কোরান সূরা ত্বা-হা আয়াত 94 তাফসীর
﴿قَالَ يَا ابْنَ أُمَّ لَا تَأْخُذْ بِلِحْيَتِي وَلَا بِرَأْسِي ۖ إِنِّي خَشِيتُ أَن تَقُولَ فَرَّقْتَ بَيْنَ بَنِي إِسْرَائِيلَ وَلَمْ تَرْقُبْ قَوْلِي﴾
[ طه: 94]
তিনি বললেনঃ হে আমার জননী-তনয়, আমার শ্মশ্রু ও মাথার চুল ধরে আকর্ষণ করো না; আমি আশঙ্কা করলাম যে, তুমি বলবেঃ তুমি বনী-ইসরাঈলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছ এবং আমার কথা স্মরণে রাখনি। [সূরা ত্বা-হা: 94]
Surah Ta-Ha in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah TaHa ayat 94
তিনি বললেন -- ''হে আমার সহোদর! আমার দাড়ি পাকড়ো না আর আমার মাথাও না, নিঃসন্দেহ আমি ভয় করেছিলাম পাছে তুমি বলো -- 'ইসরাইলের বংশধরদের মধ্যে তুমি বিভেদ ঘটিয়েছ এবং আমার কথার অপেক্ষা করো নি’।’’
Tafsir Mokhtasar Bangla
৯৪. যখন মূসা ( আলাইহিস-সালাম ) তাঁর ভাই হারূনের কর্মের প্রতি ক্ষোভ দেখিয়ে তাঁর দাঁড়ি ও মাথা ধরে টানলেন তখন হারূন ( আলাইহিস-সালাম ) তাঁর নিকট দয়া কামনা করে বললেন: আপনি আমার দাঁড়ি ও মাথার চুল ধরবেন না। কারণ, তাদের সাথে থাকার ব্যাপারে আমার নিকট ওজর রয়েছে। আমি আশঙ্কা করছিলাম যে, যদি আমি তাদেরকে একা ছেড়ে দেই তাহলে তারা বিক্ষিপ্ত হয়ে যাবে। তখন আপনি বলতেন: আমি তাদের মাঝে ফাটল ধরিয়েছি। আর আমি তাদের ব্যাপারে আপনার অসিয়ত রক্ষা করিনি।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
হারূন বলল, ‘হে আমার সহোদর! আপনি আমার দাড়ি ও মাথা ( চুল ) ধরবেন না। আসলে আমি আশঙ্কা করলাম যে, আপনি বলবেন, তুমি বানী ইস্রাঈলদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করেছ[১] এবং তুমি আমার কথার অপেক্ষা করনি।’[২] [১] মূসা ( আঃ ) নিজ জাতিকে শিরকের পাপে ভ্রষ্ট হতে দেখে অত্যন্ত ক্রোধান্বিত ছিলেন এবং এই বুঝেছিলেন যে, হয়তো বা তাঁর ভাই হারূন যাঁকে তিনি প্রতিনিধিরূপে রেখে গিয়েছিলেন তাঁরও কিছু অবহেলা ও শৈথিল্য আছে। যার কারণে অত্যন্ত ক্রোধের সাথে হারূন ( আঃ )-এর দাড়ি ও চুল ধরে টান মেরে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলেন। যার ফলে তিনি মূসা ( আঃ )-কে এত কঠোরতা প্রদর্শন না করতে আবেদন জানান।[২] সূরা আ'রাফ ( ৭:১৪২ আয়াত ) এ হারূন ( আঃ )-এর উত্তর এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যে, লোকেরা আমাকে দুর্বল ভেবেছিল এবং আমাকে হত্যা করতে উদ্যত হয়েছিল। যার অর্থ হল, হারূন ( আঃ ) নিজের দায়িত্ব সম্পূর্ণরূপে পালন করেছিলেন এবং তাদেরকে বুঝানো ও বাছুর পূজা হতে বিরত করার ব্যাপারে কোন প্রকার ত্রুটি ও শৈথিল্য প্রদর্শন করেননি। কিন্তু ব্যাপারটিকে তিনি এত বাড়তে দেননি, যাতে গৃহযুদ্ধের পরিবেশ সৃষ্টি না হয়ে যায়। কারণ হারূন ( আঃ )-কে হত্যা মানেই তাঁর সমর্থক ও বিরোধীদের মধ্যে আপোসে রক্তপাত শুরু হয়ে যেত এবং বানী ইস্রাঈলরা দুই দলে বিভক্ত হয়ে পড়ত; যারা একে অপরের রক্ত-পিপাসু হত। যেহেতু মূসা ( আঃ ) সেখানে উপস্থিত ছিলেন না, সেহেতু তিনি এ স্পর্শকাতর পরিস্থিতি আঁচ করতে পারেননি। আর সেই কারণেই তিনি হারূন ( আঃ )-এর প্রতি কঠোরতা প্রদর্শন করেছিলেন। কিন্তু ব্যাপারটি পরিষ্কার হওয়ার পর তিনি আসল অপরাধীর দিকে ফিরলেন। সুতরাং হারূন ( আঃ )-এর উক্তি, 'আসলে আমি আশঙ্কা করলাম যে, আপনি বলবেন, তুমি বানী ইস্রাঈলদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করেছ এবং তুমি আমার কথার অপেক্ষা করনি' থেকে এই দলীল নেওয়া ঠিক নয় যে, মুসলিমদের মাঝে একতা ও সংহতি বজায় রাখার স্বার্থে শিরকী কর্মকান্ড ও অন্যায়কে মেনে নেওয়া উচিত। ( যেমন কিছু লোক এ ধারণা রেখে থাকে। ) কারণ হারূন ( আঃ ) না এমন করেছিলেন, আর না তাঁর উক্তির উদ্দেশ্য এমন ছিল।
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
হারুন বললেন, ‘হে আমার সহোদর! আমার দাড়ি ও চুল ধরবে না [ ১ ]। আমি আশংকা করেছিলাম যে, তুমি বলবে, ‘আপনি বনী ইসরাঈলদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছেন ও আমার কথা শুনায় যত্নবান হননি।’ [ ১ ] হারুন 'আলাইহিস সালাম এই কঠোর ব্যবহার সত্ত্বেও শিষ্টাচারের প্রতি পুরোপুরি লক্ষ্য রেখে মূসা 'আলাইহিস সালাম-কে নরম করার জন্য 'হে আমার জননী-তনয়’ বলে সম্বোধন করলেন। এতে কঠোর ব্যবহার না করার প্রতি বিশেষ ইঙ্গিত ছিল। অর্থাৎ আমি তো তোমার ভ্ৰাতা বৈ শত্রু নাই। তাই আমার ওযর শুনে নাও। অতঃপর হারূন আলাইহিস সালাম এরূপ ওযর বর্ণনা করলেনঃ اِنَّ الْقَوْمَ اسْتَضْعَفُوْ نِىْ وَكَا دُوْايَقْتُلُوْ نَفِىْ [ আল-আ’রাফঃ ১৫০ ] অর্থাৎ বনী-ইসরাঈল আমাকে শক্তিহীন ও দুর্বল মনে করেছে। কেননা, অন্যদের মোকাবেলায় আমার সঙ্গীসাথী ছিল নগণ্য সংখ্যক। তাই তারা আমাকে হত্যা করতে উদ্যত হয়েছিল। এ সূরায় আরো বলা হয়েছে যে, হারূন 'আলাইহিস সালাম তাদেরকে গো-বৎস পূজা করতে নিষেধ করেছিলেন এবং বলেছিলেনঃ “ হে আমার কওম! তোমরা ফেৎনায় নিপতিত, অবশ্যই তোমাদের একমাত্র মা’বুদ হল রহমান । সুতরাং তোমরা আমার অনুসরণ কর এবং আমার কথা শোন।' কিন্তু তারা তার কথা শুনল না; বরং তাকে হত্যা করতে উদ্যত হল। অন্যত্র হারূন 'আলাইহিস সালাম তার ওযরগুলো বর্ণনা করে বলেনঃ আমি আশংকা করলাম যে, তোমার ফিরে আসার পূর্বে যদি আমি তাদের বিরুদ্ধে জিহাদে অবতীর্ণ হই। অথবা তাদেরকে ত্যাগ করে তোমার কাছে চলে যাই, তবে বনী-ইসরাঈলের মধ্যে বিভেদ দেখা দেবে। তুমি রওয়ানা হওয়ার সময় اخْلُفْنِىْ فِىْ قَوْمِىْ وَاَصْلِحْ [ সূরা আল-আ’রাফঃ ১৪২ ] -বলে আমাকে সংস্কারের নির্দেশ দিয়েছিলে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমি তাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হতে দেইনি। কারণ, এরূপ সম্ভাবনা ছিল যে, তুমি ফিরে এলে তারা সবাই সত্য উপলব্ধি করবে এবং ঈমান ও তাওহীদে ফিরে আসবে।
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
৯২-৯৪ নং আয়াতের তাফসীর: হযরত মূসা ( আঃ ) ভীষণ ক্রোধ ও ক্ষোভের অবস্থায় ফিরে এসেছিলেন। তাওরাত লিখিত ফলক তিনি মাটিতে নিক্ষেপ করেন এবং নিজের ভাই হারূণের ( আঃ ) দিকে কঠিন রাগান্বিত অবস্থায় এগিয়ে যান এবং তার মাথার চুল ধরে নিজের দিকে টানতে থাকেন। এর বিস্তারিত বিবরণ সূরায়ে আ’রাফের তাফসীরে গত হয়েছে। সেখানে এ হাদীসটিও বর্ণিত হয়েছে যে, শোনা খবর দেখার মত নয়। হযরত মূসা ( আঃ ) তাঁর ভাই ও স্থলাভিষিক্ত হযরত হারূণকে ( আঃ ) তিরস্কার করতে শুরু করেন যে, ঐ মূর্তি পূজা শুরু হবার সময়ই কেন তিনি তাকে খবর দেন নাই? তবে কি তিনি তাঁর আদেশ অমান্য করেছেন। তিনি তাকে আরো বলেনঃ “ আমি তো তোমাকে পরিষ্কার ভাবে বলে দিয়েছিলাম যে, তুমি আমার কওমের মধ্যে আমার । স্থলাভিষিক্তরূপে কাজ করবে, তাদেরকে সংশোধিত করবে এবং ফাসাদ ও বিশৃংখলা সৃষ্টিকারীদের কথা মোটেই মানবে না? হযরত হারূণ ( আঃ ) উত্তরে বলেনঃ “ হে আমার মায়ের পুত্র!" একথা তিনি এজন্যেই বলেছিলেন যাতে হযরত মূসার ( আঃ ) তাঁর উপর দয়া ও মমতা হয় । এটা নয় যে, তাদের পিতা আলাদা ছিলেন। তাদের উভয়েরই পিতাও একই এবং মাতাও একই। তারা ছিলেন একেবারে সহোদর ভাই। হযরত হারূণ ( আঃ ) ওজর পেশ করে বলেনঃ “ আমি এটা মনেও করেছিলাম যে, আপনার কাছে গিয়ে আপনাকে এ সংবাদ অবহিত করি । কিন্তু আবার চিন্তা করলাম যে, এদেরকে এভাবে ছেড়ে চলে যাওয়া উচিত হবে না। কেননা, এতে আপনি হয়তো অসন্তুষ্ট হতেন এবং বলতেনঃ “ কেন তুমি এদেরকে ছেড়ে গেলে? হযরত ইয়াকূবের ( আঃ ) সন্তানদের মধ্যে কেন তুমি বিচ্ছিন্নতা আনয়ন করলে? এবং যা আমি তোমাকে বলে গিয়েছিলাম কেন তুমি তা পালন কর নাই ।" প্রকৃত ব্যাপার এই যে, হযরত হারূণ ( আঃ ) ছিলেন হযরত মূসার ( আঃ ) অত্যন্ত অনুগত। তিনি হযরত মূসাকে ( আঃ ) অত্যন্ত সম্মান করতেন এবং তার মর্যাদার প্রতি বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতেন।
সূরা ত্বা-হা আয়াত 94 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- যারা ঈমান আনার পর অস্বীকার করেছে এবং অস্বীকৃতিতে বৃদ্ধি ঘটেছে, কস্মিণকালেও তাদের তওবা কবুল করা
- শপথ তাদের, যারা আত্মার বাঁধন খুলে দেয় মৃদুভাবে;
- এমনিভাবে আমি পাপীদেরকে একে অপরের সাথে যুক্ত করে দেব তাদের কাজকর্মের কারণে।
- পাঠ করুন, আপনার পালনকর্তা মহা দয়ালু,
- সে বলল, আমি এই ধন আমার নিজস্ব জ্ঞান-গরিমা দ্বারা প্রাপ্ত হয়েছি। সে কি জানে না
- আল্লাহ, যিনি উর্ধ্বদেশে স্থাপন করেছেন আকাশমন্ডলীকে স্তম্ভ ব্যতীত। তোমরা সেগুলো দেখ। অতঃপর তিনি আরশের উপর
- অতঃপর তা দ্বারা উদর পূর্ণ করবে,
- পৃথিবীতে যত বৃক্ষ আছে, সবই যদি কলম হয় এবং সমুদ্রের সাথেও সাত সমুদ্র যুক্ত হয়ে
- যার এ সামর্থ্য নেই, সে একে অপরকে স্পর্শ করার পূর্বে একাদিক্রমে দুই মাস রোযা রাখবে।
- তাদেরকে ছেড়ে দিন সেদিন পর্যন্ত, যেদিন তাদের উপর বজ্রাঘাত পতিত হবে।
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা ত্বা-হা ডাউনলোড করুন:
সূরা TaHa mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি TaHa শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers