কোরান সূরা নাহল আয়াত 113 তাফসীর
﴿وَلَقَدْ جَاءَهُمْ رَسُولٌ مِّنْهُمْ فَكَذَّبُوهُ فَأَخَذَهُمُ الْعَذَابُ وَهُمْ ظَالِمُونَ﴾
[ النحل: 113]
তাদের কাছে তাদের মধ্য থেকেই একজন রাসূল আগমন করেছিলেন। অনন্তর ওরা তাঁর প্রতি মিথ্যারোপ করল। তখন আযাব এসে তাদরকে পাকড়াও করল এবং নিশ্চিতই ওরা ছিল পাপাচারী। [সূরা নাহল: 113]
Surah An-Nahl in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Nahl ayat 113
আর আলবৎ তাদের কাছে তাদের মধ্যে থেকে একজন রসূল এসেছিলেন, কিন্তু তারা তাঁর প্রতি মিথ্যারোপ করল, সুতরাং শাস্তি তাদের পাকড়াও করল যখন তারা ছিল অন্যায়কারী।
Tafsir Mokhtasar Bangla
১১৩. নিশ্চয়ই মক্কার অধিবাসীদের নিকট আমানত ও সত্যবাদিতায় সুপ্রসিদ্ধ এমন একজন রাসূল আসলেন যিনি হলেন মুহাম্মাদ ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )। অতঃপর তারা তাঁর প্রতিপালকের পক্ষ থেকে নাযিলকৃত কুর‘আনকে অস্বীকার করলো। ফলে তাদের উপর ক্ষুধা ও ভয়ের ন্যায় আল্লাহর শাস্তি নাযিল হলো। বস্তুতঃ তারা আল্লাহর সাথে শিরক ও তাঁর রাসূলকে অস্বীকার করে নিজেদেরকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত করে নিজদের উপরই যুলুম করলো।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
তাদের নিকট তো এসেছিল এক রসূল তাদের মধ্য হতে, কিন্তু তারা তাকে মিথ্যাজ্ঞান করেছিল; ফলে সীমালংঘন করা অবস্থায় শাস্তি[১] তাদেরকে গ্রাস করল। [১] এই শাস্তি বা আযাব বলতে ক্ষুধা ও নিরাপত্তাহীনতার আযাব যা পূর্বের আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। অথবা এর অর্থ মুসলিমদের হাতে বদরপ্রান্তে কাফেরদের হত্যা হওয়া।
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
আর অবশ্যই তাদের কাছে এসেছিলেন এক রাসূল তাদেরই মধ্য থেকে [ ১ ], কিন্তু তারা তার প্রতি মিথ্যারোপ করেছিল। ফলে শাস্তি তাদেরকে গ্রাস করল এমতাবস্থায় যে, তারা ছিল যুলুমকারী। [ ১ ] এখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকেই উদ্দেশ্য করা হয়েছে। তাদের রাসূল ছিল তাদের মধ্য থেকে অত্যন্ত পরিচিত জন। এমন নয় যে, তারা তাকে চিনত না বা তার সম্পর্কে কিছু জানে না। [ ফাতহুল কাদীর ] এ বিষয়টি পবিত্র কুরআনের আরো বিভিন্ন আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে। [ দেখুনঃ সূরা আলে ইমরানঃ ১৬৪, সূরা আত-তালাকঃ ১০-১১, সূরা আল-মু'মিনূনঃ ৬৯ ]
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
১১২-১১৩ নং আয়াতের তাফসীর এই দৃষ্টান্ত দ্বারা মক্কাবাসীকে বুঝানো হয়েছে। তারা খুবই নিরাপদ ও নিশ্চিন্তভাবে বসবাস করছিল। আশে পাশে যুদ্ধ ও বিগ্রহ চলতো। কিন্তু মক্কাবাসীকে কেউই চোখ দেখাতে সাহস করতো না। যে কেউ এখানে আসতো তাকে নিরাপদ মনে করা হতো। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ “ তারা বলেঃ আমরা যদি হিদায়াতের অনুসরণ করি, তবে আমাদেরকে আমাদের যমীন হতে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে;” ( আল্লাহ পাক বলেনঃ ) “আমি কি তাদেরকে শান্তি ও নিরাপত্তার হারাম ( শরীফ ) দান করি নাই? যেখানে চারদিক থেকে আমার দেয়া জীবনোপকরণ বিভিন্ন প্রকারের ফলের আকারে এসে থাকে?”এখানেও মহান আল্লাহ বলেনঃ “সেখানে আসতো সর্বদিক হতে প্রচুর জীবনোপকরণ; কিন্তু এর পরেও তারা আল্লাহর অনুগ্রহ অস্বীকার করলো । সবচেয়ে বড় নিয়ামত ছিল তাদের কাছে মুহাম্মদকে ( সঃ ) নবীরূপে প্রেরণ।” যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “ তুমি কি তাদেরকে দেখ নাই? যারা আল্লাহর নিয়ামতকে কুফরী দ্বারা পরিবর্তন করে দিয়েছে, আর নিজেদের কওমকে ধ্বংসের ঘরে পৌঁছিয়ে দিয়েছে, যা হচ্ছে জাহান্নাম, যেখানে তারা প্রবেশ করবে এবং ওটা কতই না নিকৃষ্ট স্থান ।”তাদের দুষ্টামি ও হঠকারিতার শাস্তি স্বরূপ তাদের দু’টি নিয়ামত দু'টি যহুমত বা দুঃখ বেদনায় পরিবর্তিত হয়। নিরাপত্তা ভয়ে এবং প্রশান্তি ক্ষুধা ও চিন্তায় রূপান্তরিত হয়। তারা আল্লাহর রাসূলকে ( সঃ ) স্বীকার করে নাই এবং তার বিরুদ্ধাচরণে উঠে পড়ে লেগে যায়। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) সাত বছরের দীর্ঘ মেয়াদী দুর্ভিক্ষের জন্যে বদ দুআ করেন, যেমন হযরত ইউসুফের ( আঃ ) যুগে দেখা দিয়েছিল। এই দুর্ভিক্ষের সময় তারা উটের রক্ত মিশ্রিত লোম পর্যন্ত খেয়েছিল। নিরাপত্তার পর আসলো ভয় ও সন্ত্রাস। সব সময় তারা রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) ও তাঁর সেনাবাহিনীর ভয়ে ভীত থাকতো। তারা দিনের পর দিন তার উন্নতি এবং তার সেনাবাহিনীর শক্তি বৃদ্ধির খবর শুনতে ও বুঝতো। অবশেষে আল্লাহর রাসূল ( সঃ ) তাদের শহর মক্কার উপর আক্রমণ চালান এবং ওটা জয় করে ওর উপর নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করেন। এই ছিল তাদের দুষ্কার্যের ফল যে, তারা যুলুম ও বাড়াবাড়ির উপর লেগেই ছিল এবং আল্লাহর রাসূলকে ( সঃ ) মিথ্যা প্রতিপন্ন করতেই ছিল। অথচ তাঁকে আল্লাহ তাআলা তাদের মধ্যে স্বয়ং তাদের মধ্য থেকেই প্রেরণ করেছিলেন। এই অনুগ্রহের কথা তিনি নিম্নের আয়াতে বর্ণনা করেছেনঃ ( আরবি ) অর্থাৎ “ আল্লাহ মুমিনদের উপর এইভাবে অনুগ্রহ করেছেন যে, তিনি তাদের মধ্যে তাদের মধ্য হতেই রাসূল প্রেরণ করেছেন ।” ( ৩:১৬৪ ) অন্য আয়াতে রয়েছেঃ “ হে জ্ঞানীরা! সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয়কর । যারা ঈমান এনেছে, ( জেনে রেখো যে, ) আল্লাহ তোমাদের মধ্যে পুরুষ লোককে রাসূল করে পাঠিয়েছেন।” আল্লাহ তাআলার আরো উক্তিঃ “ যেমন আমি তোমাদের মধ্যে রাসূল পাঠিয়েছি তোমাদের মধ্য হতেই, যে তোমাদের কাছে আমার আয়াতসমূহ পাঠ করে থাকে, তোমাদেরকে পবিত্র করে এবং তোমাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দিয়ে থাকে.....এবং তোমরা কুফরী করবে না ।”যেমন কুফরীর কারণে নিরাপত্তার পরে ভয় আসলো এবং স্বচ্ছলতার পরে আসলো ক্ষুধার তাড়না, অনুরূপভাবে ঈমানের কারণে ভয়ের পরে আসলো শান্তি ও নিরাপত্তা এবং ক্ষুধার পরে আসলো হুকুমত ও নেতৃত্ব। সুতরাং আল্লাহ কতই না মহান!হযরত সুলাইম ইবনু নুমাইর ( রাঃ ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ “ আমরা উম্মুল মু'মিনীন হযরত হাফসার ( রাঃ ) সাথে হজ্ব শেষে ( মদীনার পথে ) ফিরছিলাম । ঐ সময় খলীফাতুল মু'মিনীন হযরত উসমান ( রাঃ ) ( বিদ্রোহীগণ কর্তৃক পরিবেষ্টিত ছিলেন। হযরত হাফসা (রাঃ ) অধিকাংশ পথিককে পথিমধ্যে হযরত উসমান ( রাঃ ) সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করছিলেন। অবশেষে দু’জন উষ্ট্রারোহীকে দেখে তিনি তাদের কাছে লোক পাঠিয়ে হযরত উসমান ( রাঃ ) সম্পর্কে জানতে চান। তারা খবর দেয় যে, তিনি শহীদ হয়েছেন। তৎক্ষণাৎ তিনি বলেনঃ “ আল্লাহর শপথ! ইনিই সেই শহীদ যার ব্যাপারে আল্লাহ তাআ'লা ( আরবি ) এই আয়াতটি অবতীর্ণ করেছেন ।” ( এটা ইমাম ইবনু জারীর (রঃ ) বর্ণনা করেছেন) আবদুল্লাহ ইবনু মুগীরার ( রঃ ) শায়েখেরও এটাই উক্তি।
সূরা নাহল আয়াত 113 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- আর যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর উপর, তাঁর রসূলের উপর এবং তাঁদের কারও প্রতি ঈমান আনতে
- যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে আগত নিদর্শন অনুসরণ করে, সে কি তার সমান, যার
- অতঃপর তাদের পেছনে পাঠিয়েছি আমি মূসা ও হারুনকে, ফেরাউন ও তার সর্দারের প্রতি স্বীয় নির্দেশাবলী
- আমরা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা অপবাদকারী হয়ে যাব যদি আমরা তোমাদের ধর্মে প্রত্যাবর্তন করি, অথচ তিনি
- আমি ইতিপূর্বে আদমকে নির্দেশ দিয়েছিলাম। অতঃপর সে ভুলে গিয়েছিল এবং আমি তার মধ্যে দৃঢ়তা পাইনি।
- অতএব আপনি প্রকাশ্যে শুনিয়ে দিন যা আপনাকে আদেশ করা হয় এবং মুশরিকদের পরওয়া করবেন না।
- অতঃপর আমি ঘোষণা সহকারে প্রচার করেছি এবং গোপনে চুপিসারে বলেছি।
- ফেরআউন ও তার অমাত্যদের কাছে। অতঃপর তারা অহংকার করল এবং তারা উদ্ধত সম্প্রদায় ছিল।
- ওরা তাকে কম মূল্যে বিক্রি করে দিল গনাগুণতি কয়েক দেরহাম এবং তাঁর ব্যাপারে নিরাসক্ত ছিল।
- অনন্তর আমি তাকে ও তার সঙ্গীদেরকে স্বীয় অনুগ্রহে রক্ষা করলাম এবং যারা আমার আয়াতসমূহে মিথ্যারোপ
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা নাহল ডাউনলোড করুন:
সূরা Nahl mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Nahl শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers