কোরান সূরা কাহ্ফ আয়াত 82 তাফসীর
﴿وَأَمَّا الْجِدَارُ فَكَانَ لِغُلَامَيْنِ يَتِيمَيْنِ فِي الْمَدِينَةِ وَكَانَ تَحْتَهُ كَنزٌ لَّهُمَا وَكَانَ أَبُوهُمَا صَالِحًا فَأَرَادَ رَبُّكَ أَن يَبْلُغَا أَشُدَّهُمَا وَيَسْتَخْرِجَا كَنزَهُمَا رَحْمَةً مِّن رَّبِّكَ ۚ وَمَا فَعَلْتُهُ عَنْ أَمْرِي ۚ ذَٰلِكَ تَأْوِيلُ مَا لَمْ تَسْطِع عَّلَيْهِ صَبْرًا﴾
[ الكهف: 82]
প্রাচীরের ব্যাপার-সেটি ছিল নগরের দুজন পিতৃহীন বালকের। এর নীচে ছিল তাদের গুপ্তধন এবং তাদের পিতা ছিল সৎকর্ম পরায়ন। সুতরাং আপনার পালনকর্তা দায়বশতঃ ইচ্ছা করলেন যে, তারা যৌবনে পদার্পন করুক এবং নিজেদের গুপ্তধন উদ্ধার করুক। আমি নিজ মতে এটা করিনি। আপনি যে বিষয়ে ধৈর্য্যধারণ করতে অক্ষম হয়েছিলেন, এই হল তার ব্যাখ্যা। [সূরা কাহ্ফ: 82]
Surah Al-Kahf in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Kahf ayat 82
''আর দেয়াল সন্বন্ধে -- এ ছিল শহরের দুইজন এতিম বালকের, আর তার তলায় ছিল তাদের উভয়ের ধনভান্ডার, আর তাদের পিতা ছিল সজ্জন। কাজেই তোমার প্রভু চেয়েছিলেন যে তারা যেন তাদের সাবালকত্ব প্রাপ্ত হয় এবং তাদের ধনভান্ডার বের করে আনে তোমার প্রভুর তরফ থেকে করুণা হিসেবে, আর আমি এটি করি নি আমার নিজের ইচ্ছায়। এই হচ্ছে তার তাৎপর্য যে সন্বন্ধে তুমি ধৈর্যধারণ করতে পার নি।’’
Tafsir Mokhtasar Bangla
৮২. আর যে দেয়ালটিকে আমি ঠিক করে দিয়েছি এবং যা ঠিক করার ব্যাপারে আপনি আমার প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তা ছিলো আমরা যে শহরে এসেছি সে শহরের দু’টি বাচ্চার। তাদের পিতা-মাতা ইতিপূর্বে মৃত্যু বরণ করেছে। আর দেয়ালের নিচে ছিলো কিছু রক্ষিত সম্পদ। এদিকে এ বাচ্চা দু’টোর পিতা ছিলো খুবই নেককার। তাই হে মূসা! আপনার প্রতিপালক চেয়েছেন তারা দু’জন বড় ও বুঝমান হোক। তারপর তারা এর নিচ থেকে নিজেদের উক্ত সম্পদ বের করে নিক। কারণ, দেয়ালটি এখনই ভেঙ্গে পড়লে তাদের সেই সম্পদ প্রকাশ পেয়ে যাবে এবং তা নষ্টের সম্মুখীন হবে। মূলতঃ এ ব্যবস্থাপনা আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে এদের প্রতি রহমত স্বরূপ। আমি কিন্তু নিজের চিন্তা-ভাবনা থেকে এটি করিনি। এ হলো যে ব্যাপারে আপনি ধৈর্য ধরতে পারেননি তারই ব্যাখ্যা।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
আর ঐ প্রাচীরটির ( কথা এই যে, ) ওটা ছিল নগরবাসী দুই এতীম বালকের, ওর নিম্নদেশে আছে তাদের গুপ্তধন এবং তাদের পিতা ছিল সৎকর্মপরায়ণ। সুতরাং তোমার প্রতিপালক দয়াপূর্বক ইচ্ছা করলেন যে, তারা বয়ঃপ্রাপ্ত হোক এবং তারা তাদের ধনভান্ডার উদ্ধার করুক; আমি নিজের তরফ থেকে সেসব করিনি। [১] তুমি যে বিষয়ে ধৈর্য ধারণে অপারগ হয়েছিলে, এটাই তার ব্যাখ্যা।’ [১] খাযির ( আঃ )-কে যাঁরা নবী বলেন তাঁদের এটি দ্বিতীয় দলীল যা দ্বারা তাঁরা তাঁর নবী হওয়া প্রমাণ করেন । কারণ নবী ব্যতীত কারো নিকট এই শ্রেণীর অহী আসে না, যিনি কোন গায়বী ইশারায় এত বড় বড় কাজ করতে পারেন। আর না নবী ব্যতীত অন্য কারো গায়বী ইঙ্গিতে এ ধরনের কাজ মেনে নেওয়ার মত। খাযির ( আঃ )-এর নবুঅতের মত তাঁর জীবন বিষয়েও কিছু লোকের নিকট মত-পার্থক্য রয়েছে। যাঁরা মনে করেন খাযির ( আঃ ) এখনও জীবিত, তাঁরা বেশ কিছু লোকের সাথে তাঁর সাক্ষাৎ প্রমাণ করেন। কিন্তু যেভাবে খাযিরের আজ পর্যন্ত জীবিত থাকার ব্যাপারে শরীয়তের কোন দলীল নেই, ঠিক সেইভাবে খাযিরের সঙ্গে ধ্যানমগ্ন, নিদ্রিত বা জাগ্রত অবস্থায় কারো সাক্ষাৎ লাভের কথাও মানার যোগ্য নয়। যখন তার শরীরের হুলিয়া ( গঠনাকৃতি ) সঠিক দলীল দ্বারা প্রমাণিত নয়, তখন তাঁকে কিভাবে চেনা সম্ভব? আর কি ভাবেই বা বিশ্বাস করা যায় যে, যাঁরা খাযিরের সাক্ষাৎ লাভের দাবী করেন তাঁরা সত্যি সত্যি মূসা ( আঃ ) এর সঙ্গী খাযির ( আঃ )-এর সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। যেহেতু এমনও হতে পারে যে, খাযিরের নামে তাঁদেরকে অন্য কেউ ধোঁকা দিয়েছে।
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
আর ঐ প্রাচীরটি—সেটি ছিল নগরবাসী দুই ইয়াতিম কিশোরের এবং এর নীচে আছে তাদের গুপ্তধন [ ১ ] আর তাদের পিতা ছিল সৎকর্মপরায়ণ [ ২ ]। কাজেই আপনার রব তাদের প্রতি দয়াপরবশ হয়ে ইচ্ছে করলেন যে, তারা বয়ঃপ্রাপ্ত হোক এবং তারা তাদের ধনভাণ্ডার উদ্ধার করুক। আর আমি নিজ থেকে কিছু করিনি; আপনি যে বিষয়ে ধৈর্য ধারনে অপারগ হয়েছিলেন, এটাই তার ব্যাখ্যা [ ৩ ]। [ ১ ] এখানে আল্লাহ্ তাআলা সে প্রাচীরের নীচে খনি আছে বলেছেন। এর অতিরিক্ত কোন তাফসীর করেননি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকেও সহীহ কোন তাফসীর বর্ণিত হয়নি। তাই এ ব্যাপারে সঠিক কোন মতামত দেয়া যায় না। তবে কাতাদাহ রাহিমাহুল্লাহ থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে যে, এখানে গচ্ছিত খনি বলতে সম্পদ বোঝানো হয়েছে। আর আয়াতের ভাষ্য থেকেও এ অর্থই বেশী সুস্পষ্ট। [ দেখুন, তাবারী ] [ ২ ] এতে ইঙ্গিত রয়েছে যে, খাদির ‘আলাইহিস সালাম-এর মাধ্যমে ইয়াতীম বালকদের জন্য রক্ষিত গুপ্তধনের হেফাযত এজন্য করানো হয় যে, তাদের পিতা একজন সৎকর্মপরায়ণ আল্লাহর প্রিয় বান্দা ছিলেন। তাই আল্লাহ তা’আলা তার সন্তান-সন্ততির উপকারার্থে এ ব্যবস্থা করেন। [ ইবন কাসীর ] [ ৩ ] খাদির ‘আলাইহিস সালাম জীবিত আছেন, না ওফাত হয়ে গেছেঃ এ বিষয়ের সাথে কুরআনে বর্ণিত ঘটনার কোন সম্পর্ক নেই। তাই কুরআন ও হাদীসে স্পষ্টতঃ এ সম্পর্কে কিছু উল্লেখ করা হয়নি। এ ব্যাপারে সর্বকালেই আলেমদের বিভিন্নরূপ মতামত পরিদৃষ্ট হয়েছে। যাদের মতে তিনি জীবিত আছেন, তাদের প্রমাণ হচ্ছে একটি বর্ণনা। যাতে বলা হয়েছেঃ যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওফাত হয়ে যায়, তখন সাদা-কালো দাড়িওয়ালা জনৈক ব্যক্তি আগমন করে এবং ভীড় ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করে কান্নাকাটি করতে থাকে। এই আগন্তুক সাহাবায়ে কেরামের দিকে মুখ করে বলতে থাকেঃ আল্লাহর দরবারেই প্রত্যেক বিপদ থেকে সবর আছে, প্রত্যেক বিলুপ্ত বিষয়ের প্রতিদান আছে এবং তিনি প্রত্যেক ধ্বংসশীল বস্তুর স্থলাভিষিক্ত। তাই তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তন কর এবং তার কাছেই আগ্রহ প্রকাশ কর। কেননা, যে ব্যক্তি বিপদের সওয়াব থেকে বঞ্চিত হয়, সে-ই প্রকৃত বঞ্চিত। আগন্তুক উপরোক্ত বাক্য বলে বিদায় হয়ে গেলে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু ও আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেনঃ ইনি খাদির ‘আলাইহিস সালাম। [ মুস্তাদরাকঃ ৩/৫৯, ৬০ ] তবে বর্ণনাটি সম্পূর্ণ বানোয়াট। পক্ষান্তরে যারা খাদির ‘আলাইহিস সালাম-এর জীবদ্দশা অস্বীকার করে, তাদের বড় প্রমাণ হচ্ছে এক) আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ “ আমরা আপনার আগেও কোন মানুষকে অনন্ত জীবন দান করিনি” । [ সূরা আল-আম্বিয়ঃ ৩৪ ] সুতরাং খাদির আলাইহিসসালামও অনন্ত জীবন লাভ করতে পারেন না। তিনি নিশ্চয়ই অন্যান্য মানুষের মত মারা গেছেন। দুই) আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবনের শেষ দিকে এক রাতে আমাদেরকে নিয়ে এশার সালাত আদায় করেন। সালাত শেষে তিনি দাঁড়িয়ে যান এবং নিমোক্ত কথাগুলো বলেনঃ “ তোমরা কি আজকের রাতটি লক্ষ্য করছ? এই রাত থেকে একশ’ বছর পর আজ যারা পৃথিবীতে আছে, তাদের কেউ জীবিত থাকবে না । ’ [ মুসলিমঃ ২৫৩৭ ] তিন) অনুরূপভাবে, খাদির ‘আলাইহিস সালাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আমলে জীবিত থাকলে তার কাছে উপস্থিত হয়ে ইসলামের সেবায় আত্মনিয়োগ করা তার জন্য অপরিহার্য ছিল। কেননা, হাদীসে বলা হয়েছে “ মূসা জীবিত থাকলে আমার অনুসরণ করা ছাড়া তারও গত্যন্তর ছিল না । ” [ মুসনাদে আহমাদঃ ৩/৩৩৮ ] ( কারণ, আমার আগমনের ফলে তার দ্বীন রহিত হয়ে গেছে। ) চার) বদরের প্রান্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেনঃ “ যদি আপনি এ ক্ষুদ্র দলটিকে ধ্বংস করেন তবে যমীনের বুকে আপনার ইবাদতকারী কেউ থাকবে না” । [ মুসলিমঃ ১৭৬৩ ] এতে বোঝা যাচ্ছে যে, খাদির নামক কেউ জীবিত নেই। এ সব দলীল-প্রমাণ দ্বারা সুস্পষ্ট হয়ে গেছে, খাদির ‘আলাইহিস সালাম জীবিত নেই। সুতরাং যারাই তার সাথে সাক্ষাতের দাবী করবে, তারাই মিথ্যার উপর রয়েছে। এটাও অসম্ভব নয় যে, শয়তান তাদেরকে খাদিরের রূপ ধরে বিভ্রান্ত করছে। কারণ, শয়তানের পক্ষে খাদিরের রূপ ধারণ করা অসম্ভব নয়। [ বিস্তারিত দেখুন, ইবন কাসীর; ইবন তাইমিয়্যাহ, মাজমু ফাতাওয়া ৪/৩৩৭ ]
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
এই আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, বড় শহরের উপরও গ্রামের প্রয়োগ হয়ে থাকে। কেননা, পূর্বে মহান আল্লাহ। বলেছেন। অর্থাৎ “ যখন তারা এক গ্রামের অধিবাসীদের নিকট পৌঁছলো ।” আর এখানে বা ‘শহর’ বলেছেন। অনুরূপভাবে মক্কা শরীফকেই “ গ্রাম’ বলা হয়েছে । আল্লাহ তাআলা বলেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ বহু এমন গ্রাম ছিল যা তোমার ঐ গ্রাম অপেক্ষা অধিক শক্তিশালী ছিল যেখান থেকে তোমাকে বের করে দিয়েছে ।” ( ৪৭:১৩ ) অন্য জায়গায় মক্কা ও তায়েফ উভয় শহরকেই গ্রাম বলা হয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ কেন এই কুরআন দুই গ্রামের একজন বড় লোকের উপর অবতীর্ণ করা হয় নাই?” ( ৪৩:৩১ )( আরবী ) এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা বর্ণনা করেনঃ এই দেয়ালটিকে ঠিক করে দেয়ার মধ্যে যৌক্তিকতা এই ছিল যে, এটা ছিল ঐ শহরের দুটি পিতৃহীন বালকের অধিকারভুক্ত । ওর নীচে তাদের মাল প্রোথিত ছিল। সঠিক তাফসীর তো এটাই। তবে এটাও বর্ণিত আছে যে, ওটা ছিল জ্ঞান ভাণ্ডার। এমনকি একটি মারফু হাদীসে রয়েছে যে, কুরআন কারীমে যে গুপ্ত ধনের উল্লেখ আছে তা ছিল খাটি সোনার ফালি। তাতে লিখিত ছিলঃ “ বিস্মিত হতে হয় ঐ ব্যক্তিকে দেখে যে তাকদীরকে বিশ্বাস করে, অথচ স্বীয় প্রাণকে পরিশ্রম ও কষ্টের মধ্যে নিক্ষেপ করেছে এবং দুঃখ ও চিন্তার মধ্যে পড়ে থাকছে! আশ্চর্যের বিষয় যে, জাহান্নামের শাস্তির কথা স্বীকার করেও হাসি-তামাশার মধ্যে লিপ্ত হয়েছে! বড়ই বিস্ময়কর ব্যাপার যে, মৃত্যুকে বিশ্বাস করা সত্ত্বেও গাফেল ও উদাসীনভাবে জীবন যাপন করছে ।” ঐ ফালির উপর 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু। মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) লিখিত ছিল। ( এর একজন বর্ণনাকারী হলেন বাশর ইবনু মুনযির। কথিত আছে যে, তিনি মূসাইসিয়ার কাষী ছিলেন। তাঁর হাদীস সন্দেহজনক ) পূর্ব যুগীয় গুরুজন হতেও এই ব্যাপারে কিছু হাদীস বর্ণিত আছে।হযরত হাসান বসীর ( রঃ ) বলেন যে, ওটা ছিল সোনার ফালি। তাতে ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম’ এর পরে প্রায় উপরে উল্লিখিত উপদেশাবলী লিখিত ছিল এবং শেষে কালেমায়ে তাইয়্যেবাহ লিপিবদ্ধ ছিল। জাফর ইবনু মুহাম্মদ ( রঃ ) বলেন যে, ঐ ফালিতে আড়াই লাইন লিখিত ছিল, পূর্ণ তিন লাইন নয় ( শেষ পর্যন্ত )। বর্ণিত আছে যে, এই দুই ইয়াতীম তাদের সপ্তম পুরুষের পুণ্যের বরকতে রক্ষিত হয়েছিল। যে মনীষীরা এই ব্যাখ্যা করেছেন তাদের এই তাফসীরও পূর্বের তাফসীরের বিপরীত নয়। কেননা, এতেও রয়েছে যে, এই জ্ঞান ও উপদেশপূর্ণ কথাগুলি সোনার ফালির উপর লিখিত ছিল আর এটা প্রকাশ্য কথা যে, সোনার ফালি নিজেই মাল এবং অতি মূল্যবান সম্পদ। এ সব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।এই আয়াত দ্বারা এটাও সাব্যস্ত হয় যে, মানুষের পুণ্যের কারণে তার সন্তান সন্ততিরাও দুনিয়া ও আখেরাতে আল্লাহর মেহেরবানী লাভ করে থাকে। এটা কুরআন ও হাদীসে পরিষ্কারভাবে বর্ণিত আছে। দেখা যায় যে, এই আয়াতে ঐ ইয়াতীম ছেলে দু’টির কোন প্রশংসা বর্ণনা করা হয় নাই, বরং তাদের পিতার সততা ও সৎকর্মশীলতার বর্ণনা দেয়া হয়েছে। আর এটা পূর্বেই বর্ণিত হয়েছে যে, পিতার বরকতের কারণে তাদের হিফাযত করা হয়েছিল। সে ছিল তাদের সপ্তম পুরুষ। এ সব ব্যাপারে আল্লাহ তাআ'লাই সঠিক জ্ঞানের অধিকারী। এ আয়াতে রয়েছেঃ “ তোমার প্রতিপালক ইচ্ছা করলেন এখানে ইচ্ছার সম্পর্ক আল্লাহ তাআলার সাথে স্থাপন করার কারণ এই যে, যৌবনে পৌঁছাতে আল্লাহ ছাড়া আর কেউই সক্ষম নয় । দেখা যায় যে, শিল্প ব্যাপারে ও নৌকার ব্যাপারে ইচ্ছার সম্পর্ক আল্লাহ তাআলা নিজের দিকে। লাগিয়েছেন। যেমন বলেছেনঃ ( আরবী ) ( আমি ইচ্ছা করলাম ) এবং ( আরবী ) ( আমি ইচ্ছা করলাম )। এ সব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।অতঃপর হযরত খিয়র ( আঃ ) হযরত মূসাকে ( আঃ ) বললেনঃ “ যে তিনটি ঘটনাকে আপনি বিপজ্জনক মনে করেছিলেন । প্রকৃতপক্ষে তা ছিল আল্লাহর রহমত। নৌকার মালিকরা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বটে। কিন্তু তা ত্রুটিযুক্ত করার ফলে সম্পূর্ণরূপে রক্ষা পেয়েছে। শিশুটির হত্যার ফলে তার পিতা-মাতা সাময়িকভাবে দুঃখ পেলেও চিরদিনের দুঃখ ও আল্লাহর শাস্তি থেকে বেঁচে গেছে। এরপরে তারা সুসন্তান লাভ করেছে। আর দেয়াল ঠিক করে দেয়ার ফলে ঐ সৎকর্মশীল লোকটির সন্তানদ্বয়ের গুপ্তধন রক্ষিত হয়। এই কাজগুলি আমি আমার খেয়াল খুশীমত করি নাই বরং আল্লাহ তাআলার আদেশ পালন করেছি মাত্র। এর দ্বারা কেউ কেউ হযরত খিযরের নবুওয়াতের উপর দলীল গ্রহণ করেছেন। ইতিপূর্বে এর উপর পূর্ণভাবে আলোচনা সমালোচনা হয়ে গেছে। কারো কারো মতে তিনি রাসূল ছিলেন। একটি উক্তি আছে যে, তিনি ফেরেশতা ছিলেন। কিন্তু অধিকাংশ গুরুজনের মতে তিনি আল্লাহর ওয়ালী ছিলেন। ইমাম ইবনু কুতায়বা ( রঃ ) মাআরিফ' গ্রন্থে লিখেছেন যে, হযরত খিযুরের ( আঃ ) নাম ছিল বালিয়া ইবনু মালকান ইবনু ফালেগ, ইবনু আবির ইবনু শানিখ ইবনু আরফাখশাদ ইবনু সাম ইবনু নূহ ( আঃ )। তাঁর কুনিয়াত ( পিতৃ পদবীযুক্ত নমি ) আবুল আব্বাস এবং উপাধী খিযুর ( আঃ )। ইমাম নাওয়াতী ( রঃ ) তাহযীবুল আসমা গ্রন্থে লিখেছেন যে, হযরত খিয়র ( আঃ ) একজন শাহযাদা ছিলেন। তিনি ( নাওয়াভী (রঃ )) এবং ইবনু সালাহ্ ( রঃ ) তো উক্তি করেছেন যে, তিনি এখন পর্যন্ত জীবিত আছেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত জীবিত থাকবেন। আর কোন কোন হাদীসেও এর উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু ওগুলির একটিও বিশুদ্ধ নয়। এই ব্যাপারে সবচেয়ে বেশী মাশহুর হলো ঐ হাদীসটি যাতে আছে যে, রাসূলুল্লাহর ( সাঃ ) প্রতি সমবেদনা প্রকাশের জন্যেই তিনি আবির্ভূত হয়েছিলেন। কিন্তু এর সনদও দুর্বল। অধিকাংশ মুহাদ্দিস এর বিপরীত মতপোষণ করেছেন এবং আজ পর্যন্ত হযরত খিযুরের ( আঃ ) জীবিত থাকাকেও স্বীকার করেন না। তাদের একটি দলীল হচ্ছে নিম্নের আয়াতটিঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ ( হে নবী (সঃ )) তোমার পূর্বে কাউকেও আমি চিরস্থায়ী জীবন । দান করি নাই।” ( ২১৪ ৩৪ ) আর একটি দলীল হলো বদরের যুদ্ধের দিন নবীর ( সঃ ) নিম্নরূপ প্রার্থনাঃ “ হে আল্লাহ! যদি আমার জামাআতটি ধ্বংস হয়ে যায়, তবে যমীনে আপনার ইবাদত করার মত আর কেউ অবশিষ্ট থাকবে ন্য ।” অন্য একটি দলীল এটাও যে, যদি হযরত খি ( আঃ ) জীবিত থাকতেন, তবে তিনি অবশ্যই রাসূলুল্লাহর ( সঃ ) খিদমতে হাযির হতেন এবং ইসলাম কবুল করতেন ও তাঁর সাহাবীদের অন্তর্ভুক্ত হতেন। কেননা, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) সমস্ত দানব ও মানবের নিকট রাসূল রূপে প্রেরিত হয়েছিলেন। তিনি তো একথাও বলেছিলেনঃ “ যদি আজ হযরত মূসা ( আঃ ) ও হযরত ঈসা ( আঃ ) জীবিত থাকতেন, তবে তাঁদেরও আমার আনুগত্য ছাড়া উপায় ছিল না । তিনি তার মৃত্যুর কিছু দিন পূর্বে বলেছিলেনঃ “ এখন যারা দুনিয়ার বুকে রয়েছে, আজ থেকে নিয়ে একশ’ বছরের মধ্যে তাদের কেউই অবশিষ্ট থাকবে না । এ ছাড়া আরো বহু দলীল রয়েছে।মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে, হযরত খিরকে ( আঃ ) খ্যির বলার কারণ এই যে, তিনি সাদা বর্ণের শুষ্ক ঘাসের উপর বসেছিলেন, শেষ পর্যন্ত ওর নীচে থেকে সবুজ বর্ণের ঘাস উদগত হয়েছিল। সম্বতঃ ভাবার্থ এই যে, তিনি শুষ্ক ঘাসের উপর বসেছিলেন, অতঃপর তা সবুজ বর্ণ ধারণ করেছিল। মোট কথা, হযরত খ্যির ( আঃ ) যখন হযরত মূসাকে ( আঃ ) প্রকৃত রহস্য ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দেন এবং তার কাছে নিজের কাজের যোক্তিকতা বিশ্লেষণ করেন তখন বলেনঃ “ এটাই ছিল গুপ্ত রহস্য যা উদঘাটন করানোর জন্যে আপনি তাড়াহুড়া করছিলেন ।” পূর্বে হযরত মূসার ( আঃ ) আগ্রহ ও কাঠিন্য বেশী ছিল বলে মহান আল্লাহ ( আরবী ) শব্দ ব্যবহার করেছেন। তারপর হযরত খিয়র ( আঃ ) যখন রহস্য খুলে দিলেন তখন আর কাঠিন্য থাকলো না, কাজেই শব্দ নিয়ে আসলেন। এই সিফাত বা বিশেষণ নিম্নের আয়াতে রয়েছেঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ এর পর ইয়াজুজ ও মাজুজ ঐ প্রাচীর অতিক্রম করতে পারলো না, বা ভেদ করতেও পারলো না ।” ভেদ করার তুলনায় অতিক্রম করা সহজ বলে ( আরবী ) বা ভারীর মুকাবিলা ভারীর দ্বারা করা হয়েছে এবং ( আরবী ) বা হালকার মুকাবিলা করা হয়েছে হালকা দ্বারা। এইভাবে শাব্দিক ও মৌলিক সম্পর্ক স্থাপন করা হয়েছে।হযরত মূসার ( আঃ ) সঙ্গীর আলোচনা ঘটনার শুরুতে ছিল। কিন্তু পরে আর তার আলোচনা করা হয়নি। কেননা, হযরত মূসা ( আঃ ) ও হযরত খিরের ( আঃ ) ঘটনা বর্ণনা করাই উদ্দেশ্য। হাদীসে আছে যে, হযরত মূসার ( আঃ ) এই সাথী ছিলেন হযরত ইউশা ইবনু নূন ( আঃ )। তাঁকেই হযরত মূসার ( আঃ ) পরে বাণী ইসরাঈলের ওয়ালী বানানো হয়েছিল। এ সব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী। একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, তিনি আবে হায়াত পান করে ছিলেন। এজন্যে তাকে একটি নৌকায় বসিয়ে দিয়ে সমুদ্রের মধ্যভাগে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল। ঐ নৌকাটি এভাবেই চিরদিনের জন্যে সমুদ্রের তরঙ্গের মধ্যে চলতে রয়েছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত চলতে থাকবে। এটা খুবই দুর্বল উক্তি। কেননা এই ঘটনার বর্ণনাকারীদের মধ্যে একজন রয়েছেন হাসান নামক ব্যক্তি। তার বর্ণনা পরিত্যাজ্য। দ্বিতীয় বর্ণনাকারী হলেন তাঁর পিতা, যিনি অপরিচিত। সনদ হিসেবেও এ ঘটনা ঠিক নয়।
সূরা কাহ্ফ আয়াত 82 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- আল্লাহ যা ইচ্ছা মিটিয়ে দেন এবং বহাল রাখেন এবং মূলগ্রন্থ তাঁর কাছেই রয়েছে।
- কে তোমাদের মধ্যে বিকারগ্রস্ত।
- এটা তো বিশ্ববাসীর জন্যে এক উপদেশ মাত্র।
- অনন্তর যারা অজ্ঞতাবশতঃ মন্দ কাজ করে, অতঃপর তওবা করে এবং নিজেকে সংশোধন করে নেয়, আপনার
- শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না।
- না তাদের আল্লাহ তা’আলা ব্যতীত কোন উপাস্য আছে? তারা যাকে শরীক করে, আল্লাহ তা’আলা তা
- তিনিই জীবন ও মরণ দান করেন এবং তাঁরই কাছে প্রত্যাবর্তন করতে হবে।
- যা কিছু নভোন্ডলে আছে এবং যা কিছু ভুমন্ডলে আছে, সব আল্লাহরই। সব বস্তু আল্লাহর মুষ্ঠি
- তুমি কি তাদেকে দেখনি, যারা নিজেদেরকে পূত-পবিত্র বলে থাকে অথচ পবিত্র করেন আল্লাহ যাকে ইচ্ছা
- তাকে শোনানো সুসংবাদের দুঃখে সে লোকদের কাছ থেকে মুখ লুকিয়ে থাকে। সে ভাবে, অপমান সহ্য
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা কাহ্ফ ডাউনলোড করুন:
সূরা Kahf mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Kahf শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers