কোরান সূরা আহ্কাফ আয়াত 6 তাফসীর
﴿وَإِذَا حُشِرَ النَّاسُ كَانُوا لَهُمْ أَعْدَاءً وَكَانُوا بِعِبَادَتِهِمْ كَافِرِينَ﴾
[ الأحقاف: 6]
যখন মানুষকে হাশরে একত্রিত করা হবে, তখন তারা তাদের শত্রু হবে এবং তাদের এবাদত অস্বীকার করবে। [সূরা আহ্কাফ: 6]
Surah Al-Ahqaaf in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Ahqaf ayat 6
আর যখন মানবগোষ্ঠীকে সমবেত করা হবে তখন তারা তাদের শত্রু হয়ে দাঁড়াবে, আর তাদের যে উপাসনা করা হয়েছিল সে কথাতেই তারা অস্বীকারকারী হবে।
Tafsir Mokhtasar Bangla
৬. এরা দুনিয়াতে তাদের উপকার না করার পাশাপাশি তাদের হাশর ঘটানোর পর যারা তাদের ইবাদাত করতো তাদের শত্রæতে পরিণত হবে এবং তাদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করবে। উপরন্তু তারা যে এদের ইবাদাত করতো এ ব্যাপারে তাদের অবগতিকেও তারা অস্বীকার করবে।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
যখন কিয়ামতের দিন মানুষকে একত্রিত করা হবে, তখন তারা তাদের শত্রু হয়ে দাঁড়াবে এবং তাদের উপাসনাকে অস্বীকার করবে। [১] [১] এই বিষয়টি কুরআনের একাধিক জায়গায় বর্ণিত হয়েছে। যেমন, সূরা ইউনুস ১০:২৯ নং আয়াতে, সূরা মারয়্যামের ১৯:৮১-৮২ নং আয়াতে এবং সূরা আনকাবুতের ২৯:২৫ নং আয়াত সহ আরো অন্য আয়াতেও বর্ণিত হয়েছে। দুনিয়াতে দু' প্রকারের উপাস্য বিদ্যমান রয়েছে। এক তো হল, নিষ্প্রাণ জড়পদার্থ, উদ্ভিদ এবং মহান আল্লাহর মহাশক্তির নিদর্শনাবলী ( সূর্য, আগুন প্রভৃতি )। আল্লাহ তাআলা এগুলোর মধ্যে প্রাণ এবং বাকশক্তি দান করবেন। ফলে এ জিনিসগুলো মুখের ভাষায় ব্যক্ত করবে যে, এ কথা আমরা আদৌ জানতাম না যে, এরা আমাদের পূজা করত এবং তোমার উপাস্যত্বে আমাদেরকে শরীক করত। কেউ কেউ বলেছেন, বাচনিক জবানে নয়, বরং অবস্থার জবানে তারা নিজেদের মনের কথা প্রকাশ করবে। আর আল্লাহই সর্বাধিক জ্ঞাত। দ্বিতীয় প্রকার উপাস্য হল, নবী, ফিরিশতা ও নেক লোক বা সৎব্যক্তিদের মধ্য থেকে। যেমন, ঈসা, উযাইর ( আলাইহিমাস্ সালাম ) এবং আল্লাহর অন্যান্য নেক বান্দাগণ। এঁরাও আল্লাহর সমীপে সেইরূপই উত্তর দেবেন, যেমন ঈসা ( আঃ )-এর উত্তর পবিত্র কুরআনে বর্ণিত রয়েছে। এ ছাড়া শয়তানও অস্বীকার করবে। যেমন সকল শরীকদের উক্তি কুরআনে বর্ণনা করা হয়েছে। ﴿ تَبَرَّأْنَا إِلَيْكَ مَا كَانُوا إِيَّانَا يَعْبُدُونَ﴾ ( القصص:৬৩ ) " আমরা তোমার সম্মুখে ( আমাদের পূজারীদের সাথে ) সম্পর্ক ছিন্নতার কথা ঘোষণা করছি, এরা আমাদের পূজা করত না। " ( সূরা কাসাস ২৮:৬৩ )
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
আর যখন কিয়ামতের দিন মানুষকে একত্র করা হবে তখন সেগুলো হবে এদের শত্রু এবং এরা তাদের ইবাদাত অস্বীকার করবে।
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
১-৬ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তা'আলা খবর দিচ্ছেন যে, তিনি এই কুরআন কারীম স্বীয় বান্দা ও রাসূল হযরত মুহাম্মাদ ( সঃ )-এর উপর অবতীর্ণ করেছেন। তিনি এমনই সম্মানের অধিকারী যে, তা কখনো নষ্ট হবার নয় এবং তিনি এমনই প্রজ্ঞাময় যে, তাঁর কোন কথা ও কাজ প্রজ্ঞাশূন্য নয়। এরপর ইরশাদ হচ্ছে যে, আল্লাহ তা'আলা আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী এবং এতোদুভয়ের সব জিনিসই যথাযথভাবে নির্দিষ্ট কালের জন্যে সৃষ্টি করেছেন। কোনটাই তিনি অযথা ও বৃথা সৃষ্টি করেননি।( আরবী ) -এর অর্থ হচ্ছে নির্দিষ্ট কাল, যা বৃদ্ধিও পাবে না এবং কমেও যাবে। এই রাসূল ( সঃ ), এই কিতাব ( কুরআন ) এবং সতর্ককারী অন্যান্য নিদর্শনাবলী হতে যে দুষ্টমতি লোকেরা মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বেপরোয়া হয় তারা নিজেদের কি পরিমাণ ক্ষতি করেছে তা তারা সত্বরই জানতে পারবে। মহান আল্লাহ স্বীয় নবী ( সঃ )-কে বলেনঃ এই মুশরীকদেরকে তুমি জিজ্ঞেস কর- তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে ডাকো এবং যাদের ইবাদত কর, তাদের কথা কিছু ভেবে দেখেছো কি? তারা পৃথিবীতে কি সৃষ্টি করেছে আমাকে দেখাও তো? অথবা আকাশমণ্ডলীতে তাদের কোন অংশীদারিত্ব আছে কি? প্রকৃত ব্যাপার তো এই যে, আকাশ হোক, পৃথিবী হোক, যে কোন জিনিসই হোক না কেন সবকিছুরই সৃষ্টিকর্তা একমাত্র আল্লাহ। তিনি ছাড়া কারো এক অণুপরিমাণ জিনিসেরও অধিকার নেই। সমগ্র রাজ্যের মালিক তিনিই। প্রত্যেক জিনিসের উপর পূর্ণ ক্ষমতাবান একমাত্র তিনি। তিনিই সবকিছুর ব্যবস্থাপক। সবকিছুরই উপর পূর্ণ অধিকার একমাত্র তিনিই রাখেন। সুতরাং মানুষ তাঁর ছাড়া অন্যদের ইবাদত কেন করে? কেন তারা তাদের বিপদ-আপদের সময় অল্লাহ ছাড়া অন্যকে ডাকে? কে তাদেরকে এ শিক্ষা দিয়েছে? কে তাদেরকে এ শিরক করতে | শিখিয়েছে? প্রকতপক্ষে কোন সৎ ও জ্ঞানী মানুষের এ শিক্ষা হতে পারে না ।মহান আল্লাহ তাদেরকে এ শিক্ষা দেননি। তাই তো তিনি বলেনঃ “ পূর্ববর্তী কোন কিতাব অথবা পরম্পরাগত কোন জ্ঞান থাকলে তা আমার নিকট উপস্থিত কর, যদি তোমরা সত্যবাদী হও ।' কিন্তু আসলে তো এটা তোমাদের বাজে ও বাতিল কাজ। সুতরাং তোমরা এর স্বপক্ষে না পারবে কোন শরীয়ত সম্মত দলীল পেশ করতে এবং না পারবে কোন জ্ঞান সম্মত দলীল পেশ করতে। এক কিরআতে ( আরবী ) রয়েছে। অর্থাৎ তোমাদের পূর্ববর্তীদের হতে কোন সঠিক জ্ঞানের বর্ণনা পেশ কর। মুজাহিদ ( রঃ ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছেঃ এমন কাউকেও উপস্থিত কর যে সঠিক ইলমের বর্ণনা দিতে পারে। হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) বলেন যে, ভাবার্থ হচ্ছেঃ এই বিষয়ের কোন দলীল আনয়ন কর।মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো জ্ঞান-লিপি। বর্ণনাকারী বলেন যে, তাঁর ধারণামতে এ হাদীসটি মার'। হযরত আবু বকর ইবনে আইয়াশ ( রঃ ) বলেন যে, এর দ্বারা বাকী ইলমকে বুঝানো হয়েছে। হযরত হাসান বসরী ( রঃ ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছেঃ ‘কোন গোপন দলীলও পেশ কর?' এই সব গুরুজন হতে এটাও বর্ণিত আছে যে, এর দ্বারা পূর্ববতী লিপি উদ্দেশ্য। হযরত কাতাদা ( রঃ ) বলেন যে, এর দ্বারা কোন বিশেষ জ্ঞানকে বুঝানো হয়েছে। এসব উক্তি প্রায় একই অর্থবোধক। ভাবার্থ ওটাই যা আমরা প্রথমে বর্ণনা করেছি। ইমাম ইবনে জারীরও ( রঃ ) এটাকেই পছন্দ করেছেন। এরপর ইরশাদ হচ্ছেঃ “ ঐ ব্যক্তি অপেক্ষা অধিক বিভ্রান্ত কে যে আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুকে ডাকে যা কিয়ামত দিবস পর্যন্তও তার ডাকে সাড়া দিবে না? এবং এগুলো তাদের প্রার্থনা সম্বন্ধে অবহিতও নয় । কেননা এগুলো তো পাথর এবং জড় পদার্থ। এরা না শুনতে পায়, না দেখতে পায়।কিয়ামতের দিন যখন সব মানুষকে একত্রিত করা হবে তখন এসব বাতিল মা'বুদ বা উপাস্য তাদের উপাসকদের শত্রু হয়ে যাবে এবং তারা এদের ইবাদত অস্বীকার করবে। যেমন আল্লাহ তা'আলা অন্য জায়গায় বলেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ তারা আল্লাহ ব্যতীত অন্য মাবুদ গ্রহণ করে এ জন্যে যে, যাতে তারা তাদের সহায় হয় । কখনই নয়; তারা তাদের ইবাদত অস্বীকার করবে এবং তাদের বিরোধী হয়ে যাবে।”( ১৯:৮১-৮২ ) অর্থাৎ যখন এরা তাদের পূর্ণ মুখাপেক্ষী হবে তখন তারা মুখ ফিরিয়ে নিবে।হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ ( সঃ ) তাঁর উম্মতকে বলেছিলেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ তোমরা আল্লাহ ব্যতীত প্রতিমাগুলোর সাথে যে পার্থিব সম্পর্ক স্থাপন করেছো এর ফলাফল তোমরা কিয়ামতের দিন দেখে নিবে, যখন তোমরা একে অপরকে অস্বীকার করবে এবং একে অপরকে লা'নত করবে, আর তোমাদের আশ্রয়স্থল হবে জাহান্নাম এবং তোমাদের জন্যে কোন সাহায্যকারী হবে না ।”
সূরা আহ্কাফ আয়াত 6 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- তাদেরকে পরিত্যাগ করুন, যারা নিজেদের ধর্মকে ক্রীড়া ও কৌতুকরূপে গ্রহণ করেছে এবং পার্থিব জীবন যাদেরকে
- তোমাদের কিছু লোক নিরক্ষর। তারা মিথ্যা আকাঙ্খা ছাড়া আল্লাহর গ্রন্থের কিছুই জানে না। তাদের কাছে
- নাযিল করেছেন তাওরত ও ইঞ্জিল, এ কিতাবের পূর্বে, মানুষের হেদায়েতের জন্যে এবং অবতীর্ণ করেছেন মীমাংসা।
- যিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনি কি করে জানবেন না? তিনি সূক্ষ্নজ্ঞানী, সম্যক জ্ঞাত।
- আমি তাদেরকে সৃষ্টি করেছি এবং মজবুত করেছি তাদের গঠন। আমি যখন ইচ্ছা করব, তখন তাদের
- আর নূহ (আঃ) এর প্রতি ওহী প্রেরণ করা হলো যে, যারা ইতিমধ্যেই ঈমান এনেছে তাদের
- এটা অক্ষত রাখবে না এবং ছাড়বেও না।
- যে বাধা দিত মঙ্গলজনক কাজে, সীমালঙ্ঘনকারী, সন্দেহ পোষণকারীকে।
- তার পেছনে দোযখ রয়েছে। তাতে পূঁজ মিশানো পানি পান করানো হবে।
- বাদশাহ বললঃ তাকে আমার কাছে নিয়ে এসো। আমি তাকে নিজের বিশ্বস্ত সহচর করে রাখব। অতঃপর
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা আহ্কাফ ডাউনলোড করুন:
সূরা Ahqaf mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Ahqaf শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers