কোরান সূরা নিসা আয়াত 65 তাফসীর
﴿فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنفُسِهِمْ حَرَجًا مِّمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا﴾
[ النساء: 65]
অতএব, তোমার পালনকর্তার কসম, সে লোক ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে ন্যায়বিচারক বলে মনে না করে। অতঃপর তোমার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোন রকম সংকীর্ণতা পাবে না এবং তা হূষ্টচিত্তে কবুল করে নেবে। [সূরা নিসা: 65]
Surah An-Nisa in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Nisa ayat 65
কিন্তু না, তোমার খোদার কসম! তারা ঈমান আনে না যে পর্যন্ত না তারা তোমাকে বিচারক মনোনীত করে সেই বিষয়ে যাতে তারা পরস্পরের মধ্যে মতবিরোধ করে, তারপর নিজেদের অন্তরে কোনো বিরূপতা পায় না তুমি যা মীমাংসা করো সে-সন্বন্ধে, আর তারা আত্মসমর্পণ করে পূর্ণ সমর্পণের সাথে।
Tafsir Mokhtasar Bangla
৬৫. ব্যাপারটি তেমন নয় যা এ মুনাফিকরা ধারণা করেছে। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সত্তার কসম খেয়ে বলেন, নিশ্চয়ই তারা সত্যিকার বিশ্বাসী হতে পারবে না যতক্ষণ না তারা তাদের সকল মতপার্থক্যের বিষয়ে রাসূলের জীবদ্দশায় তাঁর নিকট এবং তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর শরীয়তের নিকট ফায়সালা কামনা করে। এরপর তারা রাসূলের ফায়সালার উপর সন্তুষ্ট থাকে। উপরন্তু তাদের অন্তরে এ ব্যাপারে কোন সংশয় ও সঙ্কীর্ণতা না থাকে এবং তারা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য আনুগত্যের মাধ্যমে পরিপূর্ণভাবে তার সামনে আত্মসমর্পণ করে।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
কিন্তু না, তোমার প্রতিপালকের শপথ! তারা বিশ্বাসী ( মুমিন ) হতে পারবে না; যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তাদের নিজেদের বিবাদ-বিসম্বাদের বিচারভার তোমার উপর অর্পণ না করে, অতঃপর তোমার সিদ্ধান্ত সম্বন্ধে তাদের মনে কোন দ্বিধা না থাকে এবং সর্বান্তঃকরণে তা মেনে নেয়। [১] [১] এই আয়াতের শানে নুযুলের ব্যাপারে সাধারণতঃ একজন মুসলিম ও একজন ইয়াহুদীর মাঝে বিবাদের ঘটনা বর্ণনা করা হয়। রসূল ( সাঃ )-এর কাছ থেকে ফায়সালা হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও মুসলিম উমার ( রাঃ )-এর কাছ থেকে ফায়সালা নেওয়ার জন্য যায়। ফলে উমার ( রাঃ ) এই মুসলিমের শিরচ্ছেদ করেন। কিন্তু সনদের দিক দিয়ে এ ঘটনা সঠিক নয়। ইমাম ইবনে কাসীরও এ ( ঘটনা সঠিক না হওয়ার ) কথা পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করেছেন। এই আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার সঠিক কারণ হল, রসূল ( সাঃ )-এর ফুফুতো ভাই যুবায়ের ( রাঃ ) এবং অপর এক ব্যক্তির মধ্যে জমি সেচার নালা ও পানিকে কেন্দ্র করে ঝাগড়ার সৃষ্টি হয়। ব্যাপার নবী করীম ( সাঃ ) পর্যন্ত পৌঁছে। তিনি বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে যে ফায়সালা দিলেন তাতে জিত যুবায়ের ( রাঃ )-এরই হল। ফলে দ্বিতীয় ব্যক্তি বলে উঠল যে, রসূল ( সাঃ ) এই ফায়সালা এই জন্য করলেন যে, যুবায়ের ( রাঃ ) তাঁর ফুফুতো ভাই হয়। এরই ভিত্তিতে এই আয়াত অবতীর্ণ হয়। ( সহীহ বুখারী, তাফসীর সূরা নিসা ) আয়াতের অর্থ হল, রসূল ( সাঃ )-এর কোন কথা অথবা কোন ফায়সালার ব্যাপারে বিরোধিতা করা তো দূরের কথা সে ব্যাপারে অন্তরে কোন 'কিন্তু' রাখাও ঈমানের পরিপন্থী। কুরআনের এই আয়াত হাদীস অস্বীকারকারীদের জন্য তো বটেই এবং সেই সাথে অন্য এমন লোকদের জন্যও চিন্তা ও চেতনার দ্বার উদ্ঘাটন করে, যাঁরা তাঁদের ইমামের উক্তির মোকাবেলায় সহীহ হাদীসকে মানতে কেবল সংকোচ বোধই করেন না, বরং হয় পরিষ্কার ভাষায় তা মানতে অস্বীকার করেন, নতুবা বিষয়ের সাথে সম্পর্কহীন অপব্যাখ্যা করেন, নতুবা বিশ্বস্ত রাবী ( বর্ণনাকারী )-কে যয়ীফ বা দুর্বল আখ্যা দিয়ে হাদীস প্রত্যাখ্যান করার নিন্দনীয় প্রচেষ্টা চালান।
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
কিন্তু না, আপনার রবের শপথ! তারা মুমিন হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তারা নিজেদের বিবাদ-বিসম্বাদের [ ১ ] বিচার ভার আপনার উপর অর্পণ না করে; অতঃপর আপনার মীমাংসা সম্পর্কে তাদের মনে কোন দ্বিধা না থাকে [ ২ ] এবং সর্বান্তকরণে তা মেনে নেয় [ ৩ ]। [ ১ ] আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের বলেন, আনসারী এক ব্যক্তির সাথে খেজুর গাছে পানি দেয়া নিয়ে তার ঝগড়া হয়। আনসারী বলল, পানির পথ পরিস্কার করে দাও যাতে তা আমার জমির উপর যায়। যুবায়ের তা দিতে অস্বীকার করলে তারা উভয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে শালিসের জন্য আসলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব শুনে বললেনঃ যুবায়ের তুমি তোমার জমিতে পানি দেয়ার পর তোমার পড়শীর জমিতে পানি দিয়ে দিও। লোকটি তা শুনে বলল, আপনার ফুফাত ভাই তো তাই। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেহারা রক্তবর্ণ ধারণ করল এবং তিনি বললেন, যুবায়ের তুমি তোমার জমিতে পানি দেয়ার পর তা দেয়াল পর্যন্ত আটকে রাখ। যুবায়ের বলেন, আল্লাহর শপথ, আমার মনে হয় এ আয়াতটি এ ঘটনাকে কেন্দ্র করেই নাযিল হয়েছে। [ বুখারীঃ ২৩৫৯, ২৩৬০, মুসলিমঃ ২৩৫৭ ] এ দ্বারা এ বিষয়ও প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহর রাসূলের আদেশ-নিষেধ নির্দ্বিধায় মেনে নেয়া শুধু আচার অনুষ্ঠান কিংবা অধিকারের সাথেই সম্পৃক্ত নয়; আকীদা এবং অপরাপর বৈষয়িক বিষয়েও ব্যাপক। অতএব, কোন সময় কোন বিষয়ে পারস্পারিক মতবিরোধ দেখা দিলে বিবাদ পরিহার করে উভয় পক্ষকে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এবং তার অবর্তমানে তার প্রবর্তিত শরীআতের আশ্রয়ে গিয়ে মীমাংসা অন্বেষণ করা প্রতিটি মুসলিমের উপর ফরয। [ ২ ] এতে এ কথাও জানা গেল যে, যে কাজ বা বিষয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক কথা বা কাজের মাধ্যমে প্রমাণিত, তা সম্পাদন করতে গিয়ে মনে কোন রকম সংকীর্ণতা অনুভব করাও ঈমানের দূর্বলতার লক্ষণ। উদাহারণতঃ যে ক্ষেত্রে শরীআত তায়াম্মুম করে সালাত আদায় করার অনুমতি দিয়েছে, সে ক্ষেত্রে যদি কেউ সম্মত না হয় তবে একে পরহেযগারী বলে মনে করা যাবে না, বরং এটা একান্তই মানসিক ব্যাধি। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপেক্ষা কেউ বেশী পরহেযগার হতে পারে না। যে অবস্থায় মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসে সালাত আদায়ের অনুমতি দিয়েছেন এবং নিজেও বসে সালাত আদায় করেছেন, কারো মন যদি এতে সম্মত না হয় এবং অসহনীয় পরিশ্রম ও কষ্ট সত্ত্বেও দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করে, তবে তার জেনে রাখা উচিত যে, তার মন ব্যাধিগ্রস্ত। [ ৩ ] এ আয়াতে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহত্ত্ব ও সুউচ্চ মর্যাদার বিষয় প্রকাশ করার সঙ্গে সঙ্গে কুরআনের অসংখ্য আয়াতের দ্বারা প্রমাণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্যের অপরিহার্যতার বিষয়টি সবিস্তারে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এ আয়াতে আল্লাহ তা’আলা শপথ করে বলেছেন যে, কোন মানুষ ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন কিংবা মুসলিম হতে পারে না যতক্ষণ না সে ধীরস্থির মস্তিস্কে মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এভাবে স্বীকার করে নেবে যাতে রাসূলের কোন সিদ্ধান্তেই মনে কোন রকম সংকীর্ণতা না থাকে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাসূল হিসেবে গোটা উম্মতের শাসক এবং যে কোন বিবাদের মীমাংসার যিম্মাদার। তার শাসন ও সিদ্ধান্ত অপর কাউকে বিচারক সাব্যস্ত করার উপর নির্ভরশীল নয়। তিনি শুধুমাত্র একজন শাসকই নন, বরং তিনি একজন নিষ্পাপ রাসূল, রাহমাতুল্লিল আলামীন এবং উম্মতের জন্য একান্ত দয়ালু ব্যক্তিত্ব। কাজেই শিক্ষা দেয়া হয়েছে যে, যখনই কোন বিষয়ে, কোন সমস্যার ব্যাপারে মতবিরোধ দেখা দেয়, তখনই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বিচারক সাব্যস্ত করে তার মীমাংসা করিয়ে নেয়া উচিত এবং অতঃপর তার মীমাংসাকে স্বীকার করে নিয়ে সেমতে কাজ করা উভয় পক্ষের উপর ফরয। মনে রাখতে হবে যে, কুরআনের বাণী ও রাসূলের হাদীসসমূহের উপর আমল করা মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগের সাথেই সীমিত নয়। তাঁর তিরোধানের পর তাঁর পবিত্র শরীআতের মীমাংসাই হল তাঁর মীমাংসা। কাজেই এ নির্দেশটি কিয়ামত পর্যন্ত তেমনিভাবেই বলবৎ থাকবে, যেমন ছিল তাঁর যুগে। তখন যেমন সরাসরি কোন বিষয়ের সিদ্ধান্তকল্পে তাঁর কাছে উপস্থিত করা হত, তেমনি তাঁর পরে তাঁর প্রবর্তিত শরীআতের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হবে। এটা প্রকৃতপক্ষে তাঁরই অনুসরণ।
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
৬৪-৬৫ নং আয়াতের তাফসীর: ভাবার্থ এই যে, প্রত্যেক যুগের রাসূলের আনুগত্য স্বীকার করা তাঁর উম্মতের উপর আল্লাহ তা'আলার পক্ষ হতে ফরয হয়ে থাকে। রিসালাতের পদমর্যাদা এই যে, তাঁর সমস্ত আদেশকে আল্লাহ তা'আলার আদেশ মনে করা হবে। হযরত মুজাহিদ ( রঃ ) বলেন: ( আরবী )-এর ভাবার্থ হচ্ছে এই যে, এর ক্ষমতা আল্লাহ তা'আলার হাতেই রয়েছে এবং তা তার শক্তি ও ইচ্ছের উপরই নির্ভর করে। অর্থাৎ আল্লাহর ক্ষমতা ও ইচ্ছে ছাড়া কেউ তাঁর আনুগত্য স্বীকার করতে পারে। যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ ( আরবী ) অর্থাৎ যখন তুমি তাঁর হুকুমে তাদের উপর জয়যুক্ত হয়েছিলে।' ( ৩:১৫২ ) এখানেও ( আরবী ) শব্দের ভাবার্থ হচ্ছে তার ক্ষমতা ও ইচ্ছা। অতঃপর আল্লাহ তাআলা অবাধ্য ও পাপীদের প্রতি ইরশাদ করেছেন যে, তারা যেন রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট আগমন করতঃ আল্লাহ তাআলার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকটও যেন তাদের জন্য আল্লাহ তা'আলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করার আবেদন জানায়। তারা যখন এরূপ করবে তখন নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তাদের তাওবা কবুল করবেন এবং তাদের প্রতি দয়া পরবশ হয়ে তাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন।আবু মানসূর আস্সাববাগ্ ( রঃ ) স্বীয় প্রসিদ্ধ গল্পের পুস্তকে উত্তীর ( রঃ ) একটি বর্ণনা নকল করেছেন। উত্তী ( রঃ ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর সমাধির পার্শ্বে বসেছিলাম। এমন সময় সেখানে এক বেদুঈনের আগমন ঘটে। সে বলে, আস্সালামু আলাইকুম ইয়া রাসূলাল্লাহ ( হে আল্লাহর রাসূল (সঃ )! আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক)! আমি আল্লাহ তা'আলার ( আরবী ) উক্তি শুনেছি। তাই আমি আপনার সামনে স্বীয় পাপের জন্যে আল্লাহ তা'আলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা ও আপনার শাফাআত কামনা করছি। অতঃপর সে নিম্নের কবিতাটি পাঠ করেঃ ( আরবী ) অর্থাৎ হে ঐ সবের মধ্যে উত্তম ব্যক্তি! যাদের অস্থিগুলো প্রান্তরে প্রোথিত হয়েছে এবং সেগুলোর সুবাসে পর্বত ও প্রান্তর সুরভিত হয়েছে। সে কবরের জন্য আমার প্রাণ উৎসর্গিত হোক, যে কবরে আপনি অবস্থানকারী। এতে রয়েছে পবিত্রতা, দানশীলতা ও ভদ্রতা। অতঃপর বেদুঈন চলে যায় এবং আমার চোখে দ্রিা চেপে বসে। আমি স্বপ্নে দেখি যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) আমাকে যেন বলছেনঃ 'যাও, ঐ বেদুঈনকে সুসংবাদ জানিয়ে দাও যে, আল্লাহ তা'আলা তার পাপ মার্জনা করেছেন।এরপর আল্লাহ তা'আলা স্বীয় পবিত্র ও সম্মানিত সত্তার শপথ করে বলছেনঃ ‘কোন ব্যক্তিই ঈমানের সীমার মধ্যে আসতে পারে না যে পর্যন্ত সমস্ত বিষয়ে আল্লাহ তাআলার শেষ নবী ( সঃ )-কে ন্যায় বিচারক রূপে মেনে না নেবে এবং প্রত্যেক নির্দেশকে, প্রত্যেক মীমাংসাকে, প্রত্যেক সুন্নাতকে, প্রত্যেক হাদীসকে গ্রহণযোগ্য রূপে স্বীকার না করবে। আর অন্তর ও দেহকে একমাত্র ঐ রাসূলেরই ( সঃ ) অনুগত না করবে। মোটকথা, যে ব্যক্তি তার প্রকাশ্য, গোপনীয়, ছোট ও বড় প্রতিটি বিষয়ে রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর হাদীসকে সমস্ত নীতির মূল মনে করবে সে হচ্ছে মুমিন। অতএব নির্দেশ দেয়া হচ্ছে, তারা যেন তোমার মীমাংসাকে সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নেয় এবং স্বীয় অন্তরে যেন কোন প্রকারের সংকীর্ণতা পোষণ না করে। তারা যেন সমস্ত হাদীসকেই স্বীকার করে নেয়। তারা যেন না হাদীসসমূহকে স্বীকার করা হতে বিরত থাকে, না ঐগুলোকে সরিয়ে দেয়ার উপায় অনুসন্ধান করে, না ওর মত অন্য কোন জিনিসকে মর্যাদা সম্পন্ন মনে করে, না ঐ গুলো খণ্ডন করে এবং না ঐ গুলো মেনে নেয়ার ব্যাপারে তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হয়। যেমন রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) ঘোষণা করেনঃ যার অধিকারে আমার প্রাণ রয়েছে তাঁর শপথ! তোমাদের মধ্যে কেউ মুমিন হতে পারে না যে পর্যন্ত না সে স্বীয় প্রবৃত্তিকে ঐ জিনিসের অনুগত করে যা আমি আনয়ন করেছি।'সহীহ বুখারী শরীফে হযরত উরওয়া ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন যে, নর্দমা দিয়ে বাগানে পানি নেয়ার ব্যাপারে একটি লোকের সঙ্গে হযরত যুবাইর ( রাঃ )-এর বিবাদ হয়। নবী ( সঃ ) তখন বলেনঃ “ হে যুবাইর ( রাঃ )! তোমার বাগানে পানি নেয়ার পর তুমি আনসারীর বাগানে পানি যেতে দাও । তার একথা শুনে আনসারী বলে, 'হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! সে আপনার ফুপাতো ভাই তো!' এটা শুনে রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর চেহারা মুবারক পরিবর্তিত হয় এবং তিনি বলেনঃ “ হে যুবাইর ( রাঃ )! তুমি তোমার বাগানে পানি দেয়ার পর তা বন্ধ রেখো যে পর্যন্ত না সে পানি বাগানের প্রাচীর পর্যন্ত পৌছে যায় । অতঃপর পানি তোমার প্রতিবেশীর দিকে ছেড়ে দাও।' প্রথমে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) এমন পন্থা বের করেন যাতে হযরত যুবাইর ( রাঃ )-এর কষ্ট না হয় এবং আনসারীরও প্রশস্ততা বেড়ে যায়। কিন্তু আনসারী যখন সেটা তার পক্ষে উত্তম মনে করলো না, তখন তিনি হযরত যুবাইর ( রাঃ )-কে তাঁর পূর্ণ হক প্রদান করলেন। হযরত যুবাইর ( রাঃ ) বলেন, আমি ধারণা করি যে, ( আরবী )-এ আয়াতটি এ ব্যাপারেই অবতীর্ণ হয়। মুসনাদ-ই-আহমাদের একটি মুরসাল হাদীসে রয়েছে যে, এ আনসারী বদরী সাহাবী ছিলেন। অন্য বর্ণনা হিসেবে উভয়ের মধ্যে বিবাদ ছিল এই যে, পানির নালা হতে প্রথমেই ছিল হযরত যুবাইর ( রাঃ )-এর বাগান এবং তারপরে ঐ আনসারীর বাগান। আনসারী হযরত যুবাইর ( রাঃ )-কে বলতেন, ‘পানি বন্ধ করবেন না। পানি আপনা আপনি এক সাথে দু’ বাগানেই আসবে।'মুসনাদ-ই-ইবনে আবি হাতিমের আর একটি খুব বেশী দুর্বল বর্ণনায় এ আয়াতের শান-ই-নযুল এই বর্ণনা করা হয়েছে যে, দু'ব্যক্তি তাদের বিবাদের মীমাংসার জন্যে মুহাম্মাদ ( সঃ )-এর দরবারে উপস্থিত হয়। তিনি একটা মীমাংসা করে দেন। কিন্তু মীমাংসা যার প্রতিকূল হয়েছিল সে বলে, হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! মীমাংসার জন্যে আপনি আমাদেরকে হযরত উমার ( রাঃ )-এর নিকট পাঠিয়ে দিন। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেনঃ “ ঠিক আছে, তোমরা সেখানেই যাও ।' তারা এখানে আসলে যার অনুকূলে ফায়সালা হয়েছিল সে সমস্ত ঘটনা হযরত উমারের নিকট বর্ণনা করে। হযরত উমার ( রাঃ ) অপর ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করেন, এটা সত্যা কি?' সে স্বীকার করে নেয়। হযরত উমার ( রাঃ ) তখন তাদেরকে বলেন, এখানে তোমরা থাম, আমি এসে ফায়সালা করছি।' তিনি। তরবারী নিয়ে আসলেন এবং যে ব্যক্তি বলেছিল, আমাদেরকে হযরত উমার ( রাঃ )এর নিকট পাঠিয়ে দিন তার গর্দান উড়িয়ে দেন। অপর ব্যক্তি এটা দেখেই দৌড়ে পালিয়ে আসে এবং রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলে, “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আমার সঙ্গীকে হত্যা করা হয়েছে এবং আমি পালিয়ে না আসলে আমার মঙ্গল ছিল না । রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তখন বলেনঃ “ আমি উমার ( রাঃ )-কে এরূপ জানতাম না যে, তিনি এরূপ বীরত্বপনা দেখিয়ে একজন মুসলমানের রক্ত প্রবাহিত করবেন । সে সময় এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। ফলে ঐ ব্যক্তির রক্ত বিফলে যায় এবং হযরত উমার ( রাঃ )-কে নির্দোষ সাব্যস্ত করা হয়। কিন্তু এ নিয়ম চালু হয়ে যাওয়া আল্লাহ তা'আলা অপছন্দ করেন। তাই তিনি ( আরবী ) ( ৪:৬৬ ) -এ আয়াতটি অবতীর্ণ। করেন যা পরে আসছে।তাফসীর-ই-ইবনে মিরদুওয়াই-এর মধ্যেও এ বর্ণনাটি রয়েছে যা গারীব ও মুরসাল। ইবনে আবি লাহীআহ্ নামক বর্ণনাকারী দুর্বল। এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে বেশী জানেন। অন্য সনদের মাধ্যমে বর্ণিত আছে যে, দু’ ব্যক্তি তাদের বিবাদ মীমাংসার জন্যে রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট উপস্থিত হয়। তিনি হক পন্থীর পক্ষে মীমাংসা করেন। কিন্তু মীমাংসা যার প্রতিকূলে হয়েছিল সে বলে, আমি সম্মত নই।' রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তাকে জিজ্ঞেস করেনঃ তুমি কি চাও?' সে বলে, আমি হযরত আবু বকর ( রাঃ )-এর নিকট যেতে চাই।'উভয়ে হযরত আবু বকর ( রাঃ )-এর নিকট পৌছে। হযরত আবু বকর ( রাঃ ) ঘটনাটি শুনে বলেন, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) যে ফায়সালা করেছেন তোমাদের জন্যে ওটাই ফায়সালা।' সে তাতেও সম্মত না হয়ে সঙ্গীকে বলে, চল আমরা হযরত উমার ( রাঃ )-এর নিকট যাবো।' তথায় তারা গমন করেন। তথায় যা সংঘটিত হয় তা উপরে বর্ণিত হয়েছে। ( তাফসীর-ই-ইবনে হাফিয আবু ইসহাক )
সূরা নিসা আয়াত 65 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- তোমাদের কি হল যে, তোমরা একে অপরের সাহায্য করছ না?
- তাদের জামা হবে দাহ্য আলকাতরার এবং তাদের মুখমন্ডলকে আগুন আচ্ছন্ন করে ফেলবে।
- যাদের পাল্লা ভারী হবে, তারাই হবে সফলকাম,
- অথচ তারা পূর্বে আল্লাহর সাথে অঙ্গীকার করেছিল যে, তারা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে না। আল্লাহর অঙ্গীকার
- এবং হাসছ-ক্রন্দন করছ না?
- আর যখন আমি তোমাদের জন্য সাগরকে দ্বিখন্ডিত করেছি, অতঃপর তোমাদেরকে বাঁচিয়ে দিয়েছি এবং ডুবিয়ে দিয়েছি
- হে আমার পালনকর্তা! আপনি আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে, যারা মুমিন হয়ে আমার গৃহে প্রবেশ করে-তাদেরকে এবং
- হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তার এবাদত কর, যিনি তোমাদিগকে এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদিগকে সৃষ্টি করেছেন।
- আর কা’বার নিকট তাদের নামায বলতে শিস দেয়া আর তালি বাজানো ছাড়া অন্য কোন কিছুই
- হে আমার পালনকর্তা, আমাকে নামায কায়েমকারী করুন এবং আমার সন্তানদের মধ্যে থেকেও। হে আমাদের পালনকর্তা,
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা নিসা ডাউনলোড করুন:
সূরা Nisa mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Nisa শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers