কোরান সূরা আলে-ইমরান আয়াত 76 তাফসীর
﴿بَلَىٰ مَنْ أَوْفَىٰ بِعَهْدِهِ وَاتَّقَىٰ فَإِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُتَّقِينَ﴾
[ آل عمران: 76]
যে লোক নিজ প্রতিজ্ঞা পূর্ন করবে এং পরহেজগার হবে, অবশ্যই আল্লাহ পরহেজগারদেরকে ভালবাসেন। [সূরা আলে-ইমরান: 76]
Surah Al Imran in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Al Imran ayat 76
হাঁ, যে কেউ তার অঙ্গীকার পালন করে ও ভয়-ভক্তি বজায় রেখে চলে, নিঃসন্দেহ তখন আল্লাহ্ মুত্তাকীদের ভালোবাসেন।
Tafsir Mokhtasar Bangla
৭৬. বস্তুতঃ ব্যাপারটি তেমন নয় যা তারা মনে করছে। বরং এ ক্ষেত্রে তাদের অবশ্যই গুনাহ হবে। তবে যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান আনার ওয়াদা পূরণ করেছে, মানুষের সাথে ওয়াদাকৃত আমানত রক্ষা করেছে এবং আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মানার মাধ্যমে তাঁকেই ভয় করেছে তার কথা ভিন্ন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা মুত্তাকীদেরকে ভালোবাসেন এবং তিনি অচিরেই তাদেরকে এ জন্য সম্মানজনক প্রতিদান দিবেন।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
অবশ্যই যে তার অঙ্গীকার পালন করে এবং সংযত হয়ে চলে, নিশ্চয় আল্লাহ সংযমীদেরকে ভালবাসেন। [১] [১] 'অঙ্গীকার পালন করা'র অর্থ হল, সেই অঙ্গীকার রক্ষা করা যা আহলে-কিতাব ( ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টান ) এবং প্রত্যেক নবীর মাধ্যমে তাঁদের নিজ নিজ উম্মতের কাছ থেকে নবী করীম ( সাঃ )-এর উপর ঈমান আনার ব্যাপারে নেওয়া হয়েছে। আর 'সংযত হয়ে চলা' ( বা আল্লাহভীরুতা অবলম্বন করা )র অর্থ হল, মহান আল্লাহ কর্তৃক হারামকৃত জিনিস থেকে দূরে থাকা এবং রাসূলে করীম ( সাঃ ) কর্তৃক নির্দেশিত সমস্ত বিষয়ের উপর আমল করা। যারা এ রকম করে, তারা অবশ্যই আল্লাহর পাকড়াও থেকে রক্ষা পাবে এবং তাঁর প্রিয় বান্দা বলেও গণ্য হবে।
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
হ্যাঁ অবশ্যই, কেউ যদি তার অংগীকার পূর্ণ করে এবং তাকওয়া অবলম্বন করে তবে নিশ্চয় আল্লাহ্ মুত্তাকীদেরকে ভালবাসেন [ ১ ]। [ ১ ] ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এখানে তাকওয়া বলে শির্ক থেকে বেঁচে থাকা বোঝানো হয়েছে। যারা শির্ক থেকে বেঁচে থাকে আল্লাহ্ তা’আলা তাদেরকে ভালবাসেন। [ তাবারী ]
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
৭৫-৭৬ নং আয়াতের তাফসীর: ইয়াহূদীরা যে গচ্ছিত দ্রব্য আত্মসৎ করে থাকে এখানে সে সম্বন্ধে আল্লাহ তা'আলা মুমিনদেরকে সতর্ক করে দিচ্ছেন যে, তারা যেন ইয়াহূদীদের প্রতারণায় না পড়ে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ অবশ্যই বিশ্বস্ত রয়েছে, কিন্তু কেউ কেউ বড়ই আত্মসাত্তারী। তাদের মধ্যে কেউ কেউ এমন বিশ্বস্ত যে, তার কাছে রাশি রাশি সম্পদ রাখলেও সে যেমনকার তেমনই প্রত্যর্পণ করবে। কিন্তু কেউ কেউ এত বড় আত্মসাঙ্কারী যে, তার নিকট শুধুমাত্র একটি দীনার’ গচ্ছিত রাখলেও সে তা ফিরিয়ে দেবে না। তবে যদি মাঝে মাঝে তাগাদা করা হয় তবে হয়তো ফিরিয়ে দেবে নচেৎ একেবারে হজম করে নেবে। সে যখন একটা দীনারেরও লোভ সামলাতে পারলো না তখন বেশী সম্পদ তার নিকট গচ্ছিত রাখলে যে অবস্থা হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। ( আরবী ) শব্দটির পূর্ণ তাফসীর সূরার প্রথমেই বর্ণিত হয়েছে। আর দীনারের অর্থততা সর্বজন বিদিত। মুসনাদ-ই-ইবনে আবি হাতিমে হযরত মালিক ইবনে দীনারের উক্তি বর্ণিত আছেঃ ‘দীনারকে দীনার বলার কারণ এই যে, ওটা ‘দীন’ অর্থাৎ ঈমানও বটে এবং নার’ অর্থাৎ আগুনও বটে। ভাবার্থ এই যে, সত্যের সাথে গ্রহণ করলে দীন এবং অন্যায়ভাবে গ্রহণ করলে জাহান্নামের অগ্নি। এ স্থলে ঐ হাদীসটি বর্ণনা করাও যথোপযুক্ত বলে মনে করি যা সহীহ বুখারী শরীফের মধ্যে কয়েক জায়গায় এসেছে।রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ বানী ইসরাঈলের মধ্যে একটি লোক অন্য একটি লোকের নিকট এক হাজার স্বর্ণ মুদ্রা ঋণ চায় । ঐ লোকটি বলেঃ ‘সাক্ষী নিয়ে এসো।' সে বলেঃ আল্লাহ তা'আলার সাক্ষ্যই যথেষ্ট।' সে বলেঃ জামিন আন। সে বলেঃ ‘জামানত আল্লাহ তা'আলাকেই দিচ্ছি।' সে তাতে সম্মত হয়ে যায় এবং পরিশোধের মেয়াদ ঠিক করে তাকে এক হাজার স্বর্ণ মুদ্রা দিয়ে দেয়।অতঃপর ঋণী ব্যক্তি সামুদ্রিক সফরে বেরিয়ে পড়ে। কাজ-কাম শেষ করে সে সমুদ্রের ধারে এসে কোন জাহাজের জন্যে অপেক্ষা করতে থাকে, উদ্দেশ্য এই যে, মহাজনের নিকট গিয়ে তার ঋণ পরিশোধ করবে। কিন্তু কোন জাহাজ পেলো না। তখন সে এক খণ্ড কাঠ নিয়ে ওর ভেতর ফাঁপা করলো এবং ওর মধ্যে এক হাজার দীনার রেখে দিল এবং মহাজনের নামে একটি চিঠিও দিল। অতঃপর ওর মুখ বন্ধ করে দিয়ে ওটা সমুদ্রে ভাসিয়ে দিল। অতঃপর বললোঃ “ হে আল্লাহ! আপনি খুব ভাল করেই জানেন যে, আমি অমুক ব্যক্তির নিকট থেকে এক হাজার দীনার কর্জ নিয়েছি । তাতে আমি আপনাকেই সাক্ষী ও জামিন রেখেছি। সেও তাতে সন্তুষ্ট হয়ে আমাকে ঋণ দিয়েছে। এখন আমি সময়মত তার ঋণ পরিশোধ করার উদ্দেশ্যে নৌকা খোঁজ করছি কিন্তু পাচ্ছি না। কাজেই আমি বাধ্য হয়ে আপনারই উপর ভরসা করতঃ তা নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছি। আপনি তাকে তা পৌঁছে দিন।' এ প্রার্থনা জানিয়ে সে চলে আসে। কাঠটি পানিতে ডুবে যায়। সে কিন্তু নৌকার অনুসন্ধানেই থাকে যে, গিয়ে তার ঋণ পরিশোধ করবে। এদিকে ঐ মহাজন লোকটি এ আশায় নদীর ধারে আসে যে, হয়তো ঋণী ব্যক্তি নৌকায় তার প্রাপ্য নিয়ে আসছে। যখন দেখল যে, কোন নৌকা আসেনি তখন সে ফিরে যেতে উদ্যত হলো। এমতাবস্থায় একটি কাঠ নদীর ধারে পড়ে থাকতে দেখে জ্বালানীর কাজ দেবে মনে করে তা উঠিয়ে নেয় এবং বাড়ী গিয়ে কাঠটি ফাঁড়লে এক হাজার দীনার ও একটি চিঠি বেরিয়ে পড়ে। অতঃপর ঋণ গ্রহীতা লোকটি এসে পড়ে এবং বলেঃ ‘আল্লাহ জানেন আমি সদা চেষ্টা করেছি যে, নৌকা পেলে তাতে উঠে আপনার নিকট আগমন করতঃ সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পূর্বেই আপনার ঋণ পরিশোধ করবো। কিন্তু কোন নৌকা না পাওয়ায় বিলম্ব হয়ে গেল। সে তখন বলেঃ আপনি যে মুদ্রা পাঠিয়েছিলেন আল্লাহ তা'আলা আমার নিকট পৌছে দিয়েছেন। এখন আপনি আপনার মুদ্রা নিয়ে সন্তুষ্ট চিত্তে ফিরে যান। আহলে কিতাবের ভুল ধারণা এই ছিল যে, ধর্মান্ধ ও অশিক্ষিতদের ধন-সম্পদ আত্মসাৎ করলে কোন দোষ নেই। ওটা তাদের জন্য বৈধ। তাদের এ বদ ধারণা খণ্ডন করতে গিয়ে আল্লাহ পাক বলেন যে, তারা আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করে। কেননা, ওটা যে তাদের জন্য বৈধ নয় তা তারাও জানে। কারণ তাদের গ্রন্থেও অন্যায় মালকে আল্লাহ তাআলা অবৈধ বলে ঘোষণা করেছেন। কিন্তু এ নির্বোধের দল নিজেদের মনগড়া কথাকে শরীয়তের রঙ্গে রঞ্জিত করছে। হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ )-কে জনগণ ফতওয়া জিজ্ঞেস করেনঃ ‘জিহাদের অবস্থায় কখনো কখনো আমরা জিম্মী কাফিরদের মুরগী, ছাগল ইত্যাদি পেয়ে থাকি এবং মনে করি যে ঐগুলো গ্রহণ করাতে কোন দোষ নেই ( এতে আপনার মত কি? )।' তিনি বলেনঃ “ কিতাবধারীরাও ঠিক এ কথাই বলতো যে, মূর্খদের মাল গ্রহণে কোন দোষ নেই । জেনে রেখো যে, যখন তারা জিযিয়া কর প্রদান করবে তখন তাদের কোন মাল তোমাদের জন্যে বৈধ হবে না। তবে যদি তারা খুশী মনে দেয় তা অন্য কথা। ( মুসনাদ-ই-আবদুর রাজ্জাক ) হযরত সাঈদ ইবনে যুবাইর ( রঃ ) বলেন যে, যখন গ্ৰন্থধারীদের নিকট হতে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) একথা শ্রবণ করেন তখন তিনি বলেনঃ “ আল্লাহর শত্রুরা মিথ্যাবাদী । একমাত্র আমানত ছাড়া অজ্ঞতা যুগের সমস্ত কিছুই আমার পায়ের নীচে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। কেননা, আমানত কোন পাপী ও দুরাচারের হলেও ফিরিয়ে দিতে হবে।'অতঃপর ইরশাদ হচ্ছে-‘কিন্তু যে ব্যক্তি স্বীয় অঙ্গীকার পুরো করে এবং আল্লাহকে ভয় করে, আর আহলে কিতাব হয়েও স্বীয় ধর্মগ্রন্থের হিদায়াত অনুযায়ী হযরত মুহাম্মাদ ( সঃ )-এর উপরও বিশ্বাস স্থাপন করে, যে অঙ্গীকার সমস্ত নবী ( আঃ )-এর নিকট হতে নেয়া হয়েছিল এবং যে অঙ্গীকার প্রতিপালনের দায়িত্ব তাদের উম্মতগণের উপরও রয়েছে, অতঃপর আল্লাহ পাকের অবৈধকৃত জিনিস হতে দূরে থাকে, তাঁর শরীয়তের অনুসরণ করে এবং নবীগণের ( আঃ ) নেতা শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা ( সঃ )-এর পূর্ণ আনুগত্য স্বীকার করে, সেই মুত্তাকী এবং মুত্তাকী ব্যক্তিরাই আল্লাহর বন্ধু।
সূরা আলে-ইমরান আয়াত 76 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- যাতে কেউ না বলে, হায়, হায়, আল্লাহ সকাশে আমি কর্তব্যে অবহেলা করেছি এবং আমি ঠাট্টা-বিদ্রুপকারীদের
- বলুন, তোমরা কি সে সত্তাকে অস্বীকার কর যিনি পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন দু’দিনে এবং তোমরা কি
- আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই, তিনি চিরঞ্জীব, সবকিছুর ধারক।
- আর স্মরণ কর, যখন ইব্রাহীম বলল, হে আমার পালনকর্তা আমাকে দেখাও, কেমন করে তুমি মৃতকে
- অতএব, আপনি তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিন এবং বলুন, ‘সালাম’। তারা শীঘ্রই জানতে পারবে।
- তিনিই প্রাণ দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান এবং দিবা-রাত্রির বিবর্তন তাঁরই কাজ, তবু ও কি
- আমি স্বীয় ক্ষমতাবলে আকাশ নির্মাণ করেছি এবং আমি অবশ্যই ব্যাপক ক্ষমতাশালী।
- যখন শো’আয়ব তাদের কে বললেন, তোমরা কি ভয় কর না?
- আমি তাদের উপর প্রেরণ করেছিলাম ঝঞ্জাবায়ু এক চিরাচরিত অশুভ দিনে।
- তাদেরকে অবশ্যই এমন এক স্থানে পৌছাবেন, যাকে তারা পছন্দ করবে এবং আল্লাহ জ্ঞানময়, সহনশীল।
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা আলে-ইমরান ডাউনলোড করুন:
সূরা Al Imran mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Al Imran শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers