কোরান সূরা বাকারাহ্ আয়াত 177 তাফসীর
﴿۞ لَّيْسَ الْبِرَّ أَن تُوَلُّوا وُجُوهَكُمْ قِبَلَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ وَلَٰكِنَّ الْبِرَّ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالْكِتَابِ وَالنَّبِيِّينَ وَآتَى الْمَالَ عَلَىٰ حُبِّهِ ذَوِي الْقُرْبَىٰ وَالْيَتَامَىٰ وَالْمَسَاكِينَ وَابْنَ السَّبِيلِ وَالسَّائِلِينَ وَفِي الرِّقَابِ وَأَقَامَ الصَّلَاةَ وَآتَى الزَّكَاةَ وَالْمُوفُونَ بِعَهْدِهِمْ إِذَا عَاهَدُوا ۖ وَالصَّابِرِينَ فِي الْبَأْسَاءِ وَالضَّرَّاءِ وَحِينَ الْبَأْسِ ۗ أُولَٰئِكَ الَّذِينَ صَدَقُوا ۖ وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُتَّقُونَ﴾
[ البقرة: 177]
সৎকর্ম শুধু এই নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিমদিকে মুখ করবে, বরং বড় সৎকাজ হল এই যে, ঈমান আনবে আল্লাহর উপর কিয়ামত দিবসের উপর, ফেরেশতাদের উপর এবং সমস্ত নবী-রসূলগণের উপর, আর সম্পদ ব্যয় করবে তাঁরই মহব্বতে আত্নীয়-স্বজন, এতীম-মিসকীন, মুসাফির-ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্যে। আর যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দান করে এবং যারা কৃত প্রতিজ্ঞা সম্পাদনকারী এবং অভাবে, রোগে-শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্য্য ধারণকারী তারাই হল সত্যাশ্রয়ী, আর তারাই পরহেযগার। [সূরা বাকারাহ্: 177]
Surah Al-Baqarah in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Baqarah ayat 177
ধার্মিকতা তাতে নয় যে তোমাদের মুখ পূব বা পশ্চিম দিকে ফেরাও, তবে ধর্মনিষ্ঠা হচ্ছে যে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে, আর আখেরাতের দিনের প্রতি, আর ফিরিশ্তাদের প্রতি, আর গ্রন্থখানিতে, আর নবীদের প্রতি; আর যে তাঁর প্রতি মহব্বত বশতঃ ধন দান করে আত্মীয়-স্বজনদের, আর এতীমদের, আর মিসকিনদের, আর পথচারীদের, আর ভিখারীদের, আর দাসদের মুক্তিপণ বাবদ, আর যে নামায কায়েম করে ও যাকাত আদায় করেচ আর যারা প্রতিজ্ঞা করার পরে তাদের ওয়াদা রক্ষা করে, আর অভাব-অনটনে ও আপৎকালে ও আতঙ্কের সময়ে ধৈর্যশীলদের। এরাই তারা যারা সত্যনিষ্ঠ, আর এরা নিজেরাই ধর্মপরায়ণ।
Tafsir Mokhtasar Bangla
১৭৭. আল্লাহর নিকট পছন্দনীয় কল্যাণকর কাজ শুধু পূর্ব বা পশ্চিম দিকে চেহারা ফিরানো বা তা পরিবর্তন নয়। বরং কারো জন্য সর্বাধিক কল্যাণকর কাজ হলো এই যে, সে এক আল্লাহর উপর এবং কিয়ামত দিবস, সকল ফিরিশতা, সকল নাযিলকৃত কিতাব ও সকল নবীদের উপর বিশ্বাস স্থাপন করবে। তাঁদের মাঝে কোন ধরনের ভিন্নতা সৃষ্টি করবে না। তেমনিভাবে সে আল্লাহর ভালোবাসায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আত্মীয়-স্বজন, ছোট কালে বাপ মরা ইয়াতীম, গরীব, নিজ পরিবার ও দেশ থেকে অনেক দূরে তথা সফরে থাকা ব্যক্তি - যে প্রয়োজনের খাতিরে অন্যের নিকট হাত পাততে বাধ্য - এমন ব্যক্তিদের জন্য নিজ সম্পদ খরচ করে। আর যারা মানুষদেরকে অন্যের গালামী ও বন্দীদশা থেকে মুক্তি দেয়ার জন্য নিজ সম্পদ ব্যয় করে, আল্লাহর নির্দেশ মাফিক পরিপূর্ণভাবে নামায ও ধার্যকৃত যাকাত আদায় করে, অঙ্গীকার করে তা পূর্ণ করে এবং যারা দুঃখ-কষ্ট, দারিদ্র ও রোগ-ব্যাধির ব্যাপারে ধৈর্য ধারণ করে। উপরন্তু কঠিন যুদ্ধের সময় ধৈর্য ধারণ করে; পালিয়ে যায় না। বস্তুতঃ তারাই নিজেদের কর্ম ও ঈমানে আল্লাহর সাথে সত্যবাদী এবং তারাই আল্লাহর আদেশ ও নিষেধ মানার ক্ষেত্রে ধর্মভীরু-মুত্তাকী।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
পূর্ব এবং পশ্চিম দিকে তোমাদের মুখ ফেরানোতে পুণ্য নেই;[১] কিন্তু পুণ্য আছে আল্লাহ, পরকাল, ফিরিশতাগণ, সমস্ত কিতাব এবং নবীগণকে বিশ্বাস করলে এবং অর্থের প্রতি আসক্তি থাকা সত্ত্বেও আত্মীয়-স্বজন, পিতৃহীন, অভাবগ্রস্ত, ( এতীম-মিসকীন ) মুসাফির, সাহায্যপ্রার্থী ( ভিক্ষুক )গণকে এবং দাস মুক্তির জন্য দান করলে, নামায যথাযথভাবে পড়লে ও যাকাত প্রদান করলে, প্রতিশ্রুতি পালন করলে এবং দুঃখ-দৈন্য, রোগ-বালা ও যুদ্ধের সময় ধৈর্যধারণ করলে। এরাই তারা, যারা সত্যপরায়ণ এবং ধর্মভীরু। [১] এই আয়াত ক্বিবলা সংক্রান্ত ব্যাপারেই নাযিল হয়েছে। একদিকে ইয়াহুদীরা নিজেদের ক্বিবলার ( বায়তুল মুক্বাদ্দাসের পশ্চিম দিক ) এবং খ্রিষ্টানরা তাদের ক্বিবলার ( বায়তুল মুক্বাদ্দাসের পূর্ব দিক )-কে বড়ই গুরুত্ব দিচ্ছিল এবং এ নিয়ে গর্বও করছিল, অন্য দিকে মুসলিমদের ক্বিবলার পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে তারা বিভিন্ন রকমের মন্তব্য করছিল। যার কারণে কোন কোন মুসলিমও অনেক সময় আন্তরিক দুঃখবোধ করত। তাই মহান আল্লাহ বললেন, আসলে পশ্চিম ও পূর্বের দিকে মুখ করাটাই স্বয়ং কোন নেকীর কাজ নয়, বরং এটা তো কেবল এককেন্দ্রীভূত ও ঐক্যবদ্ধ করণের একটি পদ্ধতি মাত্র। প্রকৃত নেকী হল, আকীদা সম্পর্কীয় সেই সব জিনিসের উপর ঈমান আনা, যা আল্লাহ বর্ণনা করেছেন এবং সেই সব আমল ও নৈতিকতার প্রতি যত্ন নেওয়া, যার তিনি তাকীদ করেছেন। এর পরবর্তীতে সেই আকীদা ও আমলগুলো বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহর উপর ঈমান ( বিশ্বাস ) হল এই যে, তাঁকে তাঁর সত্তা, উপাস্যত্ব ও গুণাবলীতে একক মনে করা, সমস্ত দোষ-ত্রুটি থেকে তাঁকে পাক-পবিত্র মনে করা এবং কুরআন ও হাদীসে উল্লিখিত তাঁর যাবতীয় গুণাবলীর কোন অপব্যাখ্যা না করে বা তার কোন কিছুকে নিষ্ক্রিয়য় না মনে করে এবং তার কোন ধরন-গঠন নির্ণয় না করে তা মেনে নেওয়া। শেষ বিচার দিবস, পুনরুত্থান এবং জান্নাত ও জাহান্নামকে বিশ্বাস করা। 'কিতাব' বলতে সমস্ত আসমানী কিতাবের সত্যতার উপর ঈমান আনা। ফিরিশতাদের অস্তিত্ব ও সকল নবীদের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা। এই বিশ্বাসসমূহের সাথে সাথে আয়াতে উল্লিখিত আমলগুলোর প্রতিও যত্ন নিতে হবে। عَلَى حُبِّهِ এর ( ه ) সর্বনাম মালের দিকে ইঙ্গিত করছে। অর্থাৎ, মালের প্রতি ভালবাসা বা আসক্তি থাকা সত্ত্বেও তা ব্যয় করা। البَاْسَاءِ থেকে দারিদ্র্য এবং অতীব অভাব الضَرَّآءِ থেকে ক্ষতি ও রোগ এবং الْبَاْسِ থেকে যুদ্ধ ও তার কঠিনতাকে বুঝানো হয়েছে। এই তিনটি অবস্থায় ধৈর্য ধরা। অর্থাৎ, আল্লাহর বিধানাদি থেকে বিমুখ না হওয়া বড় কঠিন কাজ, তাই এই তিনটি অবস্থাকে বিশেষ করে বর্ণনা করা হয়েছে।
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
পূর্ব ও পশ্চিম দিকে [ ১ ] তোমাদের মুখ ফিরানোই সৎকর্ম নয়, কিন্তু সৎকর্ম হলো যে ব্যক্তি আল্লাহ্, শেষ দিবস, ফেরেশ্তাগণ, কিতাবসমূহ ও নবীগণের প্রতি ঈমান [ ২ ] আনবে। আর সম্পদ দান করবে তার [ ৩ ] ভালবাসায় [ ৪ ] আত্মীয়-স্বজন [ ৫ ], ইয়াতীম, অভাবগ্রস্ত, মুসাফির, সাহায্যপ্রার্থী ও দাসমুক্তির জন্য এবং সালাত প্রতিষ্ঠা করবে, যাকাত দিবে, প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা পূর্ণ করবে [ ৬ ], অর্থ-সংকটে, দুঃখ-কষ্টে ও সংগ্রাম-সংকটে ধৈর্য ধারণ করবে [ ৭ ]। তারাই সত্যাশ্রয়ী এবং তারাই মুত্তাকী।
[ ১ ] কাতাদাহ ও আবুল আলীয়াহ বলেন, ইয়াহুদীরা ইবাদাতের সময় পশ্চিম দিকে আর নাসারারা পূর্ব দিকে মুখ করে থাকে। [ আত-তাফসীরুস সহীহ ]
আল্লাহ্ তাআলা তাদের কর্মকাণ্ডের সমালোচনায় বলেন, সালাতে পূর্বদিকে মুখ করে দাঁড়াতে হবে কি পশ্চিমদিকে, এ বিষয় নির্ধারণকেই যেন তোমরা দ্বীনের একমাত্র লক্ষ্য স্থির করে নিয়েছ এবং এ ব্যাপারটিকে কেন্দ্র করেই তোমাদের যাবতীয় আলোচনা-সমালোচনা আবর্তিত হতে শুরু করেছে। মনে হয়, তোমাদের ধারণায় শরীআতের অন্য কোন হুকুম-আহকামই যেন আর নেই।
[ ২ ] অন্য অর্থে এ আয়াতের লক্ষ্য মুসলিম, ইয়াহুদী, নাসারা নির্বিশেষে সবাই হতে পারে। এমতাবস্থায় আয়াতের অর্থ দাঁড়াবে এই যে, প্রকৃত পুণ্য বা সওয়াব আল্লাহ্ তা'আলার আনুগত্যের ভেতরই নিহিত । যেদিকে মুখ করে তিনি সালাতে দাঁড়াতে নির্দেশ দেন, সেটাই শুদ্ধ ও পুণ্যের কাজে পরিণত হয়ে যায়। অন্যথায়, দিক হিসাবে পূর্ব-পশ্চিম, উত্তর-দক্ষিণের কোনই বৈশিষ্ট্য নেই। দিকবিশেষের সাথে কোন পুণ্যও সংশ্লিষ্ট নয়। পুণ্য একান্তভাবে আল্লাহ্র প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের সাথেই সম্পৃক্ত। তাই আল্লাহ্ তা'আলা যতদিন বায়তুল-মুকাদ্দাসের প্রতি মুখ করে সালাত আদায় করতে নির্দেশ দিয়েছেন, ততদিন সেদিকে মুখ করাই ছিল পুণ্য। আবার যখন মসজিদুল হারামের দিকে মুখ করে দাঁড়ানোর হুকুম হয়েছে, এখন এ হুকুমের আনুগত্য করাই পুণ্যে পরিণত হয়েছে। [ মাআরিফুল কুরআন ]
[ ৩ ] এখানে দুটি অর্থ হতে পারে, এক.
আল্লাহ্র ভালবাসায় উপরোক্ত খাতে সম্পদ ব্যয় করা। দুই.
সম্পদের প্রতি নিজের অতিশয় আসক্তি ও ভালাবাসা থাকা সত্বেও সে উপরোক্ত খাতসমূহে সম্পদ ব্যয় করা। উভয় অর্থই এখানে উদ্দেশ্য হতে পারে। তবে শেষোক্ত মতটিকেই অনেকে প্রাধান্য দিয়েছেন। [ তাফসীরে বাগভী ] এ মতের সপক্ষে বিভিন্ন হাদীসে সম্পদের আসক্তি সত্বেও তা ব্যয় করার ফযীলত বর্ণনা করা হয়েছে। এক হাদীসে এসেছে, এক লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সব চেয়ে বেশী সওয়াবের সাদাকাহ কোনটি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “ তুমি সুস্থ ও আসক্তিপূর্ণ অবস্থায়, দরিদ্র হয়ে যাওয়ার ভয়, ধনী হওয়ার আকাংখা থাকা সত্বেও সাদাকাহ করা” । [ বুখারী: ১৪১৯, মুসলিম: ১০৩২ ]
[ ৪ ] এ আয়াতের বর্ণনাভঙ্গির দ্বারাই এ তথ্যও সাব্যস্ত হয়ে যায় যে, ধন-সম্পদের ফরয শুধুমাত্র যাকাত প্রদানের মাধ্যমেই পূর্ণ হয় না, যাকাত ছাড়া আরও বহু ক্ষেত্রে সম্পদ ব্যয় করা ফরয ও ওয়াজিব হয়ে থাকে। যেমন, রুযী-রোযগারে অক্ষম আত্মীয়-স্বজনের ব্যয়ভার বহন করা ওয়াজিব হয়ে যায়। কারো সামনে যদি কোন দরিদ্র ব্যক্তির জীবন বিপন্ন হয়, তবে যাকাত প্রদান করার পরেও সে দরিদ্রের জীবন রক্ষার্থে অর্থ-সম্পদ ব্যয় করা ফরয হয়ে পড়ে। অনুরূপ যেসব স্থানে প্রয়োজন রয়েছে, সেখানে মসজিদ তৈরী করা এবং দ্বানীশিক্ষার জন্য মক্তব-মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করাও আর্থিক ফরযের অন্তর্গত। পার্থক্য শুধু এতটুকু যে, যাকাতের একটা বিশেষ বিধান রয়েছে, সে বিধান অনুযায়ী যে কোন অবস্থায় যাকাত প্রদান করতে হবে, কিন্তু অন্যান্য খরচের ফরয হওয়ার বেলায় প্রয়োজন দেখা দেয়া শর্ত। [ মাআরিফুল কুরআন ]
[ ৫ ] হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “ সবচেয়ে উত্তম সদকাহ হচ্ছে সেটি যা এমন আত্মীয় স্বজনের জন্য করা হয় যারা তোমার থেকে বিমুখ হয়ে আছে” । [ মুসনাদে আহমাদ:৩/৪০২, সহীহ ইবনে খুযাইমাহ: ৪/৭৮ ]
অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “ মিসকীনের উপর সদকাহ করলে সেটি সদকাহ হিসেবে বিবেচিত হবে । পক্ষান্তরে যদি আত্মীয়-স্বজনের উপর সদকাহ করা হয় তবে তা হবে, আত্মীয়-স্বজনের সাথে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা ও সদকাহ। [ মুসনাদে আহমাদ: ৪/১৮ ]
[ ৬ ] অর্থাৎ মুমিন ব্যক্তির মধ্যে ওয়াদা-অঙ্গীকার পূর্ণ করার অভ্যাস সব সময়ের জন্য থাকতে হবে, ঘটনাচক্রে কখনো কখনো অঙ্গীকার পূরণ করলে চলবে না। কেননা, এরূপ মাঝে-মধ্যে কাফের-গোনাহগাররাও ওয়াদা-অঙ্গীকার পূরণ করে থাকে। সুতরাং এটা ধর্তব্যের মধ্যে আসবে না। তেমনিভাবে মু’আমালাতের বর্ণনায় শুধুমাত্র অঙ্গীকার পূরণ করার কথাই উল্লেখ করা হয়েছে। একটু চিন্তা করলেই দেখা যায় যে, ক্রয়-বিক্রয়, অংশীদারিত্ব, ভাড়া-ইজারা প্রভৃতি বৈষয়িক দিকসমূহের সুষ্ঠতা ও পবিত্রতাই অঙ্গীকার পূরণের উপর নির্ভরশীল।
( ৭ ) আখলাক বা মন-মানসিকতার সুস্থতা বিধান সম্পর্কিত বিধি-বিধানের আলোচনায় একমাত্র ‘সবর’-এর উল্লেখ করা হয়েছে। কেননা, ‘সবর’-এর অর্থ হচ্ছে মন-মানসিকতা তথা নফসকে বশীভূত করে অন্যায়-অনাচার থেকে সর্বোতভাবে সুরক্ষিত রাখা। একটু চিন্তা করলেই বুঝা যাবে যে, মানুষের হৃদয়বৃত্তিসহ আভ্যন্তরীণ যত আমল রয়েছে, সবরই সেসবের প্রাণস্বরূপ। এরই মাধ্যমে সর্বপ্রকার অন্যায় ও কদাচার থেকে মুক্তি পাওয়া সহজ হয়।
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
এই পবিত্র আয়াতে খাটি বিশ্বাস এবং সরল সঠিক পথের শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। হযরত আবু যার ( রাঃ ) যখন রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে জিজ্ঞেস করেন, ঈমান কি জিনিস?' তখন রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) এই আয়াতটি পাঠ করেন। তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করেন। তিনি পুনরায় এই আয়াতটি পাঠ করেন। তিনি আবার প্রশ্ন করেন। তখন রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেনঃ পুণ্যের প্রতি ভালবাসা এবং পাপের সাথে শত্রুতার নাম হচ্ছে ঈমান ( মুসনাদ-ই-ইবনে আবি হাতীম )। কিন্তু এই বর্ণনাটির সনদ মুনকাতা'। মুজাহিদ ( রঃ ) এই হাদীসটি হযরত আবু যার ( রাঃ ) হতে বর্ণনা করেছেন। অথচ হযরত আবু যার ( রাঃ )-এর সঙ্গে তাঁর সাক্ষাত সাব্যস্ত হয় না।এক ব্যক্তি হযরত আবূ যার ( রাঃ ) কে প্রশ্ন করেঃ ঈমান কি?' তখন তিনি এই আয়াটি পাঠ করেন। লোকটি বলেঃ জনাব! আমি আপনাকে মঙ্গল সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করিনি, বরং আমার প্রশ্ন ঈমান সম্বন্ধে।' হযরত আবু যার ( রাঃ ) তখন বলেন, 'এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে এ প্রশ্নই করেছিল। তিনি এই আয়াতটিই পাঠ করেছিলেন, ঐ লোকটিও তখন তোমার মতই অসন্তুষ্ট হয়েছিল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছিলেনঃ মু'মিন যখন সৎ কাজ করে তখন তার প্রাণ খুশি হয় এবং সে পুণ্যের আশা করে আর যখন পাপ করে তখন তার অন্তর চিন্তিত হয় এবং সে শাস্তিকে ভয় করতে থাকে {তাফসীর -ই-ইবনে মিরদুওয়াই)। এ হাদীসটিও মুনকাতা। মু'মিনদেরকে প্রথমে বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ করে নামায পড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। পরে তাদেরকে কাবা শরীফের দিকে ফিরিয়ে দেয়া হয়। এটা কিতাবীদের উপর এবং কতকগুলো মু'মিনের উপর কঠিন ঠেকে। সুতরাং মহান আল্লাহ এর নিপুণতা বর্ণনা করেন যে, আল্লাহর নির্দেশ মেনে নেয়াই হচ্ছে মূল উদ্দেশ্য। তিনি তাঁর বান্দাদেরকে যে দিকে মুখ করার নির্দেশ দেবেন সেদিকেই তাদেরকে মুখ করতে হবে। প্রকৃত ধর্মভীরুতা, প্রকৃত পুণ্য এবং পূর্ণ ঈমান এটাই যে, দাস তার মনিবের সমুদয় আদেশ ও নিষেধ শিরোধার্য করে নেবে। যদি কেউ পূর্ব দিকে মুখ করে অথবা পশ্চিম দিকে ফিরে যায় এবং শুটা আল্লাহ তাআলার নির্দেশ ক্রমে না হয় তবে এর ফলে সে মুমিন হবে না। বরং প্রকৃতপক্ষে ঈমানদার ঐ ব্যক্তি যার মধ্যে এই আয়াতে বর্ণিত গুণাবলী বিদ্যমান রয়েছে। কুরআন মাজীদের মধ্যে এক জায়গায় আছেঃ ( আরবি )অর্থাৎ তোমাদের কোরবানীর গোশত ও রক্ত আল্লাহর নিকট পৌছে না, বরং তার কাছে ধর্ম ভীরুতা পৌছে থাকে।' ( ২২:৩৭ )হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) এই আয়াতের তাফসীরে বলেনঃ “ তোমরা নামায পড়বে এবং অন্যান্য আমল করবে না এটা কোন পুণ্যের কাজ নয় । এই নির্দেশ ঐ সময় ছিল যখন রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) মক্কা হতে মদীনার দিকে ফিরে ছিলেন। কিন্তু তারপরে অন্যান্য ফরযসমূহ ও নির্দেশাবলী অবতীর্ণ হয় এবং ওগুলোর উপর আমল করা অবশ্য কর্তব্য রূপে গণ্য করা হয়েছে। পূর্ব ও পশ্চিমকে বিশিষ্ট করার কারণ হচ্ছে এই যে, ইয়াহূদীরা পশ্চিম দিকে এবং খ্রীষ্টানেরা পূর্ব দিকে মুখ করতো। সুতরাং উদ্দেশ্য হচ্ছে এই যে, এটাতো শুধু ঈমানের বাক্য এবং প্রকৃত ঈমান হচ্ছে আমল। হযরত মুজাহিদ ( রঃ ) বলেনঃ ‘পুণ্য এই যে, আনুগত্যের মূল অন্তরে সৃষ্টি হয়ে যায়। অবশ্যকরণীয় কার্যগুলো নিয়মানুবর্তিতার সাথে আদায় করা হয়। সত্য কথা এই যে, যে ব্যক্তি এই আয়াতের উপর আমল করেছে সে পূর্ণভাবে ইসলাম গ্রহণ করেছে এবং মন খুলে সে পুণ্য সংগ্রহ করেছে। মহান আল্লাহর সত্তার উপর তার ঈমান রয়েছে। সে জানে যে, প্রকৃত উপাস্য তিনিই। ফেরেশতাদের অস্তিত্ব এবং এঁরা যে আল্লাহর বাণী তাঁর বিশিষ্ট বান্দাদের নিকট পৌছিয়ে থাকেন একথা তারা বিশ্বাস করে। তারা সমস্ত আসমানী কিতাবের উপর বিশ্বাস রাখে এবং এটাও বিশ্বাস করে যে, পবিত্র কুরআন শেষ আসমানী কিতাব যা পূর্ববর্তী কিতাবের সত্যতা প্রমাণ করে এবং ইহকাল ও পরকালের সুখ ও সৌভাগ্য যার সাথে জড়িত রয়েছে। অনুরূপভাবে প্রথম হতে শেষ পর্যন্ত সমস্ত নবীর উপরও তাদের ঈমান রয়েছেবিশেষ করে আখেরী নবী হযরত মুহাম্মদ ( সঃ )-এর উপরেও তাদের পূর্ণ বিশ্বাস রয়েছে। মাল ও সম্পদের প্রতি ভালবাসা থাকা সত্ত্বেও তা তারা আল্লাহর পথে ব্যয় করে থাকে। সহীহ হাদীসে রয়েছে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ উত্তম দান এই যে, তুমি এমন অবস্থায় দান করবে যখন তোমার স্বাস্থ্য ভাল থাকে ও মালের প্রতি তোমার ভালবাসা ও লোভ থাকে, তুমি ধনী হওয়ারও আশা রাখ এবং দরিদ্র হয়ে যাওয়ার ও ভয় কর ।' ( সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম )। ইমাম হাকিম ( রঃ ) তাঁর তাফসীর-ই-মুস্তাদরিক’ নামক হাদীস গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) ( আরবি ) পাঠ করতঃ বলেনঃ“ এর ভাবার্থ এই যে, তোমরা সুস্থ অবস্থায় ও মালের প্রতি চাহিদা থাকা অবস্থায় দারিদ্রকে ভয় করে এবং ধনী হওয়ার ইচ্ছা রেখে দান করবে ।' ( ২:১৭৭ ) কিন্তু হাদীসটি ‘মওকুফ হওয়াই বেশী সঠিক কথা। প্রকৃতপক্ষে এটা হযরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ ( রাঃ )-এরই উক্তি। কুরআন মাজীদেও সুরা-ই-দাহরে আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ ( আরবি )অর্থাৎ তারা তাঁর ( আল্লাহর ) প্রতি ভালবাসার জন্যে দরিদ্র, পিতৃহীন ও বশীকে আহার করিয়ে থাকে। ( তারা বলে ) আমরা তোমাদেরকে শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে আহার করাচ্ছি, আমরা তোমাদের নিকট এর প্রতিদান ও কৃতজ্ঞতা চাচ্ছি না।' ( ৭৬:৮-৯ ) অন্য জায়গায় রয়েছেঃ ( আরবি )অর্থাৎ যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের ভালবাসার জিনিস তোমরা ( আল্লাহর পথে ) খরচ না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা প্রকৃত পুণ্য অর্জন করতে পারবে না।' ( ৩:১২ ) অন্যস্থানে বলেছেনঃ ( আরবি )অর্থাৎ তাদের অভাব ও প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও তারা অন্যদেরকে তাদের জীবনের উপর প্রাধান্য দিয়ে থাকে।' ( ৫৯:৯ ) সুতরাং এরা বড় মর্যাদার অধিকারী। কেননা, প্রথম প্রকারের লোকেরাতো তাদের ভালবাসা ও পছন্দনীয় জিনিস অন্যদেরকে দান করেছেন। কিন্তু দ্বিতীয় প্রকারের লোকেরা এমন জিনিস অপরকে দিয়েছেন, যে জিনিসের তারা নিজেরাই মুখাপেক্ষী ছিলেন। কিন্তু তারা নিজেদের প্রয়োজন অপেক্ষা অপরের প্রয়োজনকেই বেশী গুরুত্ব দিয়েছেন ( আরবি ) আত্মীয়গণকে বলা হয়। দানের ব্যাপারে অন্যদের উপর এদের অগ্রাধিকার রয়েছে।হাদীস শরীফে রয়েছেঃ ‘মিসকীনকে দান করার পুণ্য একগুণ এবং আত্মীয়। ( মিসকীন )-কে দান করার পূণ্য দ্বিগুণ। একটি দানের পুণ্য এবং দ্বিতীয়টি আত্মীয়তার বন্ধন যুক্ত রাখার পুণ্য। তোমাদের দান ও খয়রাতের এরাই বেশী হকদার।' কুরআন মাজীদের মধ্যে কয়েক জায়গায় তাদের সাথে সৎ ব্যবহারের নির্দেশ রয়েছে। ইয়াতীম' এর অর্থ হচ্ছে ঐ ছোট ছেলে যার পিতা মারা গেছে। তার অন্য কেউ উপার্জনকারী নেই। তার নিজের উপার্জন করারও ক্ষমতা নেই। হাদীস শরীফে রয়েছে যে, পূর্ণ বয়স্ক হওয়ার পর সে আর ইয়াতীম থাকে না। মিসকীন ওদেরকে বলা হয় যাদের নিকট এই পরিমাণ জিনিস নেই যা তাদের খাওয়া পরার ও বসবাসের জন্যে যথেষ্ট হতে পারে। তাদেরকেও দান করতে হবে যাতে তাদের প্রয়োজন মিটাতে পারে এবং তারা দারিদ্র, ক্ষুধা, সংকীর্ণতা এবং অবমাননাকর অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে পারে। সহীহ বুখারী ও মুসলিমের মধ্যে হযরত আবু হুরাইরা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ ঐ ব্যক্তি মিসকীন নয় যে ভিক্ষার জন্যে ঘুরে বেড়ায় এবং দু'একটি খেজুর বা দু' এক গ্লাস খাবার দিয়ে তাকে বিদায় করা হয়, বরং মিসকীন ঐ ব্যক্তি যার কাছে এই পরিমাণ জিনিস নেই যদদ্বারা তার সমস্ত কাজ চলতে পারে এবং যে তার অবস্থা এমন করতে পারে না । যদদ্বারা মানুষ তার অবস্থা জেনে তাকে কিছু দান করতে পারে। ইবনু সাবীল মুসাফিরকে বলা হয়। এখানে ঐ মুসাফিরকে বুঝানো হয়েছে, যার নিকট সফরের খরচ নেই। তাকে এই পরিমাণ দেয়া হবে যেন সে অনায়াসে তার দেশে পৌঁছতে পারে। অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি আল্লাহর আনুগত্যের কাজে সফরে বেরিয়েছে তাকেও যাতায়াতের খরচ দিতে হবে। অতিথিও এই নির্দেশেরই অন্তর্ভুক্ত।হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) অতিথিকেও ‘ইবনু সাবীলের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। পূর্ববর্তী অন্যান্য মনীষীও এই মতই পোষণ করেছেন। সায়েলীন’ ঐ সব লোককে বলা হয় যারা নিজেদের প্রয়োজন প্রকাশ করতঃ মানুষের নিকট ভিক্ষা করে থাকে। এদেরকেও সাদকা ও যাকাত থেকে দিতে হবে। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ ভিক্ষুক ঘোড়ায় চড়ে ভিক্ষা করতে আসলেও তার হক রয়েছে ।' ( সুনান-ই-আবু দাউদ )। ( আরবি )-এর ভাবার্থ হচ্ছে ক্রীত দাসদেরকে দাসত্ব হতে মুক্ত করা। এরা ঐ ক্রীতদাস যাদেরকে তাদের মনিবেরা বলে দিয়েছে যে, যদি তারা তাদেরকে এত এত অর্থ দিতে পারে তবে তারা মুক্ত হবে। এদেরকে সাহায্য করে মুক্ত করিয়ে নেয়া। এইসব প্রকারের এবং আরও অন্যান্য প্রকারের লোকদের পূর্ণ বর্ণনা। ( আরবি ) এই আয়াতের তাফসীরে ইনশাআল্লাহ দেয়া হবে। হযরত ফাতিমা বিনতে কায়েস ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ মালের মধ্যে যাকাত ছাড়া আল্লাহ তা'আলার আরও কিছু হক রয়েছে। অতঃপর তিনি এই আয়াতটি পড়ে শুনান। এই হাদীসে আবূ হামযাহ মায়মুন আ’ওয়ার নামক একজন বর্ণনাকারী দুর্বল।অতঃপর আল্লাহ তা'আলা বলেন যে, তারা নামাযকে সময়মত পূর্ণ রুকু সিজদাহ, স্থিরতা এবং বিনয়ের সাথে আদায় করে থাকে। অর্থাৎ যে নিয়মে আদায় করার নির্দেশ শরীয়তে রয়েছে ঠিক সেই নিয়মেই আদায় করে থাকে। আর তারা যাকাত প্রদান করে থাকে। কিংবা এই অর্থ যে, তারা নিজেদের আত্মাকে বাজে কথা এবং জঘন্য চরিত্র থেকে পবিত্র রাখে। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেছেনঃ ( আরবি )অর্থাৎ আত্মাকে পবিত্রকারী সফলকাম হয়েছে এবং তাকে দমনকারী বিফল মনোরথ হয়েছে।' ( ৯১:৯-১০ ) অন্য জায়গায় আল্লাহ পাক ঘোষণা করেনঃ ( আরবি ) অর্থাৎ মুশরিকদের জন্যে অকল্যাণ, যারা যাকাত আদায় করে না। ( ৪১:৬-৭ ) সুতরাং উপরোক্ত আয়াতসমূহে যাকাত’ এর ভাবার্থ হচ্ছে নফস'-কে পবিত্র করা। অর্থাৎ নিজেকে পাপ-পঙ্কিলতা, শিরক এবং কুফর হতে পবিত্র করা। আবার এর অর্থ মালের যাকাতও হতে পারে। তাহলে তখন নফল সাদকার অন্যান্য নির্দেশ বুঝতে হবে। যেমন উপরে হাদীস বর্ণিত হয়েছে যে, মালের মধ্যে যাকাত ছাড়া আল্লাহ তা'আলার অন্যান্য হক রয়েছে। অতঃপর আল্লাহ তা'আলা বলেন যে, অঙ্গীকার করলে যারা সেই অঙ্গীকার পূর্ণকারী হয়। যেমন, আল্লাহ পাক অন্য স্থানে বলেছেনঃ ( আরবি ) অর্থাৎ যারা আল্লাহর অঙ্গীকার পুরো করে এবং অঙ্গীকার ভঙ্গ করে না।' ( ১৩:২০ ) অঙ্গীকার ভঙ্গ করা হচ্ছে মুনাফিকদের অভ্যাস। যেমন হাদীস শরীফে রয়েছেঃ মুনাফিকের নিদর্শন তিনটি ( ১ ) কথা বললে মিথ্যা বলে, ( ২ ) অঙ্গীকার করলে তা ভঙ্গ করে এবং ( ৩ ) তার নিকট কিছু গচ্ছিত রাখলে তা আত্মসাৎ করে। অন্য একটি হাদীসে আছেঃ ঝগড়ার সময় গালি উচ্চারণ করে। তারপরে আল্লাহ পাক বলেন যে, যারা অভাবে ও ক্লেশে এবং যুদ্ধ কালে ধৈর্যধারণকারী। এই সব কষ্ট ও বিপদের সময় ধৈর্য ধারণের শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে সাহায্য করুন"। তাঁরই উপর আমরা নির্ভর করি। আল্লাহ তা'আলা বলেন যে, এই সব গুণবিশিষ্ট মানুষই সত্যপরায়ণ ও খাঁটি ঈমানদার। তাদের ভিতর ও বাহির, কথা ও কাজ একই রূপ। আর তারা ধর্মভীরুও বটে। কেননা, তারা সদা আনুগত্যের উপরেই রয়েছে এবং নির্দিষ্ট বস্তুসমূহ হতে বহু দূরে সরে আছে।
সূরা বাকারাহ্ আয়াত 177 সূরা
ليس البر أن تولوا وجوهكم قبل المشرق والمغرب ولكن البر من آمن بالله واليوم الآخر والملائكة والكتاب والنبيين وآتى المال على حبه ذوي القربى واليتامى والمساكين وابن السبيل والسائلين وفي الرقاب وأقام الصلاة وآتى الزكاة والموفون بعهدهم إذا عاهدوا والصابرين في البأساء والضراء وحين البأس أولئك الذين صدقوا وأولئك هم المتقون
سورة: البقرة - آية: ( 177 ) - جزء: ( 2 ) - صفحة: ( 27 )English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- মসীহ আল্লাহর বান্দা হবেন, তাতে তার কোন লজ্জাবোধ নেই এবং ঘনিষ্ঠ ফেরেশতাদেরও না। বস্তুতঃ যারা
- আর এই সম্পদ তাদের জন্যে, যারা তাদের পরে আগমন করেছে। তারা বলেঃ হে আমাদের পালনকর্তা,
- আর যদি মোহর সাব্যস্ত করার পর স্পর্শ করার পূর্বে তালাক দিয়ে দাও, তাহলে যে, মোহর
- হে মানুষ, কিসে তোমাকে তোমার মহামহিম পালনকর্তা সম্পর্কে বিভ্রান্ত করল?
- হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল।
- তাঁর আর ও এক নিদর্শন হচ্ছে নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের সৃজন এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের
- সুতরাং তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমিও তোমাদের স্মরণ রাখবো এবং আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর; অকৃতজ্ঞ
- আর যদি তার উপর আপতিত দুঃখ কষ্টের পরে তাকে সুখভোগ করতে দেই, তবে সে বলতে
- যেদিন তা আসবে সেদিন আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কেউ কোন কথা বলতে পারে না। অতঃপর কিছু
- আমি ভূমিকে বিস্তৃত করেছি, তাতে পর্বতমালার ভার স্থাপন করেছি এবং তাতে সর্বপ্রকার নয়নাভিরাম উদ্ভিদ উদগত
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা বাকারাহ্ ডাউনলোড করুন:
সূরা Baqarah mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Baqarah শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers