কোরান সূরা হুদ আয়াত 8 তাফসীর

  1. Mokhtasar
  2. Ahsanul Bayan
  3. AbuBakr Zakaria
  4. Ibn Kathir
Surah Hud ayat 8 Bangla tafsir - তাফসীর ইবনে কাসীর - Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান - Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স - বাংলা ভাষায় নোবেল কোরআনের অর্থের অনুবাদ উর্দু ভাষা ও ইংরেজি ভাষা & তাফসীর ইবনে কাসীর : সূরা হুদ আয়াত 8 আরবি পাঠে(Hud).
  
   

﴿وَلَئِنْ أَخَّرْنَا عَنْهُمُ الْعَذَابَ إِلَىٰ أُمَّةٍ مَّعْدُودَةٍ لَّيَقُولُنَّ مَا يَحْبِسُهُ ۗ أَلَا يَوْمَ يَأْتِيهِمْ لَيْسَ مَصْرُوفًا عَنْهُمْ وَحَاقَ بِهِم مَّا كَانُوا بِهِ يَسْتَهْزِئُونَ﴾
[ هود: 8]

আর যদি আমি এক নির্ধারিত মেয়াদ পর্যন্ত তাদের আযাব স্থগিত রাখি, তাহলে তারা নিশ্চয়ই বলবে কোন জিনিসে আযাব ঠেকিয়ে রাখছে? শুনে রাখ, যেদিন তাদের উপর আযাব এসে পড়বে, সেদিন কিন্তু তা ফিরে যাওয়ার নয়; তারা যে ব্যাপারে উপহাস করত তাই তাদেরকে ঘিরে ফেলবে। [সূরা হুদ: 8]

Surah Hud in Bangla

জহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Hud ayat 8


আর যদি তাদের থেকে নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত আমরা শাস্তি স্থগিত রাখি তবে তারা নিশ্চয়ই বলবে -- ''কিসে একে বাধা দিচ্ছে?’’ এটি কি নয় যে যেদিন তাদের নিকটে এ আসবে সেদিন তাদের থেকে এটি প্রতিহত হবে না, আর যা নিয়ে তারা ঠাট্টা-বিদ্রূপ করছিল তাই তাদের ঘেরাও করবে?


Tafsir Mokhtasar Bangla


৮. আমি যদি দুনিয়ার জীবনে মুশরিকদের থেকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তাদের প্রাপ্য আযাব বিলম্বিত করি, তখন তারা অবশ্যই বিদ্রƒপ করে তাড়াহুড়া করে বলবে: কিসে আমাদের থেকে আযাব আটকে রাখল? সাবধান! নিশ্চয়ই তাদের সেই প্রাপ্য আযাব আল্লাহর নিকটে। আর যে দিন তাদের উপর আসবে সে দিন তাদের থেকে ফিরিয়ে দেয়ার কাউকে পাবে না, বরং তাদের উপর তা পতিত হবেই। আর যে আযাব নিয়ে তারা ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করে তাড়াহুড়া করছিল তা তাদেরকে ঘিরে ফেলবেই।

Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান


আর যদি আমি নির্দিষ্ট কিছু দিনের জন্য[১] তাদের শাস্তিকে বিলম্বিত করি, তাহলে তারা অবশ্যই বলবে, ‘সেই শাস্তিকে কিসে আটক রাখছে?’ স্মরণ রেখ, যেদিন ওটা তাদের উপর এসে পড়বে, তখন তা ফিরাবার কেউ থাকবে না, আর যা নিয়ে তারা উপহাস করছিল, তা এসে তাদেরকে ঘিরে নেবে। [২] [১] أُمَّةٌ ( উম্মাহ বা উম্মত ) শব্দটি কুরআন শরীফের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন অর্থে ব্যবহার হয়েছে। শব্দটি أم থেকে উৎপত্তি, যার অর্থ হল উদ্দেশ্য। এখানে এর অর্থ হল সেই মেয়াদ ও সময়, যা সময় আযাব অবতীর্ণ করার জন্য উদ্দিষ্ট। ( ফাতহুল কাদীর ) সূরা ইউসুফের ১২:৪৫নং ( وَادَّكَرَ بَعْدَ أُمَّةٍ ) আয়াতেও একই অর্থ পাওয়া যায়। এ ছাড়া আরো যে অর্থে শব্দটি ব্যবহার হয়েছে, তার মধ্যে একটি অর্থ হল, ইমাম বা নেতাঃ যেমন ( إِنَّ إِبْرَاهِيمَ كَانَ أُمَّةً ) অর্থাৎ, নিশ্চয় ইবরাহীম ছিল একজন ইমাম। ( সূরা নাহল ১৬:১২০ ) মিল্লাত, দ্বীন বা মতাদর্শঃ যেমন ( إِنَّا وَجَدْنَا آبَاءَنَا عَلَى أُمَّةٍ ) অর্থাৎ, আমরা তো আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে এক মতাদর্শের অনুসারী পেয়েছি। ( সূরা যুখরুফ ৪৩:২৩ ) জামাআত বা দলঃ যেমন ( وَلَمَّا وَرَدَ مَاءَ مَدْيَنَ وَجَدَ عَلَيْهِ أُمَّةً مِنَ النَّاسِ ) অর্থাৎ, যখন সে মাদয়্যানের কূপের নিকট পৌঁছল, দেখল একদল লোক তাদের পশুগুলিকে পানি পান করাচ্ছে। ( সূরা ক্বাস্বাস ২৮:২৩ ) ( وَمِن قَوْمِ مُوسَى أُمَّةٌ ) অর্থাৎ, মূসার সম্প্রদায়ের মধ্যে এমন একদল রয়েছে যারা ( অন্যকে ) ন্যায় পথ দেখায় ও ন্যায় বিচার করে। ( সূরা আ'রাফ ৭:১৫৯ ) ইত্যাদি। আরো একটি অর্থ হল সেই বিশেষ সম্প্রদায় বা জাতি যাদের নিকট কোন রসূল প্রেরিত হয়েছিলেনঃ ( وَلِكُلِّ أُمَّةٍ رَسُولٌ ) অর্থাৎ, প্রত্যেক জাতির জন্য এক একজন রসূল ছিল। ( সূরা ইউনুস ১০:৪৭ ) একে উম্মতে দাওয়াতও বলা হয়। অনুরূপ নবীদের প্রতি ঈমান আনয়নকারী জাতিকে উম্মত বা উম্মতে ইত্তিবা' বা উম্মতে ইজাবাহ বলা হয়। ( ইবনে কাসীর ) [২] এখানে তাড়াতাড়ি চাওয়াকে ঠাট্টা-উপহাস করা বলা হয়েছে। কারণ তাদের সেই তাড়াতাড়ি ঠাট্টা-উপহাস স্বরূপই হত। সুতরাং উদ্দেশ্য তাদেরকে এই কথা বুঝানো যে, আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে আযাবে দেরী হওয়াতে মানুষের উদাসীন হওয়া উচিত নয়। যেহেতু তাঁর আযাব যে কোন সময় আসতে পারে।

Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স


নির্দিষ্ট কালের জন্য [] আমরা যদি তাদের থেকে শাস্তি স্থগিত রাখি তবে তারা অবশ্যই বলবে, ‘কিসে সেটা নিবারণ করেছ?’ সাবধান ! যেদিন তাদের কাছে এটা আসবে সেদিন তাদের কাছে থেকে সেটাকে নিবৃত্ত করা হবে না এবং যা নিয়ে তারা ঠাট্টা- বিদ্রূপ করে তা তাদেরকে পরিবেষ্টন করবে। [] এখানে আল্লাহ তা'আলা ( امة ) শব্দটি ব্যবহার করেছেন। এ শব্দটি স্থানভেদে বিভিন্ন অর্থ প্রদান করে থাকে [ দ্র: কুরতুবী ] ক) সময় বা সুনির্দিষ্ট কাল, যেমন আলোচ্য আয়াত ও সূরা ইউসুফের ৪৫ নং আয়াত। ইবন আব্বাস থেকে এখানে এ অর্থই বর্ণিত হয়েছে। [ তাবারী ] খ) অনুসরণযোগ্য ইমাম, যেমন সূরা আন-নাহলের ১২০ নং আয়াতে ইবরাহীম আলাইহিসসালামের ব্যাপারে বলা হয়েছে। গ) ধর্ম ও রীতিনীতি অর্থে, যেমন সূরা আয-যুখরুফের ২৩ নং আয়াত। ঘ) দল বা বড় শ্রেণী বা জামা'আত তথা অনেক লোককে বুঝানোর অর্থে, যেমন সূরা আল-কাসাসের ২৩ নং আয়াত। ঙ) জাতি অর্থে, যাতে মুমিন কাফির সবাই অন্তর্ভুক্ত। যেমন সূরা আন-নাহলঃ ৩৬, ইউনুসঃ ৪৭। চ) শুধু ঈমানদার জাতি বুঝানোর জন্য। যেমন সুরা আলে-ইমরানঃ ১১০ ৷ অনুরূপভাবে হাদীসে এসেছে, হাশরের মাঠে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলবেনঃ “ উম্মতি, উম্মতি” আমার উম্মত, আমার উম্মত । এখানে শুধু মুসলিম জাতিকে বুঝানো হয়েছে। ছ) এ ছাড়া এ শব্দ দ্বারা কোন গোষ্ঠী বা অংশ বুঝানোর অর্থেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যেমন, সূরা আল-আরাফঃ ১৫৯, সূরা আলে ইমরানঃ ১১৩]

Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর


৭-৮ নং আয়াতের তাফসীর আল্লাহ তাআ’লা খবর দিচ্ছেন যে, প্রত্যেক জিনিষেরই উপর তাঁর ক্ষমতা রয়েছে, আসমানসমূহ ও যমীনকে তিনি ছ'দিনে সৃষ্টি করেছেন এবং এর পূর্বে তাঁর আর্‌শ পানির উপর ছিল। যেমন হযরত ইমরান ইবনু হুসাইন ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ হে বানু তামীম ( গোত্র )! তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ কর ।” তারা বললো: “ আপনি আমাদের সুসংবাদ তো প্রদান করলেন, সুতরাং আমাদেরকে তা দিয়ে দিন” তিনি ( পুনরায় ) বললেনঃ “হে ইয়ামনবাসী! তোমরা শুভ সংবাদ গ্রহণ কর ।” তারা বললো: “ আমরা গ্রহণ করলাম । সুতরাং সৃষ্টির সূচনা কি ভাবে হয়েছে তা আমাদেরকে শুনিয়ে দিন!” তিনি বললেনঃ “ সর্ব প্রথম আল্লাহই ছিলেন এবং তার আর্‌শ ছিল পানির উপর । তিনি লাওহে মাহফূযে সব জিনিষের বর্ণনা লিপিবদ্ধ করেন।” হাদীসের বর্ণনাকারী ইমরান ( রাঃ ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) এ পর্যন্ত বলেছেন এমন সময় আমার কাছে এক আগন্তুক এসে বলেঃ “হে ইমরান ( রাঃ )! আপনার উষ্ট্রিটি দড়ি ছিঁড়ে পালিয়ে গেছে । আমি তখন ওর খোঁজে বেরিয়ে পড়ি। সুতরাং আমার চলে যাওয়ার পর রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) কি বলেছিলেন তা আমার জানা নেই।” ( এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ ) বর্ণনা করেছেন) এ হাদীসটি সহীহ বুখারী ও সহীদ মুসলিমেও ছিল না। আর একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, তাঁর সাথে কিছুই ছিল না এবং তার আর্‌শটি পানির উপর ছিল।হযরত আমর ইবনুল আস ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ আল্লাহ তাআ’লা আসমান ও যমীন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বে সমস্ত সৃষ্ট জীবের ভাগ্য লিখে রাখেন এবং তার আর্‌শটি পানির উপর ছিল ।( এ হাদীসটি সহীহ্ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে ) এ হাদীসের তাফসীরে হযরত আবু হুরাইরা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ ( হে বান্দা )! তুমি ( আমার পথে ) খরচ কর, আমি তোমাকে তার প্রতিদান প্রদান করবো ।রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেনঃ আল্লাহর হাত পরিপূর্ণ রয়েছে । রাত দিনের খরচ তার কিছুই কমাতে পারে না। তোমরা কি দেখ না যে, আসমান যমীনের সৃষ্টি থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত কি পরিমাণ খরচ করে আসছেন? অথচ তাঁর দক্ষিণ হস্তে যা ছিল তার এতটুকুও কমে নাই। তার আর্‌শটি ছিল পানির উপর তাঁর হাতে মীযান ( দাড়িপাল্লা ) রয়েছে যা তিনি কখনো উঁচু করছেন এবং কখনো নীচু করছেন।” ( এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ ) তাঁর ‘সহীহ’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছে) আবু রাযীন লাকীত ইবনু আ’মির ইবনু মুনফিক আল আকলী ( রঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- “ আমি জিজ্ঞেস করলাম- হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! মাখলুক সৃষ্টি করার পূর্বে আমাদের প্রতিপালক কোথায় ছিলেন?' উত্তরে তিনি বলেনঃ“তিনি আমা’তে ছিলেন যার নীচেও বাতাস এবং উপরেও বাতাস এরপর তিনি আর্‌শ সৃষ্টি করেন।” ( এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ ) স্বীয় মুসনাদ' গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন)এ রিওয়াইয়াতটি জামে’ তিরমিযীর কিতাবুত তাফসীরেও আছে এবং সুনানে ইবনু মাজাহ্‌তেও রয়েছে। ইমাম তিরমিযী ( রঃ ) এ হাদীসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন। মুজাহিদের ( রঃ ) উক্তি এই যে, কোন কিছু সৃষ্টি করার পূর্বে আল্লাহ তাআ’লার আর্‌শটি পানির উপর ছিল। অহাব ( রঃ ), যমরা’ ( রঃ ) কাতাদা’ ( রঃ ), ইবনু জারীর ( রঃ ) প্রভৃতি গুরুজনও এ কথাই বলেন।( আরবি ) আল্লাহ পাকের এ উক্তি সম্পর্কে হযরত কাতাদা’ ( রঃ ) বলেনঃ ‘আসমান ও যমীন সৃষ্টির পূর্বে মাখলুকের সূচনা কিরূপ ছিল, আল্লাহ তাআ’লা তোমাদেরকে তা জানিয়ে দিচ্ছেন।রাবী’ ইবনু আনাস ( রঃ ) বলেন যে, আল্লাহ তাআ’লার আর্‌শ পানির উপর ছিল। অতঃপর যখন তিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করলেন তখন ঐ পানিকে দু'ভাগে বিভক্ত করলেন। এক ভাগকে তিনি আর্‌শের নীচে রাখলেন এবং ওটাই হচ্ছে ‘বাহরে মাসজুর’ হযরত ইবনু আব্বাস ( রাঃ )। বলেন যে, উচ্চতার কারণেই আর্‌শকে আর্‌শ বলা হয়। সা’দ তাঈ ( রঃ ) বলেন যে, আর্‌শ হচ্ছে লাল ইয়াকূতেরই তৈরি। মুহাম্মদ ইবনু ইহসাক ( রঃ ) বলেন যে, আল্লাহ তাআ’লা ঐরূপই ছিলেন যেইরূপ তিনি স্বীয় পবিত্র ও মহান নফসের বর্ণনা দিয়েছেন। অর্থাৎ পানি ছাড়া আর কিছুই ছিল না এবং তাঁর আর্‌শ পানির উপর ছিল। আর্‌শের উপর ছিলেন মহত্ত্ব, দয়া, মর্যাদা, সাম্রাজ্য, রাজত্ব, ক্ষমতা, জ্ঞান, সহিষ্ণুতা, করুণা ও নিয়ামতের অধিপতি আল্লাহ। যিনি যা ইচ্ছা তা-ই করে থাকেন।হযরত সাঈদ ইবনু জুবাইর ( রঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, ( আরবি ) আল্লাহ পাকের এই উক্তির ব্যাপারে হযরত ইবনু আব্বাসকে ( রাঃ ) জিজ্ঞেস করা হয়ঃ “ পানি কিসের উপর ছিল?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “বাতাসের পিঠের উপর ।আল্লাহ পাকের উক্তি ( আরবি ) অর্থাৎ “ যেন তোমাদেরকে পরীক্ষা করে নেন যে, তোমাদের মধ্যে উত্তম আমলকারী কে? আসমান ও যমীনের সৃষ্টি তোমাদেরই উপকারের জন্যে । তোমাদেরকে তিনি এ কারণেই সৃষ্টি করেছেন যে, তোমরা শুধু তাঁরই ইবাদত করবে এবং তাঁর সাথে অন্য কাউকেও শরীক করবে না। তিনি তোমাদেরকে অনর্থক সৃষ্টি করেন নাই। যেমন তিনি বলেনঃ “ আমি আসমান, যমীন ও এতোদুভয়ের মধ্যস্থিত বস্তুকে অনর্থক সৃষ্টি করি নাই, এটা হচ্ছে কাফিরদের ধারণা, আর কাফিরদেরকে জাহান্নামের দুর্ভোগ পোহাতেই হবে ।আল্লাহ তাআ’লা আর এক জায়গায় বলেনঃ ( আরবি )অর্থাৎ “ তবে কি তোমরা এই ধারণা করেছিলে যে, আমি তোমাদেরকে অনর্থক সৃষ্টি করেছি । আর এটাও ( ধারণা করেছিলে ) যে, তোমাদেরকে আমার কাছে আসতে হবে না? অতএব আল্লাহ অতি উচ্চ মর্যাদাবান, যিনি প্রকৃত বাদশাহ তিনি ছাড়া কেউই ইবাদতের যোগ্য নেই, তিনি সম্মানিত আর্‌শের মা’লিক।” ( ২৩: ১১৫ ) আর এক জায়গায় আল্লাহ পাক বলেনঃ ( আরবি ) অর্থাৎ “ আমি দানব ও মানবকে আমার ইবাদতের জন্যেই সৃষ্টি করেছি ।( ৫১: ৫৬ ) আল্লাহ পাকের উক্তিঃ ( আরবি ) অর্থাৎ ‘যেন তোমাদেরকে তিনি পরীক্ষা করেন যে, তোমাদের মধ্যে উত্তম আমলকারী কে?’ মহান আল্লাহ উত্তম আমলকারী বলেছেন, অধিক আমলকারী বলেন নাই। কেননা উত্তম আমল হচ্ছে ওটাই যেটার মধ্যে থাকে আন্তরিয্‌কতা এবং যেটা প্রতিষ্ঠিত হয় রাসূলুল্লাহ( সঃ ) শরীয়তের উপর। এ দুটোর মধ্যে একটা না থাকলেই সেই আমল হবে বৃথা ও মূল্যহীন।এরপর আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ ( আরবি ) অর্থাৎ হে মুহাম্মদ ( সঃ )! তুমি যদি এই মুশরিকদেরকে খবর দাও যে, আল্লাহ তাদেরকে তাদের মৃত্যুর পর পুনরায় উথিত করবেন তবে তারা স্পষ্টভাবে বলবে- আমরা এটা মানি না। অথচ তারা জানে যে, যমীন ও আসমানের সৃষ্টিকর্তা হচ্ছেন আল্লাহ। যেমন আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ ( আরবি )অর্থাৎ “ যদি তুমি তাদেরকে জিজ্ঞেস কর যে, তাদেরকে কে সৃষ্টি করেছেন? তবে অবশ্যই তারা উত্তরে বলবে আল্লাহ ( ৪৩: ৮৭ ) আর যদি তুমি তাদেরকে জিজ্ঞেস কর আসমানসমূহ ও যমীনকে কে সৃষ্টি করেছেন এবং কে সূর্য ও চন্দ্রকে ( মানুষের সেবার ) কাজে নিয়োজিত রেখেছেন? তবে উত্তরে অবশ্যই তারা বলবে- আল্লাহ।” ( ২৯: ৬১ ) এতদ্‌সত্ত্বেও তারা পুনরুত্থানকে অস্বীকার করছে! এটা তো স্পষ্ট কথা যে, প্রথমবার সৃষ্টি করা যাঁর পক্ষে কঠিন হয় নাই, দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করাও তাঁর পক্ষে কঠিন হবে না। বরং প্রথমবারের তুলনায় দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করা তো আরো সহজ। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ ( আরবি )অর্থাৎ “ তিনি এমন যে, তিনি প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন এবং তিনিই পুনর্বার সৃষ্টি করবেন, আর এটা তাঁর কাছে অতি সহজ ।( ৩০: ২৭ ) আল্লাহ তা'আলা আরো বলেনঃ ( আরবি )অর্থাৎ “ তোমাদেরকে সৃষ্টি করা এবং পুনরুত্থিত করা একটি প্রাণ সৃষ্টি করার মতই ( সহজ )( ৩১: ২৮ ) তাদের উক্তিঃ ( আরবি ) অর্থাৎ মুশরিকরা অস্বীকার ও বিরোধীতা বশতঃ বলেঃ হে মুহাম্মদ ( সঃ ) আপনি যে কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার কথা বলছেন, আমরা আপনার এ কথা বিশ্বাস করি না। এটা স্পষ্ট যাদু ছাড়া আর কিছুই নয়।আল্লাহ তাআ’লার উক্তিঃ ( আরবি )অর্থাৎ যদি আমি কিছু দিনের জন্যে তাদের থেকে শাস্তিকে মূলতবী করে রাখি তবে তারা ঐ শাস্তি আসবে না মনে করে বলে- এই শাস্তিকে কিসে আটকিয়ে রাখছে? তাদের অন্তরে কুফরী ও শির্‌ক এমনভাবে বদ্ধমূল হয়েছে যে, তাদের অন্তর থেকে কোন ক্রমেই তা দূর হচ্ছে না।কুরআন ও হাদীসে ( আরবি ) শব্দটি কয়েকটি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। কোন কোন সময় এই শব্দ দ্বারা সময় বা সময়ের দৈর্ঘ্য বুঝানো হয়েছে। যেমন ( আরবি ) এই স্থলে এবং সূরায়ে ইউসুফের ( আরবি ) এই আয়াতে। অর্থাৎ “ বন্দীদ্বয়ের মধ্যে যেই ব্যক্তি মুক্তি পেয়েছিল এবং বহুদিন পর তার স্মরণ হলো, সে বললো.... ।( ১২: ৪৫ ) অনুসরণীয় ইমামের অর্থেও ( আরবি ) শব্দ ব্যবহৃত হয়। যেমন হযরত ইবরাহীমের ( আঃ ) ব্যাপারে ( আরবি ) এসেছে। ‘মিল্লাত’ ও ‘দ্বীন’ অর্থেও এ শব্দটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যেমন আল্লাহ তাআ’লা মুশরিকদের ব্যাপারে খবর দিতে গিয়ে বলেনঃ ( আরবি )অর্থাৎ “ নিশ্চয় আমরা আমাদের পূর্ব পুরুষদেরকে একটা দ্বীনের উপর পেয়েছি এবং আমরা তাদেরই পদাঙ্ক অনুসরণকারী ।( ৪৩: ২৩ ) এ শব্দটি জামাআত বা দল অর্থেও ব্যবহৃত হয়। যেমন আল্লাহ পাকের উক্তিঃ ( আরবি )অর্থাৎ “ যখন সে ( মূসা আঃ ) মাদইয়ানের পানির ( কূপের ) নিকট পৌঁছলো, তখন তথায় একদল লোককে দেখতে পেলো, যারা নিজেদের পশুগুলিকে পানি পান করাচ্ছিল । ( ২৮: ২৩ ) আরো মহান আল্লাহর উক্তিঃ ( আরবি )অর্থাৎ “ আমি প্রত্যেক দলের মধ্যে ( এ কথা বলার জন্যে ) রাসূল পাঠিয়েছি যে, তোমরা আল্লাহরই ইবাদত করবে এবং তাগূত বা শয়তান থেকে দূরে থাকবে ।( ১৬: ৩৬ ) আল্লাহ তাআ’লা আরো বলেনঃ ( আরবি )অর্থাৎ “ প্রত্যেক দলের জন্যে একজন রাসূল রয়েছে, সুতরাং যখন তাদের রাসূল এসে পড়ে তখন সে তাদের মধ্যে ন্যায়ের সাথে ফায়সালা করে এবং তারা অত্যাচারিত হয় না ।( ১০: ৪৭ ) যেমন সহীহ মুসলিমে রয়েছে ( রাসূলুল্লাহ (সঃ ) বলেছেন) “ যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে তাঁর শপথ! এই উম্মতের যে ইয়াহুদী ও খৃষ্টান আমার নাম শুনলো অথচ ঈমান আনলো না সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে ।” তবে অনুগত দল ওটাই যারা রাসূলদের সত্যতা স্বীকার করে। যেমন আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ ( আরবি )অর্থাৎ “ তোমরা উত্তম সম্প্রদায়, যে সম্প্রদায়কে প্রকাশ করা হয়েছে মানবমন্ডলীর জন্যে ।( ৩: ১১০ ) সহীহ হাদীসে রয়েছে ( যে, রাসুলুল্লাহ (সঃ ) বলেছেন) “ আমি বলবো- আমার উম্মত! আমার উম্মত!” ( আরবি ) শব্দটি শ্ৰেণী বা গোষ্ঠী অর্থেও ব্যবহৃত হয় । যেমন আল্লাহ পাকের উক্তিঃ ( আরবি )অর্থাৎ “ মূসার ( আঃ ) কওমের মধ্যে এমন শ্রেণীর লোকও রয়েছে যারা সত্যের পথে চলে এবং ওর মাধ্যমেই ন্যায় প্রতিষ্ঠা করে ।( ৭: ১৫৯ ) আল্লাহ তাআ’লা আর এক জায়গায় বলেনঃ ( আরবি )… অর্থাৎ “ আহলে কিতাবদের মধ্যে এক শ্রেণী তারাও যারা ( সত্য ধর্মে ) সুপ্রতিষ্ঠিত ।

সূরা হুদ আয়াত 8 সূরা

ولئن أخرنا عنهم العذاب إلى أمة معدودة ليقولن ما يحبسه ألا يوم يأتيهم ليس مصروفا عنهم وحاق بهم ما كانوا به يستهزئون

سورة: هود - آية: ( 8 )  - جزء: ( 12 )  -  صفحة: ( 222 )


English Türkçe Indonesia
Русский Français فارسی
تفسير Urdu اعراب

বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত

  1. যেদিন তিনি তোমাদেরকে আহবান করবেন, অতঃপর তোমরা তাঁর প্রশংসা করতে করতে চলে আসবে। এবং তোমরা
  2. মূসা বললেনঃ দূর হ, তোর জন্য সারা জীবন এ শাস্তিই রইল যে, তুই বলবি; আমাকে
  3. তার মিশ্রণ হবে তসনীমের পানি।
  4. যা কিছু আকাশসমূহে রয়েছে এবং যা কিছু যমীনে আছে, সব আল্লাহরই। যদি তোমরা মনের কথা
  5. যা চামড়া তুলে দিবে।
  6. অতঃপর পাকড়াও করল তাদেরকে ভূমিকম্প। ফলে সকাল বেলায় নিজ নিজ গৃহে উপুড় হয়ে পড়ে রইল।
  7. যারা পালনকর্তার আদেশ পালন করে, তাদের জন্য উত্তম প্রতিদান রয়েছে এবং যারা আদেশ পালন করে
  8. নিশ্চয় এবাদতের জন্যে রাত্রিতে উঠা প্রবৃত্তি দলনে সহায়ক এবং স্পষ্ট উচ্চারণের অনুকূল।
  9. তিনি খুঁটি ব্যতীত আকাশমন্ডলী সৃষ্টি করেছেন; তোমরা তা দেখছ। তিনি পৃথিবীতে স্থাপন করেছেন পর্বতমালা, যাতে
  10. নিশ্চয় এটা এক সুস্পষ্ট পরীক্ষা।

বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :

সুরত আল বাক্বারাহ্ আলে ইমরান সুরত আন-নিসা
সুরত আল-মায়েদাহ্ সুরত ইউসুফ সুরত ইব্রাহীম
সুরত আল-হিজর সুরত আল-কাহফ সুরত মারইয়াম
সুরত আল-হাজ্জ সুরত আল-ক্বাসাস আল-‘আনকাবূত
সুরত আস-সাজদা সুরত ইয়াসীন সুরত আদ-দুখান
সুরত আল-ফাতহ সুরত আল-হুজুরাত সুরত ক্বাফ
সুরত আন-নাজম সুরত আর-রাহমান সুরত আল-ওয়াক্বি‘আহ
সুরত আল-হাশর সুরত আল-মুলক সুরত আল-হাক্কাহ্
সুরত আল-ইনশিক্বাক সুরত আল-আ‘লা সুরত আল-গাশিয়াহ্

সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা হুদ ডাউনলোড করুন:

সূরা Hud mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Hud শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
সুরত হুদ  ভয়েস আহমেদ আল-আজমি
আহমেদ আল-আজমি
সুরত হুদ  ভয়েস ইব্রাহীম আল-আখদার
ইব্রাহীম আল-আখদার
সুরত হুদ  ভয়েস বান্দার বেলাইলা
বান্দার বেলাইলা
সুরত হুদ  ভয়েস খালিদ গালিলি
খালিদ গালিলি
সুরত হুদ  ভয়েস হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
সুরত হুদ  ভয়েস খলিফা আল টুনাইজি
খলিফা আল টুনাইজি
সুরত হুদ  ভয়েস সাদ আল-গামদি
সাদ আল-গামদি
সুরত হুদ  ভয়েস সৌদ আল-শুরাইম
সৌদ আল-শুরাইম
সুরত হুদ  ভয়েস সালাহ আবু খাতর
সালাহ বুখাতীর
সুরত হুদ  ভয়েস আবদুল বাসিত আব্দুল সামাদ
আবদ এল বাসেট
সুরত হুদ  ভয়েস আবদুল রশিদ সুফি
আবদুল রশিদ সুফি
সুরত হুদ  ভয়েস আব্দুল্লাহ্ বাস্‌ফার
আব্দুল্লাহ্ বাস্‌ফার
সুরত হুদ  ভয়েস আবদুল্লাহ আওওয়াদ আল-জুহানী
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
সুরত হুদ  ভয়েস আলী আল-হুদায়েফি
আলী আল-হুদায়েফি
সুরত হুদ  ভয়েস আলী জাবের
আলী জাবের
সুরত হুদ  ভয়েস ফারেস আব্বাদ
ফারেস আব্বাদ
সুরত হুদ  ভয়েস মাহের আলমাইকুলই
মাহের আলমাইকুলই
সুরত হুদ  ভয়েস মোহাম্মদ আইয়ুব
মোহাম্মদ আইয়ুব
সুরত হুদ  ভয়েস মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
সুরত হুদ  ভয়েস মুহাম্মাদ জিব্রীল
মুহাম্মাদ জিব্রীল
সুরত হুদ  ভয়েস মুহাম্মদ সিদ্দিক আল মিনশাবি
আল-মিনশাবি
সুরত হুদ  ভয়েস আল হোসারি
আল হোসারি
সুরত হুদ  ভয়েস আল-আফসী
মিশারী আল-আফসী
সুরত হুদ  ভয়েস নাসের আল কাতামি
নাসের আল কাতামি
সুরত হুদ  ভয়েস ইয়াসের আল-দোসারি
ইয়াসের আল-দোসারি


Sunday, December 22, 2024

Please remember us in your sincere prayers