরের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছ তেমনিভাবে তাদেরকেও করে দিতাম। দুই অবস্থাতেই ভাবার্থ একই।মুজাহিদ ( রঃ ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছেঃ তোমাদের পরিবর্তে তাদের দ্বারা দুনিয়া আবাদ করতাম।মহান আল্লাহ বলেনঃ “ ঈসা ( আঃ ) তো কিয়ামতের নিদর্শন ।' এর ভাবার্থ ইবনে ইসহাক ( রঃ ) যা বর্ণনা করেছেন তা কিছুই নয়। আর এর চেয়েও বেশী দূরের কথা হচ্ছে ওটা যা কাতাদা ( রঃ ), হাসান বসরী ( রঃ ) এবং সাঈদ ইবনে জুবায়ের ( রঃ ) বলেছেন। তা এই যে, ( আরবী ) সর্বনামটি ফিরেছে কুরআনের দিকে। এই দু'টি উক্তিই ভুল। বরং সঠিক কথা এই যে, ( আরবী ) সর্বনামটি ফিরেছে হযরত ঈসা ( আঃ )-এর দিকে অর্থাৎ হযরত ঈসা ( আঃ ) কিয়ামতের একটি নিদর্শন। কেননা, উপর হতে তারই আলোচনা চলে আসছে। আর এটা স্পষ্ট কথা যে, এখানে হযরত ঈসা ( আঃ )-এর কিয়ামতের পূর্বে নাযিল হওয়াকেই বুঝানো হয়েছে। যেমন আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা বলেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ তার মৃত্যুর পূর্বে ( হযরত ঈসা আঃ-এর মৃত্যুর পূর্বে ) প্রত্যেক আহলে কিতাব তার উপর ঈমান আনবে । তারপর কিয়ামতের দিন সে তাদের উপর সাক্ষী হবে।”( ৪:১৫৯ )। এই ভাবার্থ পূর্ণভাবে প্রকাশ পায় এই আয়াতেরই দ্বিতীয় পঠনে, যাতে রয়েছে ( আরবী ) অর্থাৎ “ নিশ্চয়ই সে ( হযরত ঈসা আঃ ) কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার আলামত বা লক্ষণ ।” হযরত মুজাহিদ ( রঃ ) বলেন যে, এটা হলো কিয়ামতের লক্ষণ, অর্থাৎ হযরত ঈসা ইবনে মরিয়ম ( আঃ )-এর কিয়ামতের পূর্বে আগমন। হযরত আবু হুরাইরা ( রাঃ ) এবং হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) হতেও এরূপই বর্ণিত হয়েছে। আবুল আলিয়া ( রঃ ), আৰূ মালিক ( রঃ ), ইকরামা ( রাঃ ), হাসান ( রঃ ), কাতাদা ( রঃ ) যহহাক ( রঃ ) প্রমুখ গুরুজন হতেও অনুরূপই বর্ণিত আছে।মুতাওয়াতির হাদীসে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) খবর দিয়েছেন যে, কিয়ামতের দিনের পূর্বে হযরত ঈসা ( আঃ ) ন্যায়পরায়ণ ইমাম ও ইনসাফকারী হাকিম রূপে অবতীর্ণ হবেন। তাই মহান আল্লাহ বলেনঃ তোমরা কিয়ামতে সন্দেহ পোষণ করো না, বরং এটাকে নিশ্চিত রূপে বিশ্বাস কর এবং আমি তোমাদেরকে যে খবর দিচ্ছি তাতে তোমরা আমার অনুসরণ কর, এটাই সরল পথ। শয়তান যেন তোমাদেরকে কিছুতেই আমার এই সরল সঠিক পথ হতে নিবৃত্ত না করে। সে তো তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।হযরত ঈসা ( আঃ ) স্বীয় কওমকে বলেছিলেনঃ হে আমার কওম! আমি তোমাদের নিকট এসেছি হিকমত অর্থাৎ নবুওয়াত নিয়ে এবং দ্বীনী বিষয়ে তোমরা যে মতভেদ করছো তা স্পষ্ট করে দিবার জন্যে। ইমাম ইবনে জারীর ( রঃ ) এটাই বলেন। এই উক্তিটিই উত্তম ও পাকাপোক্ত। ইমাম ইবনে জারীর ( রঃ ) ঐ লোকদের উক্তিকে খণ্ডন করেছেন যারা বলেন যে, ( আরবী ) ( কতক ) শব্দটি এখানে ( আরবী ) ( সমস্ত ) অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।মহান আল্লাহ বলেন যে, হযরত ঈসা ( আঃ ) তাঁর কওমকে আরো বলেনঃ “ সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমারই অনুসরণ কর । আল্লাহই তো আমার প্রতিপালক এবং তোমাদেরও প্রতিপালক। মনে রেখো যে, তোমরা সবাই এবং আমি নিজেও তার গোলাম এবং তাঁর মুখাপেক্ষী। আমরা তার দরবার ফকীর। সুতরাং একমাত্র তাঁরই ইবাদত করা আমাদের সবারই একান্ত কর্তব্য। তিনি এক ও অংশী বিহীন। এটাই হলো তাওহীদের পথ, এটাই সরল সঠিক পথ।”মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ “ অতঃপর তাদের কতিপয় দল মতানৈক্য সৃষ্টি করলো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লো । কেউ কেউ তো হযরত ঈসা ( আঃ )-কে আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল বলেই স্বীকার করলো এবং এরাই ছিল সত্যপন্থী দল। আবার কেউ কেউ তাঁর সম্পর্কে দাবী করলো যে, তিনি আল্লাহর পুত্র ( নাউযুবিল্লাহ )। আর কেউ কেউ তাকেই আল্লাহ বললো ( নাউযুবিল্লাহি মিন যালিকা )। আল্লাহ তা'আলা তাদের দুই দাবী হতেই মুক্ত ও পবিত্র। তিনি সর্বোচ্চ, সমুন্নত ও মহান। এ জন্যেই মহাপ্রতাপান্বিত আল্লাহ বলেনঃ দুর্ভোগ এই যালিমদের জন্যে। কিয়ামতের দিন তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রদান করা হবে।
সূরা যুখরুফ আয়াত 65 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- আল্লাহ কি মানুষকে পয়গম্বর করে পাঠিয়েছেন? তাদের এই উক্তিই মানুষকে ঈমান আনয়ন থেকে বিরত রাখে,
- যদি তারা বহিস্কৃত হয়, তবে মুনাফিকরা তাদের সাথে দেশত্যাগ করবে না আর যদি তারা আক্রান্ত
- অপর কিতাব প্রাপ্তরা যে বিভ্রান্ত হয়েছে, তা হয়েছে তাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পরেই।
- কাফেররা বলবে, হে আমাদের পালনকর্তা! যেসব জিন ও মানুষ আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল, তাদেরকে দেখিয়ে দাও,
- তিনি তোমাদের কান, চোখ ও অন্তঃকরণ সৃষ্টি করেছেন; তোমরা খুবই অল্প কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে থাক।
- বস্তুতঃ যাদুকররা এসে ফেরাউনের কাছে উপস্থিত হল। তারা বলল, আমাদের জন্যে কি কোন পারিশ্রমিক নির্ধারিত
- অতএব, তারা তাঁকে মিথ্যাবাদী বলতে লাগল এবং আমি তাদেরকে নিপাত করে দিলাম। এতে অবশ্যই নিদর্শন
- ও পাতাঘন উদ্যান।
- তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা আল্লাহ তা’আলাকে ভুলে গেছে। ফলে আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে আত্ন
- স্মরণ করুণ, আমার বান্দা আইয়্যুবের কথা, যখন সে তার পালনকর্তাকে আহবান করে বললঃ শয়তান আমাকে
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা যুখরুফ ডাউনলোড করুন:
সূরা Zukhruf mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Zukhruf শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers