কোরান সূরা আ'রাফ আয়াত 158 তাফসীর

  1. Mokhtasar
  2. Ahsanul Bayan
  3. AbuBakr Zakaria
  4. Ibn Kathir
Surah Araf ayat 158 Bangla tafsir - তাফসীর ইবনে কাসীর - Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান - Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স - বাংলা ভাষায় নোবেল কোরআনের অর্থের অনুবাদ উর্দু ভাষা ও ইংরেজি ভাষা & তাফসীর ইবনে কাসীর : সূরা আ'রাফ আয়াত 158 আরবি পাঠে(Araf).
  
   

﴿قُلْ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُمْ جَمِيعًا الَّذِي لَهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۖ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ يُحْيِي وَيُمِيتُ ۖ فَآمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ النَّبِيِّ الْأُمِّيِّ الَّذِي يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَكَلِمَاتِهِ وَاتَّبِعُوهُ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ﴾
[ الأعراف: 158]

বলে দাও, হে মানব মন্ডলী। তোমাদের সবার প্রতি আমি আল্লাহ প্রেরিত রসূল, সমগ্র আসমান ও যমীনে তার রাজত্ব। একমাত্র তাঁকে ছাড়া আর কারো উপাসনা নয়। তিনি জীবন ও মৃত্যু দান করেন। সুতরাং তোমরা সবাই বিশ্বাস স্থাপন করো আল্লাহর উপর তাঁর প্রেরিত উম্মী নবীর উপর, যিনি বিশ্বাস রাখেন আল্লাহর এবং তাঁর সমস্ত কালামের উপর। তাঁর অনুসরণ কর যাতে সরল পথপ্রাপ্ত হতে পার। [সূরা আ'রাফ: 158]

Surah Al-Araf in Bangla

জহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Araf ayat 158


বলো -- ''ওহে জনগণ! আমি নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌র রসূল তোমাদের সবার কাছে, -- মহাকাশমন্ডল ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্ব যাঁর সেইজনেরই, তিনি ছাড়া অন্য উপাস্য নেই, তিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান। সেজন্য আল্লাহ্‌তে বিশ্বাস করো ও তাঁর রসূলের প্রতি -- উম্মী নবী, যিনি ঈমান এনেছেন আল্লাহতে ও তাঁর বাণীসমূহে, আর তোমরাও তাঁর অনুসরণ করো যেন তোমরা সৎপথপ্রাপ্ত হতে পারো।’’


Tafsir Mokhtasar Bangla


১৫৮. হে রাসূল! আপনি বলে দিন: হে লোকসকল! নিশ্চয়ই আমি তোমাদের সকল আরব ও অনারবদের নিকট আল্লাহর প্রেরিত একজন রাসূল। আসমান ও জমিনের মালিকানা একমাত্র তাঁরই। তিনি ছাড়া সত্য কোন মা’বূদ নেই। তিনি মৃতকে জীবিত এবং জীবিতকে মৃত করেন। তাই তোমরা আল্লাহর উপর ঈমান আনো এবং তাঁর রাসূল মুহাম্মাদ ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) এর উপর ঈমান আনো। তিনি এমন এক নবী যিনি লিখতে ও পড়তে জানেন না। তিনি কেবল এমন এক ওহী নিয়ে এসেছেন যা তাঁর প্রতিপালক তাঁর উপরই নাযিল করেন। যিনি আল্লাহকে বিশ্বাস করেন এবং তাঁর উপর ও তাঁর পূর্বেকার নবীদের উপর নাযিলকৃত কিতাবসমূহ বিনা পার্থক্যে বিশ্বাস করেন। অতএব, তিনি যা তাঁর প্রতিপালকের পক্ষ থেকে নিয়ে এসেছেন তা তোমরা অনুসরণ করো। যাতে তোমরা নিজেদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে যা লাভজনক তার সন্ধান পেতে পারো।

Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান


বল, ‘হে মানুষ! আমি তোমাদের সকলের জন্য সেই আল্লাহ( প্রেরিত ) রসূল; যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্বের অধিকারী, তিনি ব্যতীত অন্য কোন ( সত্য ) উপাস্য নেই, তিনিই জীবিত করেন ও মৃত্যু ঘটান। সুতরাং আল্লাহর প্রতি ও তাঁর রসূল নিরক্ষর নবীর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর; যে আল্লাহ ও তাঁর বাণীতে বিশ্বাস করে, এবং তোমরা তার অনুসরণ কর, যাতে তোমরা পথ পাও।’ [১] [১] এই আয়াতও মুহাম্মাদ ( সাঃ )-এর রিসালাত সার্বজনীন রিসালাত প্রমাণিত হওয়ার জন্য স্পষ্ট। এতে মহান আল্লাহ নবী ( সাঃ )-কে আদেশ করেছেন, যেন তিনি ঘোষণা করে দেন যে, 'হে বিশ্বের মানুষ! আমি তোমাদের সকলের প্রতি রসূলরূপে প্রেরিত হয়েছি।' এভাবে তিনি বিশ্বের সকল মানব জাতির জন্য ত্রাণকর্তা ও রসূল। এখন পরিত্রাণ ও সুপথ না খ্রিষ্টধর্মে আছে, আর না ইয়াহুদী বা অন্য কোন ধর্মে। পরিত্রাণ ও সুপথ যদি থাকে, তাহলে কেবল ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করা ও তাকে নিজ দ্বীন বলে স্বীকার করার মাঝে আছে। এই আয়াতে এবং এর পূর্বের আয়াতেও নবী ( সাঃ )-কে নিরক্ষর বলা হয়েছে। এটি তাঁর একটি বিশেষ গুণ। যার অর্থ ( তিনি লিখাপড়া জানতেন না, তাঁর অক্ষরজ্ঞান ছিল না ) তিনি কোন গুরুর নিকট শিষ্যত্ব গ্রহণ করেননি। কোন শিক্ষকের নিকট হতে কোন শিক্ষাও তিনি অর্জন করেননি। তা সত্ত্বেও তিনি এমন এক কুরআন পেশ করলেন যে, তার অলৌকিকতা ও সাহিত্য-অলংকারের সামনে পৃথিবীর সকল সাহিত্যিক ও পন্ডিত তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে অক্ষম রয়ে গেল। আর তিনি যে শিক্ষা পেশ করলেন, যার সত্যতা ও যথার্থতা পৃথিবীর মানুষের কাছে স্বীকৃত। আর তা এ কথারই প্রমাণ যে, তিনি সত্যিই আল্লাহর রসূল। তাছাড়া একজন নিরক্ষর, না এ রকম গ্রন্থ পেশ করতে পারে, আর না এমন শিক্ষার বর্ণনা দিতে পারে, যা ন্যায় ও ইনসাফের এক সুন্দর নমুনা এবং বিশ্ব-মানবতার পরিত্রাণ ও সাফল্যের জন্য অপরিহার্য। এ শিক্ষা গ্রহণ বিনা পৃথিবীর মানুষ সত্যিকার সুখ-শান্তি পেতে পারে না।

Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স


বলুন, ‘হে মানুষ! নিশ্চয় আমি তোমাদের সবার প্রতি আল্লাহ্‌র রাসূল [], যিনি আসমানসমূহ ও যমীনের সার্বভৌমত্বের অধিকারী।তিনি ছাড়া কোন সত্য ইলাহ নেই; তিনি জীবিত করেন ও মৃত্যু ঘটান। কাজেই তোমারা ঈমান আন আল্লাহ্‌র প্রতি ও তাঁর রাসূল উম্মী নবীর প্রতি যিনি আল্লাহ ও তাঁর বাণীসমূহে ঈমান রাখেন। আর তোমারা তার অনুসরণ কর, যাতে তোমারা হিদায়াতপ্রাপ্ত হও।’ বিশতম রুকূ’ [] এ আয়াতে ইসলামের মূলনীতি সংক্রান্ত বিষয়গুলোর মধ্য থেকে রিসালাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক আলোচিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের রিসালাত সমগ্র দুনিয়ার সমস্ত জিন ও মানবজাতি তথা কেয়ামত পর্যন্ত আগত তাদের বংশধরদের জন্য ব্যাপক। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সাধারণভাবে ঘোষণা করে দেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, আপনি মানুষকে বলে দিনঃ “ আমি তোমাদের সবার প্রতি নবীরূপে প্রেরিত হয়েছি” আমার নবুওয়ত লাভ ও রিসালাতপ্রাপ্তি বিগত নবীগণের মত কোন বিশেষ জাতি কিংবা বিশেষ ভূখণ্ড অথবা কোন নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নয়; বরং সমগ্র বিশ্ব মানবের জন্য, বিশ্বের প্রতিটি অংশ, প্রতিটি দেশ ও রাষ্ট্র এবং বর্তমান ও ভবিষ্যত বংশধরদের জন্য কেয়ামতকাল পর্যন্ত তা পরিব্যাপ্ত। অন্য আয়াতেও এসেছে, “ আর আমরা তো আপনাকে কেবল সমগ্র মানবজাতির প্রতি সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি" [ সূরা সাবা: ২৮ ] অনুরূপভাবে সূরা আলে ইমরান: ২০; সূরা আল-আনআমঃ ৯০; সূরা হূদ; ১৭: সূরা ইউসুফ ১০৪; সূরা আল-আম্বিয়া: ১০৭; সূরা আল-ফুরকান: ১; সূরা ছোয়াদ: ৮৭; সূরা আল-কালাম: ৫২; সূরা আত-তাকওয়ীর: ২৭ । হাফেজ ইবনে কাসীর রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন যে, এ আয়াতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের খাতামুন্নাবিয়ীন বা শেষ নবী হওয়ার বিষয়ে ইঙ্গিত করা হয়েছে। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আবির্ভাব ও রিসালাত যখন কেয়ামত পর্যন্ত আগত সমস্ত বংশধরদের জন্য এবং সমগ্র বিশ্বের জন্য ব্যাপক, তখন আর অন্য কোন নতুন রাসূলের প্রয়োজনীয়তা অবশিষ্ট থাকেই না। [ ইবন কাসীর ] হাদীসে এসেছে, আবু বকর ও উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমার মধ্যে কোন এক বিষয়ে মতবিরোধ হয়। তাতে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু নারায হয়ে চলে যান। তা দেখে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুও তাকে মানাবার জন্য এগিয়ে যান। কিন্তু উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু কিছুতেই রাযী হলেন না। এমনকি নিজের ঘরে পৌঁছে দরজা বন্ধ করে দিলেন। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু ফিরে যেতে বাধ্য হন এবং রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে গিয়ে হাযির হন। এদিকে কিছুক্ষণ পরেই উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু নিজের এহেন আচরণের জন্য লজ্জিত হয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে গিয়ে উপস্থিত হয়ে নিজের ঘটনা বিবৃত করেন। আবুদ্দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ এতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসন্তুষ্ট হয়ে পড়েন। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন লক্ষ্য করলেন যে, উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর প্রতি ভর্ৎসনা করা হচ্ছে, তখন নিবেদন করলেনঃ হে আল্লাহর রাসূল, দোষ আমারই বেশী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমার একজন সহচরকে কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকাটাও কি তোমাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। তোমরা কি জান না যে, আল্লাহর অনুমতিক্রমে আমি যখন বললামঃ হে মানবমণ্ডলী, আমি তোমাদের সমস্ত লোকের জন্য আল্লাহ রাসূল। তখন তোমরা সবাই আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিলে। শুধু এই আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুই ছিলেন, যিনি সর্বপ্রথম আমাকে সত্য বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন। [ বুখারীঃ ৪৬৪০ ] অন্য বর্ণনায় এসেছে, তাবুক যুদ্ধের সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করছিলেন। সাহাবায়ে কেরামের ভয় হচ্ছিল যে, শক্ররা না এ অবস্থায় আক্রমণ করে বসে। তাই তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চারদিকে সমবেত হয়ে গেলেন। রাসূল সালাত শেষ করে বললেনঃ আজকের রাতে আমাকে এমন পাঁচটি বিষয় দান করা হয়েছে, যা আমার পূর্বে আর কোন নবী-রাসূলকে দেয়া হয়নি। তার একটি হল এই যে, আমার রিসালাত ও নবুওয়াতকে সমগ্র দুনিয়ার জাতিসমূহের জন্য ব্যাপক করা হয়েছে। আর আমার পূর্বে যত নবী-রাসূলই এসেছেন, তাদের দাওয়াত ও আবির্ভাব নিজ নিজ সম্প্রদায়ের সাথে সম্পৃক্ত ছিল। দ্বিতীয়তঃ আমাকে আমার শক্রর মোকাবেলায় এমন প্রভাব দান করা হয়েছে যাতে তারা যদি আমার কাছ থেকে এক মাসের দূরত্বেও থাকে, তবুও তাদের উপর আমার প্রভাব ছেয়ে যাবে। তৃতীয়তঃ কাফেরদের সাথে যুদ্ধে প্রাপ্ত মালে-গনীমত আমার জন্য হালাল করে দেয়া হয়েছে। অথচ পূর্ববতী উম্মতদের জন্য তা হালাল ছিল না। বরং এসব মালের ব্যবহার মহাপাপ বলে মনে করা হত। তাদের গনীমতের মাল ব্যয়ের একমাত্র স্থান ছিল এই যে, আকাশ থেকে বিদ্যুৎ এসে সে সমস্তকে জ্বালিয়ে ভষ্ম করে দিয়ে যাবে চতুর্থতঃ আমার জন্য সমগ্র ভূমণ্ডলকে মসজিদ করে দেয়া হয়েছে এবং পবিত্র করার উপকরণ বানিয়ে দেয়া হয়েছে, যাতে আমাদের সালাত যমীনের যে কোন অংশে, যে কোন জায়গায় শুদ্ধ হয়, কোন বিশেষ মসজিদে সীমাবদ্ধ না হয়। পক্ষান্তরে পূর্ববতী উম্মতদের ইবাদাত শুধু তাদের উপাসনালয়েই হত, অন্য কোথাও নয়। নিজেদের ঘরে কিংবা মাঠে-ময়দানে তাদের সালাত বা ইবাদাত হত না। তাছাড়া পানি ব্যবহারের যখন সামর্থ্য না থাকে, তা পানি না পাওয়ার জন্য হোক কিংবা কোন রোগ-শোকের কারণে, তখন মাটির দ্বারা তায়াম্মুম করে নেয়াই পবিত্রতা ও অযুর পরিবর্তে যথেষ্ট হয়ে যায়। পূর্ববতী উম্মতদের জন্য এ সুবিধা ছিল না। অতঃপর বললেনঃ আর পঞ্চমটি এই যে, আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর প্রত্যেক রাসূলকে একটি দোআ কবুল হওয়ার এমন নিশ্চয়তা দান করেছেন, যার কোন ব্যতিক্রম হতে পারে না। আর প্রত্যেক নবী-রাসূলই তাদের নিজ নিজ দো’আকে বিশেষ বিশেষ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে নিয়েছেন এবং সে উদ্দেশ্যও সিদ্ধ হয়েছে। আমাকে তাই বলা হল যে, আপনি কোন একটা দোআ করুন। আমি আমার দো’আকে আখেরাতের জন্য সংরক্ষিত করে রেখেছি। সে দো'আ তোমাদের জন্য এবং কেয়ামত পর্যন্ত ( لااله الّاالله ) 'আল্লাহ ছাড়া কোন হক মা’বুদ নেই কালেমার সাক্ষ্য দানকারী যেসব লোকের জন্ম হবে, তাদের কাজে লাগবে। [ মুসনাদে আহমাদঃ ২/২২২ ] আবু মূসা আশ’আরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে উদ্ধৃত বর্ণনায় আরো উল্লেখ রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে লোক আমার আবির্ভাব সম্পর্কে শুনবে, তা সে আমার উম্মতদের মধ্যে হোক কিংবা ইয়াহুদীনাসারা হোক, যদি সে আমার উপর ঈমান না আনে, তাহলে জাহান্নামে যাবে’। [ মুসনাদে আহমাদঃ ২/৩৫০ ] সারমর্ম এই যে, এ আয়াতের দ্বারা বর্তমান ও ভবিষ্যত বংশধরদের জন্য, প্রত্যেক দেশ ও ভূখণ্ডের অধিবাসীদের জন্য এবং প্রত্যেকটি জাতি ও সম্প্রদায়ের জন্য মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যাপকভাবে রাসূল হওয়া প্রমাণিত হয়েছে। সাথে সাথে একথাও সাব্যস্ত হয়ে গেছে যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আবির্ভাবের পর যে লোক তার প্রতি ঈমান আনবে না, সে লোক কোন সাবেক শরীআত ও কিতাবের কিংবা অন্য কোন ধর্ম ও মতের পরিপূর্ণ আনুগত্য একান্ত নিষ্ঠাপরায়ণভাবে করতে থাকা সত্বেও কষ্মিনকালেও মুক্তি পাবে না।

Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর


আল্লাহ তা'আলা স্বীয় নবী ( সঃ )-কে সম্বোধন করে বলছেনঃ হে নবী ( সঃ )! আরব, অনারব এবং দুনিয়া জাহানের লোকদেরকে বলে দাও, আমি সকলের জন্যে নবীরূপে প্রেরিত হয়েছি। এটা তার মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের দলীল যে, তার উপর নবুওয়াত শেষ হয়ে গেছে এবং তখন থেকে কিয়ামত পর্যন্ত তিনি সারা দুনিয়ার পয়গাম্বর। তাকে আরো বলতে বলা হচ্ছে-তুমি বলে দাও, আমার ও তোমাদের মধ্যে আল্লাহ সাক্ষী। তোমাদেরকে জ্ঞাত করাবার জন্যে আল্লাহ আমার উপর অহী নাযিল করেছেন। ইরশাদ হচ্ছে- ‘যে সম্প্রদায় নবীকে মানে না তার ঠিকানা হচ্ছে জাহান্নাম।' অন্য জায়গায় আল্লাহ পাক বলেনঃ “ যারা আহলে কিতাব এবং যারা আহলে কিতাব নয় তাদের সকলকে বলে দাও- তোমরা ইসলাম গ্রহণ করছো কি করছো না? যদি তারা ইসলাম গ্রহণ করে তবে হিদায়াত পেয়ে যাবে, অন্যথায় তোমার কাজ হচ্ছে শুধু পৌঁছিয়ে দেয়া ।” এই বিষয়ের এতো বেশী হাদীস বিদ্যমান রয়েছে যে, সেগুলো গণনা করা কঠিন।আর একথা তো সবাই জানে যে, নবী ( সঃ ) সারা দুনিয়ার জন্যে প্রেরিত হয়েছিলেন। ইমাম বুখারী ( রঃ ) এই আয়াতের তাফসীরে বলেন, হযরত আবু দারদা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত আবু বকর ( রাঃ ) হযরত উমার ( রাঃ )-এর মধ্যে কিছু বচসা হয়। আবু বকর ( রাঃ ) উমার ( রাঃ )-কে অসন্তুষ্ট করেন। উমার ( রাঃ ) দুঃখিত হয়ে ফিরে যান। হযরত আবু বকর ( রাঃ ) এটা অনুভব করেন। সুতরাং তিনি তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার জন্যে তাঁর পিছু পিছু গমন করেন। কিন্তু উমার ( রাঃ ) তাঁকে নিজ বাড়ীতে প্রবেশের অনুমতি না দিয়ে দরজা বন্ধ করে দেন। হযরত আবু বকর ( রাঃ ) তখন সরাসরি রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট গমন করেন। আবু দারদা ( রাঃ ) বলেন, আমিও সেই সময় তাঁর কাছে উপস্থিত ছিলাম। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) আমাকে বললেনঃ “ তোমাদের এই সঙ্গী আজ রাগান্তি রয়েছে । অতঃপর উমার ( রাঃ ) আবূ বকর ( রাঃ )-কে বাড়ীতে প্রবেশের অনুমতি না দেয়ার কারণে লজ্জিত হন। সুতরাং তিনিও নবী ( সঃ )-এর কাছে এসে হাজির হন। তিনি সালাম দিয়ে বসে পড়েন এবং তাঁর সামনে ঘটনাটি বর্ণনা করেন। আবু দারদা ( রাঃ ) বলেন, এতে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) হযরত উমার ( রাঃ )-এর প্রতি রাগান্বিত হন। আর এদিকে হযরত আবু বকর ( রাঃ ) বলতে থাকেনঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আল্লাহর কসম! বাড়াবাড়ি আমার পক্ষ থেকেই হয়েছিল । কিন্তু রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বললেনঃ তোমরা কি আমার বন্ধু ও সঙ্গীকে ( আবূ বরক রাঃ কে ) ছেড়ে দিতে চাও? আমি বলেছিলাম, হে লোক সকল! আমি তোমাদের সকলের নিকট রাসূলরূপে প্রেরিত হয়েছি! তখন তোমরা আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিলে। অথচ আবু বকর ( রাঃ ) বলেছিল, আপনি সত্য কথাই বলছেন।রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তাবুকের যুদ্ধে একদা রাত্রে তাহাজ্জুদের নামাযের উদ্দেশ্যে গাত্রোত্থান করেন। তখন তার কয়েকজন সাহাবী তাঁর হিফাজত ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজে লেগে পড়েন। নামায শেষে তিনি তাঁদের মনঃসংযোগ করে বলেনঃ “ আজ রাত্রে পাঁচটি জিনিস আমাকে বিশিষ্টভাবে দেয়া হয়েছে । ইতিপূর্বে এই বিশেষত্ব অন্য কোন নবীকে দেয়া হয়নি । ( ১ ) আমি সারা জাহানের লোকদের কাছে নবীরূপে প্রেরিত হয়েছি। আমার পূর্বে প্রত্যেক নবীকে তার নিজের কওমের কাছেই পাঠানো হয়েছিল। ( ২ ) আমি শুধু প্রভাব ও ভক্তি প্রযুক্ত ভীতির মাধ্যমেই শত্রুর উপর সাহায্য লাভ করে থাকি, যদিও তার ও আমার মধ্যে এক মাসের পথের ব্যবধান হয়। ( ৩ ) যুদ্ধলব্ধ মাল আমার জন্যে ও আমার উম্মতের জন্যে হালাল করা হয়েছে। অথচ আমার পূর্বে আর কারো জন্যে যুদ্ধলব্ধ মাল হালাল ছিল না। সমস্ত যমীনই আমার জন্যে পবিত্র ও সিজদার স্থান। ( ৫ ) আমাকে শাফাআতের অধিকার দেয়া হয়েছে। আমি এটা কিয়ামতের দিনের জন্যে আমার উম্মতের উদ্দেশ্যে উঠিয়ে রেখেছি। এই শাফাআতের সেই দিন প্রত্যেক ঐ ব্যক্তির জন্যে হবে যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অন্য কাউকেও শরীক করবে না।” ( এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ ) হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) হতে বর্ণনা করেছেন)হযরত আবু হুরাইরা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে তাঁর শপথ! এই উম্মতের মধ্য হতে কোন ইয়াহূদী অথবা খ্ৰীষ্টান আমার কথা শুনলো, অথচ আমি যা নিয়ে প্রেরিত হয়েছি । তার উপর ঈমান না এনেই মারা গেল, নিঃসন্দেহে সে জাহান্নামী। ( ইমাম আহমাদ (রঃ ) স্বীয় মুসনাদে ও ইমাম মুসলিম ( রঃ ) স্বীয় সহীহ গ্রন্থে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। এ হাদীসের শব্দগুলো ইমাম আহমাদেরই ( রঃ ) বটে)আল্লাহ তাআলার উক্তিঃ “ তিনিই আকাশ ও পৃথিবীর সার্বভৌম একচ্ছত্র মালিক, তিনি ছাড়া আর কোন মা'বূদ নেই, তিনিই জীবিত করেন এবং তিনিই মৃত্যু ঘটিয়ে থাকেন । তাই নির্দেশ হচ্ছে- তোমরা আল্লাহর প্রতি ও তাঁর সেই বার্তাবাহক নিরক্ষর নবী ( সঃ )-এর প্রতি ঈমান আনয়ন কর। আল্লাহ পাক খবর দিচ্ছেন- মুহাম্মাদ ( সঃ ) আল্লাহর রাসূল। তাঁকে তোমাদের নিকট পাঠানো হয়েছে। তোমরা তাঁর অনুসরণ কর । তার উপর ঈমান আন। তোমাদের কাছে এরই ওয়াদা নেয়া হয়েছিল। পূর্ববর্তী কিবাতগুলোতে এরই শুভ সংবাদ রয়েছে। ঐ কিতাবগুলোতে নবী উম্মী' এই শব্দ দ্বারাই তার প্রশংসা হয়েছে।ইরশাদ হচ্ছে- যে ( রাসূল সঃ ) আল্লাহতে ও তাঁর কালামে বিশ্বাস স্থাপন করে থাকে, তোমরা তারই অনুসরণ কর, আশা করা যায় তোমরা সরল সঠিক পথের সন্ধান পাবে।

সূরা আ'রাফ আয়াত 158 সূরা

قل ياأيها الناس إني رسول الله إليكم جميعا الذي له ملك السموات والأرض لا إله إلا هو يحيي ويميت فآمنوا بالله ورسوله النبي الأمي الذي يؤمن بالله وكلماته واتبعوه لعلكم تهتدون

سورة: الأعراف - آية: ( 158 )  - جزء: ( 9 )  -  صفحة: ( 170 )


English Türkçe Indonesia
Русский Français فارسی
تفسير Urdu اعراب

বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত

  1. বল, আচ্ছা নিজেই লক্ষ্য করে দেখ, যা কিছু আল্লাহ তোমাদের জন্য রিযিক হিসাবে অবতীর্ণ করেছেন,
  2. গৃহে অবস্থানকারী মরুবাসীদেরকে বলে দিনঃ আগামীতে তোমরা এক প্রবল পরাক্রান্ত জাতির সাথে যুদ্ধ করতে আহুত
  3. এবং অপবিত্রতা থেকে দূরে থাকুন।
  4. আমি তাঁকে তোমাদের জন্যে বর্ম নির্মান শিক্ষা দিয়েছিলাম, যাতে তা যুদ্ধে তোমাদেরকে রক্ষা করে। অতএব
  5. আমার সহায় তো হলেন আল্লাহ, যিনি কিতাব অবতীর্ণ করেছেন। বস্তুত; তিনিই সাহায্য করেন সৎকর্মশীল বান্দাদের।
  6. এক্ষেত্রে বহু বাহিনীর মধ্যে ওদেরও এক বাহিনী আছে, যা পরাজিত হবে।
  7. না তাদের আল্লাহ তা’আলা ব্যতীত কোন উপাস্য আছে? তারা যাকে শরীক করে, আল্লাহ তা’আলা তা
  8. ইউসুফ এ প্রসঙগ ছাড়! আর হে নারী, এ পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর নিঃসন্দেহে তুমি-ই
  9. আমরা কি অহেতুক তাদেরকে ঠাট্টার পাত্র করে নিয়েছিলাম, না আমাদের দৃষ্টি ভুল করছে?
  10. যদি তোমরা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দান কর, তিনি তোমাদের জন্যে তা দ্বিগুণ করে দেবেন এবং

বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :

সুরত আল বাক্বারাহ্ আলে ইমরান সুরত আন-নিসা
সুরত আল-মায়েদাহ্ সুরত ইউসুফ সুরত ইব্রাহীম
সুরত আল-হিজর সুরত আল-কাহফ সুরত মারইয়াম
সুরত আল-হাজ্জ সুরত আল-ক্বাসাস আল-‘আনকাবূত
সুরত আস-সাজদা সুরত ইয়াসীন সুরত আদ-দুখান
সুরত আল-ফাতহ সুরত আল-হুজুরাত সুরত ক্বাফ
সুরত আন-নাজম সুরত আর-রাহমান সুরত আল-ওয়াক্বি‘আহ
সুরত আল-হাশর সুরত আল-মুলক সুরত আল-হাক্কাহ্
সুরত আল-ইনশিক্বাক সুরত আল-আ‘লা সুরত আল-গাশিয়াহ্

সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা আ'রাফ ডাউনলোড করুন:

সূরা Araf mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Araf শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
সুরত আ'রাফ  ভয়েস আহমেদ আল-আজমি
আহমেদ আল-আজমি
সুরত আ'রাফ  ভয়েস ইব্রাহীম আল-আখদার
ইব্রাহীম আল-আখদার
সুরত আ'রাফ  ভয়েস বান্দার বেলাইলা
বান্দার বেলাইলা
সুরত আ'রাফ  ভয়েস খালিদ গালিলি
খালিদ গালিলি
সুরত আ'রাফ  ভয়েস হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
সুরত আ'রাফ  ভয়েস খলিফা আল টুনাইজি
খলিফা আল টুনাইজি
সুরত আ'রাফ  ভয়েস সাদ আল-গামদি
সাদ আল-গামদি
সুরত আ'রাফ  ভয়েস সৌদ আল-শুরাইম
সৌদ আল-শুরাইম
সুরত আ'রাফ  ভয়েস সালাহ আবু খাতর
সালাহ বুখাতীর
সুরত আ'রাফ  ভয়েস আবদুল বাসিত আব্দুল সামাদ
আবদ এল বাসেট
সুরত আ'রাফ  ভয়েস আবদুল রশিদ সুফি
আবদুল রশিদ সুফি
সুরত আ'রাফ  ভয়েস আব্দুল্লাহ্ বাস্‌ফার
আব্দুল্লাহ্ বাস্‌ফার
সুরত আ'রাফ  ভয়েস আবদুল্লাহ আওওয়াদ আল-জুহানী
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
সুরত আ'রাফ  ভয়েস আলী আল-হুদায়েফি
আলী আল-হুদায়েফি
সুরত আ'রাফ  ভয়েস আলী জাবের
আলী জাবের
সুরত আ'রাফ  ভয়েস ফারেস আব্বাদ
ফারেস আব্বাদ
সুরত আ'রাফ  ভয়েস মাহের আলমাইকুলই
মাহের আলমাইকুলই
সুরত আ'রাফ  ভয়েস মোহাম্মদ আইয়ুব
মোহাম্মদ আইয়ুব
সুরত আ'রাফ  ভয়েস মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
সুরত আ'রাফ  ভয়েস মুহাম্মাদ জিব্রীল
মুহাম্মাদ জিব্রীল
সুরত আ'রাফ  ভয়েস মুহাম্মদ সিদ্দিক আল মিনশাবি
আল-মিনশাবি
সুরত আ'রাফ  ভয়েস আল হোসারি
আল হোসারি
সুরত আ'রাফ  ভয়েস আল-আফসী
মিশারী আল-আফসী
সুরত আ'রাফ  ভয়েস নাসের আল কাতামি
নাসের আল কাতামি
সুরত আ'রাফ  ভয়েস ইয়াসের আল-দোসারি
ইয়াসের আল-দোসারি


Wednesday, December 18, 2024

Please remember us in your sincere prayers